Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইতালির মহা-নায়করা এখন কোথায়


২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:১১

।। মুশফিক পিয়াল, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ।।

গত রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হয়নি সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালির। ২০০৬ সালে চতুর্থবারের মতো শিরোপা জিতেছিল দলটি। সেবার জার্মানিতে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে ৫-৩ ব্যবধানে হারিয়েছিল ইতালি। নির্ধারিত সময়ের পর যোগ করা অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলাতেও ১-১ গোলের সমতায় ছিল ইতালি-ফ্রান্স। পরে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে। সেটা ছিল ফরাসি কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ, যেখানে মার্কো মাতেরাজ্জিকে মাথা দিয়ে ঢুশ দেওয়ায় লাল-কার্ড দেখেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

২০০৬ এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা এরপর আর কোনো বিশ্বকাপ জেতেনি। ইতালির সেই স্কোয়াডে থাকা ফরোয়ার্ড আলবের্তো গিলার্দিনো (৩৬ বছর) সম্প্রতি ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন। ফুটবলের সর্বোচ্চ লেভেলে এখনও খেলছেন সেই স্কোয়াডের তিন খেলোয়াড়। মার্সেলো লিপ্পি ছিলেন ইতালির কোচ। তার অধীনে খেলা ইতালির ২০০৬ বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ১১ খেলোয়াড় এখন নিজেরাই কোচ হয়েছেন। চার খেলোয়াড় ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন।

বিশ্বকাপ জয়ী ইতালির সেই স্কোয়াডে থাকা গোলরক্ষক বুফন এখনও খেলে যাচ্ছেন। গোলবারের নিচে জুভেন্টাসের সেরা কিপার এই মৌসুমে যোগ দিয়েছেন পিএসজিতে। বয়সটাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০। ৩৬ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ান জাকার্দো গত মৌসুমে খেলেছেন মাল্টার হ্যামরাস স্প্যার্টান্সের জার্সিতে। হেলাস ভেরোনার কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন ৪০ বছর বয়সী ফ্যাবিও গ্রোসো। ইতালিয়ান জায়ান্ট রোমার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন ৩৫ বছর বয়সী ড্যানিয়েল ডি রসি।

চীনের সাড়া জাগানো ক্লাব গুয়ানজু এভারগ্রান্দের কোচ হিসেবে কাজ করছেন ৪৫ বছর বয়সী ফ্যাবিও ক্যানাভেরো। ৩৭ বছর বয়সী আন্দ্রে বারজাগলি এখনও ডিফেন্ডার হিসেবে জুভেন্টাসে খেলছেন। ৪৩ বছর বয়সী আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। ইতালির একটি ক্লাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৪০ বছর বয়সী জেনারো গাতুসো। আরেক ইতালিয়ান ক্লাব হেনাস ভেরোনার স্পোর্টিং ডিরেক্টরের ভূমিকা পালন করছেন ৪১ বছর বয়সী লুকা টনি।

বিজ্ঞাপন

৪২ বছর বয়সী ফ্রান্সেসকো টট্টি ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে আরও উপরের দিকে নিয়ে চলেছেন। ফুটবল ক্লাব ল্যাজিও গোলরক্ষকদের নিয়ে কাজ করছেন ৪৮ বছর বয়সী ইতালির সাবেক গোলরক্ষক অ্যাঞ্জেলো পেরুজ্জি। ক্লাব পেরুগিয়ার হয়ে কোচিং করাচ্ছেন সাবেক সেন্টারব্যাক ৪২ বছর বয়সী আলেসান্দ্রো নেস্তা। ৩৬ বছর বয়সী ইতালির সাবেক আরেক গোলরক্ষক মার্কো আমেলিয়া এসি মিলান আর চেলসি থেকে অবসর নিয়ে এখন সময় পার করছেন লুপা রোমার কোচ হিসেবে।

ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় কাটিয়েছেন উদিনিসের সঙ্গে, ২০১৩ সালে অবসর নেওয়ার পর ৩৮ বছর বয়সী ভিসেনজো ইয়াকুইনতা আপাতত পরিবার নিয়েই সময় কাটাচ্ছেন। ইতালিয়ান-আর্জেন্টাইন ৪১ বছর বয়সী মাউরো ক্যামোরানেসি ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত। ইতালিয়ান ক্লাব সাসৌলোর একাডেমির কোচ হিসেবে কাজ করছেন ৪০ বছর বয়সী সিমিওনে বারোনে। ক্লাব বোলোগনার কোচ হিসেবে কাজ করছেন ইতালির গোলমেশিন খ্যাত ৪৫ বছর বয়সী ফিলিপ্পো ইনজাগহি। ৪১ বছর বয়সী জিয়ানলুকা জামব্রোতা ক্লাব কোচিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।

মিডফিল্ডার হিসেবে কিংবদন্তিদের কাতারে থাকা রোমা থেকে ২০১৩ সালে অবসর নেওয়া ৪১ বছর বয়সী সিমিওনে পেরোত্তা আপাতত ফুটবলের বাইরেই সময় কাটাচ্ছেন। এসি মিলান, জুভেন্টাস, ইন্টার মিলানের কিংবদন্তি মিডফিল্ডার আন্দ্রে পিরলো ২০১৭ সালেও খেলেছিলেন নিউইয়র্ক সিটির জার্সিতে। আপাতত ফুটবল ভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছেন ৩৯ বছর বয়সী পিরলো। ইতালির রাইটব্যাকে খেলা ৪২ বছর বয়সী ম্যাসিমো ওড্ডোকে খুব শিগগিরই ক্লাবের কোচের ভূমিকায় দেখা যাবে। জিদানের সেই বিখ্যাত ঢুশ খাওয়া ৪৫ বছর বয়সী মার্কো মাতেরাজ্জিকেও কোচের ভূমিকায় দেখতে পাওয়া সময়ের ব্যাপার।

২০০৬ সালে এরাই ইতালিকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। জার্মানি বসা সেই মেগা ইভেন্টে গ্রুপপর্বে ইতালি পড়েছিল ঘানা, যুক্তরাষ্ট্র আর চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে। ঘানাকে ২-০ গোলে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল টট্টি, বুফন, পিরলো, মাতেরাজ্জিরা। এরপর চেক প্রজাতন্ত্রকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ ষোলোতে উঠে ইতালি। কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করতে অস্ট্রেলিয়াকে ১-০ গোলে হারায় ইতালি। আর কোয়ার্টার ফাইনালে ইউক্রেনকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় দলটি। সেমি ফাইনালে স্বাগতিক জার্মানির বিপক্ষে নামে ইতালি। ১২০ মিনিটের লড়াইয়ের শেষ দুই মিনিটে দুটি গোল করে জার্মানদের বিদায় করে দেয় গ্রোসো-পিরলো-পিয়েরোরা। এরপর ফাইনালের মঞ্চে নামে ফ্রান্সের বিপক্ষে।

ফাইনাল শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যেই উভয় দল গোল করে। জিনেদিন জিদান ম্যাচের সপ্তম মিনিটে একটি বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে প্রথম গোল করেন। তার নেওয়া শটে বল ক্রসবারের নিচের অংশে স্পর্শ করে গোলপোস্টের ভেতরে ঢুকে যায় (১-০)। খেলার ১৯তম মিনিটে মাতেরাজ্জি গোল করে ইতালিকে সমতায় ফেরান। পিরলোর কর্নার কিক থেকে গোলপোস্টের প্রায় ৬ গজ দূর থেকে হেডে তিনি গোলটি করেন (১-১)। ৩৫তম মিনিটে ইতালির লুকা টনির শট ক্রসবারে লাগলে ফিরতি বলে হেড করেন তিনি, বল জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়। ৫৩তম মিনিটে ফ্রান্সকে একটি সাম্ভব্য পেনাল্টি দেয়া হয়নি বলে অনেকের মত। ইতালির জামব্রোতা ফ্রান্সের ফ্লোরাঁ মালুদাকে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ট্যাকল করলে তিনি পরে যান। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১–১ সমতাতেই থেকে যায়।

৯০ মিনিটে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ইতালির গোলরক্ষক বুফন অতিরিক্ত সময়ে দুর্দান্তভাবে জিদানের মাথা দিয়ে করা একটি শট রুখে দেন। যা ফ্রান্সের পক্ষে জয়সূচক গোল হতে পারত। হতাশ জিদান এর কিছু পড়ে মেজাজ হারিয়ে লাল কার্ড দেখেন। মাতেরাজ্জি জিদানের জার্সি ধরে টানলে নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। জিদান মাতেরাজ্জির বুকে মাথা ঢুশ দেন। রেফারি বিষয়টি আঁচ করতে না পারলে গোলমাল শুরু হয়। খেলা সাময়িকভাবে থামিয়ে রেফারি ওরাসিও এলিজোন্দো তার সহকারী এবং ম্যাচ অফিসিয়ালদের সঙ্গে আলোচনা করেন। চতুর্থ অফিসিয়াল লুইস মেদিনা কান্তালেহো হেডসেটের মাধ্যমে এলিজোন্দোকে ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত করেন। ম্যাচের ১১০তম মিনিটে এলিজোন্দো জিদানকে লাল কার্ড দেখান। যা ছিল জিদানের ক্যারিয়ারের ১৪তম লাল কার্ড ছিল এবং দুইটি আলাদা বিশ্বকাপে লাল কার্ড। তিনি বিশ্বকাপের ফাইনালে লাল কার্ড পাওয়া চতুর্থ খেলোয়াড় ছিলেন, এছাড়া অতিরিক্ত সময়ে লাল কার্ড পাওয়া প্রথম খেলোয়াড়ও ছিলেন।

৯ জুলাইয়ের সেই ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটে ইতালির হয়ে স্কোর করেছিলেন পিরলো, মাতেরাজ্জি, ডি রসি, দেল পিয়েরো এবং গ্রোসো। আর ফ্রান্সের হয়ে স্কোর করেছিলেন উইলটর্ড, এরিক আবিদাল, সানিয়ল। ফরাসি তারকা ত্রিজেগের নেওয়া শটটি জালে জড়ায়নি। বার্লিনের ওই ফাইনালে ৬৯ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ৫-৩ ব্যবধানে জয় নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে ইতালি।

সারাবাংলা/এমআরপি

ইতালি স্পোর্টস স্পেশাল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর