জেনে রাখুন এশিয়া কাপের কিছু তথ্য
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:২৬
।। মুশফিক পিয়াল, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ।।
১৪তম এশিয়া কাপ ক্রিকেট আসর বসতে যাচ্ছে আরব আমিরাতে। এর আগে ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে বাংলাদেশে হয় এশিয়া কাপের টানা তিনটি আসর। একাধিকবার সফলভাবে এশিয়া কাপের আয়োজন করে সাড়া ফেলেছিল বাংলাদেশ। এবার ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে আয়োজক হওয়ার সুযোগ পেয়েছে আমিরাত। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে দুবাইতে শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপের এবারের আসর। ২৮ সেপ্টেম্বর হবে ফাইনাল।
দুবাইয়ে উদ্বোধনী ম্যাচেই মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের গ্রুপে অন্য দলটি আফগানিস্তান। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান পড়েছে গ্রুপ ‘বি’ তে। অন্য গ্রুপে থাকছে ভারত, পাকিস্তান এবং আরব আমিরাতকে বাছাইপর্বে হারানো হংকং। দুই গ্রুপ থেকে শীর্ষ চার দল খেলবে সুপার ফোরে। সেখানে প্রতিটি দল একে অন্যের মুখোমুখি হবে। শীর্ষ দুই দল ২৮ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে খেলবে ফাইনালে। সবকটি খেলা হবে আবুধাবি ও দুবাইয়ে।
এবারের এশিয়া কাপে কিছুটা পরবর্তন এনেছে। প্রতিবারই ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলা হয়। তবে, গতবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সেই আসর হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টির পর এবারের এশিয়া কাপ হবে ওয়ানডেতে। এবারো ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রথম টুর্নামেন্ট: ১৯৮৪ সাল (ওয়ানডে) এবং ২০১৬ সাল (টি-টোয়েন্টি)
সবশেষ টুর্নামেন্ট: ২০১৪ সাল (ওয়ানডে) এবং ২০১৬ সাল (টি-টোয়েন্টি)
পরবর্তী টুর্নামেন্ট: ২০১৮ সাল (ওয়ানডে) এবং ২০২০ সাল (টি-টোয়েন্টি)
সর্বোচ্চ রান (ওয়ানডে): ১৯৯০-২০০৮ সাল, শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়াসুরিয়া ২৫ ম্যাচে করেছেন সর্বোচ্চ ১২২০ রান। ইনিংস সর্বোচ্চ ১৩০ রান। ব্যাটিং গড় ৫৩.০৪, স্ট্রাইক রেট ১০২.৫২। মাতারা হারিকেন খ্যাত এই লঙ্কান কিংবদন্তি এশিয়া কাপের আসরে সর্বোচ্চ ৬টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি করেছেন ৩টি হাফ-সেঞ্চুরি। ১৩৯টি চারের পাশাপাশি হাঁকিয়েছেন ২৩টি ছক্কা। ১০৭৫ রান নিয়ে দুইয়ে আরেক লঙ্কান গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারা। আর ২৩ ম্যাচ খেলে ৯৭১ রান নিয়ে তিনে রয়েছেন ভারতীয় মাস্টার-ব্লাস্টার শচীন টেন্ডুলকার।
সর্বোচ্চ রান (টি-টোয়েন্টি): এশিয়া কাপে টি-টোয়েন্টির সংযোজন হওয়ার পর মাত্র একটিই আসর হয়েছে। একমাত্র সেঞ্চুরিটি করেন হংকংয়ের বাবর হায়াত। ৩ ম্যাচে খেলে তিনি করেছেন সর্বোচ্চ ১৯৪ রান। ইনিংস সর্বোচ্চ ১২২ রান রয়েছে তার দখলে। এই তালিকায় দুইয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের সাব্বির রহমান। ৫ ম্যাচ খেলে সাব্বির করেছেন ১৭৬ রান।
সর্বোচ্চ উইকেট (ওয়ানডে): ১৯৯৫-২০১০ সাল, শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন ২৪ ম্যাচ খেলে এশিয়া কাপের ওয়ানডে ফরম্যাটে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৩০ উইকেট। লঙ্কান আরেক স্পিনার অজন্তা মেন্ডিস নিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ উইকেট (৮ ম্যাচ)। পাকিস্তানের সাঈদ আজমল ১২ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫ উইকেট।
সর্বোচ্চ উইকেট (টি-টোয়েন্টি): টি-টোয়েন্টির ফরম্যাটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় এক নম্বরে ৭ ম্যাচ খেলা আরব আমিরাতের আমজাদ জাভেদ। তিনি নিয়েছেন সর্বোচ্চ ১২ উইকেট। ১১ উইকেট নিয়ে এই তালিকায় দুইয়ে বাংলাদেশের পেসার আল আমিন হোসেন। আর তিনে রয়েছেন ১১ উইকেট নেওয়া আরব আমিরাতের আরেক বোলার মোহাম্মদ নাভিদ।
বি: দ্র: ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপের দুই ফরম্যাট মেলালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮টি উইকেট লঙ্কান পেসার লাসিথ মালিঙ্গার দখলে। ওয়ানডে ফরম্যাটে তিনি নিয়েছেন ২৪ উইকেট আর টি-টোয়েন্টির এক ম্যাচ খেলে নিয়েছেন আরও চারটি উইকেট। দুই ফরম্যাট মেলালে সাকিব এবং মাশরাফির উইকেট হবে ১৭টি করে। ওয়ানডেতে দুইজনই নিয়েছেন ১২টি করে উইকেট। দুই ফরম্যাট মিলিয়ে হিসেব ধরলে এই আসন্ন আসরে আর একটি করে উইকেট পেলেই সাকিব-মাশরাফি টপকে যাবেন ভারতের টেন্ডুলকার এবং পাকিস্তানের আবদুল কাদিরকে। তারা দুইজনই নিয়েছেন ১৭টি করে উইকেট।
কে কতবার জিতেছিল শিরোপা:
৫০ ওভারের ফরম্যাট আর ২০ ওভারের ফরম্যাট মিলিয়ে এবার বসতে যাচ্ছে ১৪তম এশিয়া কাপ। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ছয়বার ভারত, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচবার শ্রীলঙ্কা আর দুইবার পাকিস্তান এই শিরোপা জিতেছে। বাংলাদেশ দুইবার (২০১২ এবং ২০১৬) ফাইনালে উঠলেও শিরোপা ছোঁয়া হয়নি।
ফাইনাল ছাড়া এশিয়া কাপ:
প্রথমবার অনুষ্ঠিত শারজায় এশিয়া কাপের কোনো ফাইনাল ম্যাচ হয়নি। সেবার অংশ নিয়েছিল ভারত, পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কা। তিনটি ম্যাচই হয়েছিল প্রথম এশিয়া কাপে। ভারত হারিয়েছিল পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাকে। ফলে, পয়েন্ট ব্যবধানে (২-০) এগিয়ে থেকে শিরোপা জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। আর রানারআপ হয়েছিল শ্রীলঙ্কা।
‘ডাক’ নেই ভারতীয় ক্রিকেটারদের:
এশিয়া কাপের ইতিহাসে ভারতের কোনো ক্রিকেটার এখনও শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেননি। তবে, সেটা ৫০ ওভারের ফরম্যাটে। টি-টোয়েন্টিতে ‘ডাক’ মেরেছেন ভারতীয়রা (আজিঙ্কা রাহানে, হারদিক পান্ডিয়া এবং রোহিত শর্মা)। ওডিআই ফরম্যাটে ‘ডাক’ এর তালিকায় শীর্ষে শ্রীলঙ্কা। সর্বোচ্চ ১৭ বার লঙ্কান ক্রিকেটাররা শূন্য রানেই সাজঘরে ফিরেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ১১ বার শূন্য রান করেছিলেন। আর পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা ৯ বার শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। সর্বোচ্চ তিনবার করে শূন্য রানে ফিরেছিলেন পাকিস্তানের সালমান বাট, বাংলাদেশের আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং শ্রীলঙ্কান মাহেলা জয়াবর্ধনে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট ধরলে সেখানে সর্বোচ্চ তিনবার শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজাকে।
বোলিং স্ট্রাইকরেটে সেরা শেওয়াগ:
ভারতের ওপেনার বিরেন্দ্রর শেওয়াগকে ধরা হয় বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান। অথচ এশিয়া কাপের আসরে তার নাম বেস্ট বোলিং স্ট্রাইকরেটে শীর্ষে (সিঙ্গেল ইনিংস)। বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাম্বুলায় ২০১০ সালের ১৬ জুন বল হাতে ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন তিনি। শেওয়াগের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ১৬৭ রানে। ২.৫ ওভার বল করে মাত্র ৬ রান খরচ করে শেওয়াগ নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। তাতে ৪.২ বোলিং স্ট্রাইকরেটে শীর্ষে শেওয়াগের নাম।
টেন্ডুলকারের দুর্দান্ত অলরাউন্ড নৈপুন্য:
এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিন নম্বরে ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার। শীর্ষে শ্রীলঙ্কার মাতারা হ্যারিকেন খ্যাত সনাথ জয়সুরিয়া (১২২০ রান)। আর দুইয়ে আরেক লঙ্কান গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারা (১০৭৫ রান)। শচীন করেছিলেন ৯৭১ রান। শুধু ব্যাট হাতেই নয়, শচীন এশিয়া কাপে জাদু দেখিয়েছিলেন বল হাতেও। ২৩ ম্যাচ খেলে নিয়েছিলেন ১৭ উইকেট। কপিল দেব (১৫ উইকেট), অনিল কুম্বলেরাও (১৪ উইকেট) উইকেট শিকারের দিক থেকে শচীনের পিছনে।
কার জয় কতটি:
এবার এশিয়া কাপ গড়াচ্ছে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে। গতবার হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। সেবার বাংলাদেশে বসেছিল এশিয়া কাপের আসর। স্বাগতিক বাংলাদেশ ৫ ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছিল। ফাইনালে গিয়ে ভারতের বিপক্ষে হারতে হয়েছিল মুশফিক-সাকিব-তামিম-মাশরাফিদের। টিম ইন্ডিয়া গতবার ৫ ম্যাচের সবগুলোই জিতেছিল।
দুই ফরম্যাট মিলিয়ে এশিয়া কাপের আসরে সর্বোচ্চ ৫২ ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কা। যেখানে লঙ্কানরা ৩৫ ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি হেরেছিল ১৭ ম্যাচ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৮ ম্যাচ খেলা ভারত জিতেছিল ৩১ ম্যাচ আর হেরেছিল ১৬ ম্যাচ, বাকি ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৪ ম্যাচ খেলে পাকিস্তান জিতেছিল ২৬ ম্যাচ, হেরেছিল ১৭ ম্যাচ আর পরিত্যক্ত হয়েছিল একটি ম্যাচ। টাইগাররা এশিয়া কাপে চতুর্থ সর্বোচ্চ ৪২ ম্যাচ খেলেছিল। যেখানে বাংলাদেশের জয় মাত্র ১৬.৬৬ শতাংশ। সাতটি ম্যাচ জেতার পাশাপাশি হেরেছিল সর্বোচ্চ ৩৫ ম্যাচ। আফগানিস্তান ৪টি ম্যাচ খেলে একটি জয় আর তিনটি পরাজয় নিয়ে এবার মাঠে নামবে। আর ২০০৪ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে হংকং ১০ ম্যাচ খেলে চারটি জয়ের পাশাপাশি হেরেছিল ৫টি ম্যাচে। তাদের একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
রোল অব অনার:
১৯৮৪ সাল: ভারত-চ্যাম্পিয়ন, শ্রীলঙ্কা-রানারআপ
১৯৮৬ সাল: শ্রীলঙ্কা-চ্যাম্পিয়ন, পাকিস্তান-রানারআপ
১৯৮৮ সাল: ভারত-চ্যাম্পিয়ন, শ্রীলঙ্কা-রানারআপ
১৯৯০ সাল: ভারত-চ্যাম্পিয়ন, শ্রীলঙ্কা-রানারআপ
১৯৯৫ সাল: ভারত-চ্যাম্পিয়ন, শ্রীলঙ্কা-রানারআপ
১৯৯৭ সাল: শ্রীলঙ্কা-চ্যাম্পিয়ন, ভারত-রানারআপ
২০০০ সাল: পাকিস্তান-চ্যাম্পিয়ন, শ্রীলঙ্কা-রানারআপ
২০০৪ সাল: শ্রীলঙ্কা-চ্যাম্পিয়ন, ভারত-রানারআপ
২০০৮ সাল: শ্রীলঙ্কা-চ্যাম্পিয়ন, ভারত-রানারআপ
২০১০ সাল: ভারত-চ্যাম্পিয়ন, শ্রীলঙ্কা-রানারআপ
২০১২ সাল: পাকিস্তান-চ্যাম্পিয়ন, বাংলাদেশ-রানারআপ
২০১৪ সাল: শ্রীলঙ্কা-চ্যাম্পিয়ন, পাকিস্তান-রানারআপ
২০১৬ সাল: ভারত-চ্যাম্পিয়ন, বাংলাদেশ-রানারআপ
সারাবাংলা/এমআরপি