দেশের ফুটবলে সুদিন ফিরছে কি?
২৬ আগস্ট ২০১৮ ২১:৫৮
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: এশিয়ান গেমসের দেশের ইতিহাস রচনা করা জামাল-সুফিলরা এবার নজর দিচ্ছেন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। ৪০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নক আউট পর্বে পা রেখে ফুটবলাররা জানান দিচ্ছে সুদিন ফিরছে দেশের ফুটবলে।
সেটা অবিরত রাখতে পারবে কি দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ অভিভাবক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)?
সেই প্রশ্নে পরে যাওয়া যাবে। এশিয়ান গেমসের এক জয় এক ড্রয়ে কতটা উজ্জীবিত জেমি ডে’র শিষ্যরা সেটা জেনে নেয়া যাক। কেননা সামনের মাস থেকে শুরু হওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য নিজেদের প্রস্তুতির লক্ষ্যে ফুটবলারদের পুরো বহর ছিল ইন্দোনেশিয়ায়।
জাতীয় দলের কোচ জেমি ডেও এশিয়াডে যাওয়ার আগে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য এশিয়ান গেমসকে সিড়ি হিসেবে দেখেছেন।
৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ঢাকা সাফেই এশিয়ান গেমসের এ সাফল্য ধরে রাখতে চান। ১৫ বছরের শিরোপা খরা ঘুচতে চান।
এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের জয় চারটি। ১৯৮২-এর দিল্লি এশিয়ান গেমসে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়। ১৯৮৬ সালের সিউল এশিয়াডে জয় নেপালের বিপক্ষে। তা ১-০-এ। এর ২৮ বছর পর ২০১৪ এর ইনচন এশিয়ান গেমসে লাল সবুজেরা ফের জয়ের দেখা। আফগানিস্তানকে ১-০তে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ। যদিও গ্রুপের শেষ ম্যাচে হংকংয়ের কাছে ১-২ গোলে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়। এবার ফের জয় এলো কাতরের বিপক্ষে । যা প্রথম বারের মতো এশিয়াডের নক আউট পর্বে নিয়ে যায় জামাল ভুঁইয়ার দলকে।
জাকার্তা এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল উজবেকিস্তান, কাতার এবং থাইল্যান্ড। এশিয়ার ফুটবলের অন্যতম শক্তি তারা। গত বারের মতো ধরা ছোঁয়ার মতো প্রতিপক্ষ হংকং বা আফগানিস্তান ছিল না গ্রুপে। তাই যাওয়ার আগে জামাল ভূঁইয়াদের নিয়ে তেমন কোনো স্বপ্ন দেখাননি নতুন কোচ জেমি ডে। শুধু নিয়ম রক্ষার জন্যই বলা. আমরা জয়ের জন্যই মাঠে নামবো। আমাদের সব প্রস্তুতি এ সাফ ফুটবলের জন্য।’
যাওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে ইংলিশ কোচের এই সাদা মাটা বক্তব্যে এশিয়াডে অনুপ্রানিত হওয়োর মতো কিছু ছিল না। কিন্তু জাকার্তার মাঠে সম্পূর্ণ ভিন্ন চেহারায় জামাল ভূঁইয়া সুফিল, সাদ উদ্দিনরা। প্রথম ম্যাচে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে সুবিধা করতে না পারলেও পরের দুই ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট আদায়। দ্বিতীয় ম্যাচে সুফিলের গোলে লিড নিয়েও গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানার ভুলে ১-১-এ ড্র করতে বাধ্য হওয়া থাইল্যান্ডের বিপক্ষে।
এরপর তৃতীয় ম্যাচ জিতে তো ইতিহাস। ইনজুরি টাইমের গোলে কাতারকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথম বারের মতো এশিয়ান গেমস ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ড বা নক আউট পর্বে যাওয়া। গোলদাতা অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। যদিও শেষ ১৬ এর এই ম্যাচে গতবারের ফাইনালিষ্ট উত্তর কোরিয়ার কাছে ১-৩ গোলে হার। ইনচন এশিয়াডের রৌপ্য জয়ী উত্তর কোরিয়া প্রথমে তিন গোল দিলেও শেষ সময় সাদ উদ্দিন ব্যবধান কমান।
এশিয়াডে বাংলাদেশ দল সহ সবাই খেলেছে অনূর্ধ্ব-২৩ দল নিয়ে। সাথে ছিল তিন সিনিয়র ফুটবলার। এশিয়ার সেরা সেরা দলগুলোর বিপক্ষে এবারের এশিয়াডে পাওয়া এই সাফল্য নিশ্চিত বাংলাদেশ দলকে অনুপ্রানিত করবে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ঢাকা সাফে ভালো করতে।
সাফ ফুটবলে অবশ্য সিনিয়র দলই খেলবে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত এই আসরে বাংলাদেশের বর্তমান অলিম্পিক দলের সাথে যোগ হবেন মামুনুল, সাখাওয়াত রনি, হেমন্ত, সোহেল রানা , গোলরক্ষক সোহেলরা। যা দলকে আরো পোক্ত করবে।
৪ সেপ্টেম্বর সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভুটান। এরপর তাদের ম্যাচ নেপাল ও পাকিস্তানের সাথে। বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০০৯ সালের ঢাকা সাফেই গ্রুপ পর্বের বাধা ডিঙ্গিয়ে সেমে ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল। এবার তাদেরকে আগে নিশ্চিত করতে হবে শেষ চার। এরপর ফাইনাল।
এশিয়ান গেমসের অভাবনীয় সাফল্যে দেশের মানুষের প্রত্যাশাও বেড়েছে হাজারগুণ। নিজের মাটিতে সেই চাপ সামলে কাঙ্খিত শিরোপা পুনোরুদ্ধার করতে পারবে বাংলাদেশ?
সারাবাংলা/জেএইচ