Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রুবেলের সেই লম্বা দৌড়, টাইগারদের স্মরণীয় দিন


১৭ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:১৭

।। মুশফিক পিয়াল, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ।।

স্লগ ওভার স্পেশালিস্ট খ্যাত টাইগার পেসার রুবেল হোসেনের সেই দৌড়ের কথা মনে আছে? নিউজিল্যান্ডের কাইল মিলসকে নিখুঁত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে এক হাত উপরে আর এক হাত প্রসারিত করে যে দৌড়টি দিয়েছিলেন রুবেল? ২০১০ সালের ১৭ অক্টোবর, আট বছর আগের এই দিনটি রুবেলের মতো ভুলবে না ক্রিকেটপ্রেমীরা। স্মরণীয় এক দিন হয়ে আছে টাইগারদের জন্য। যেদিন বাংলাদেশ ১৭৪ রানের পুঁজি নিয়েও ৩ রানে হারিয়ে দিয়েছিল ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি নিউজিল্যান্ডকে। পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজটি জিতেছিল ৪-০ ব্যবধানে।

বিজ্ঞাপন

১৯৮৫-৮৬ সালে বাংলাদেশ বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে এশিয়া কাপে অংশ নিয়েছিল। তবে, কোনো সিরিজ জিততে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২০০৪ সাল পর্যন্ত। লাল-সবুজের জার্সিধারীরা পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল ৩-২ ব্যবধানে। এরপর কেনিয়াকে ৪-০, ৩-০, জিম্বাবুয়েকে ৫-০, স্কটল্যান্ডকে ২-০, জিম্বাবুয়েকে ৩-১, আয়ারল্যান্ডকে ৩-০, জিম্বাবুয়েকে ২-১, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০, জিম্বাবুয়েকে ৪-১, ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল। ২০১০ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডকে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সেটি ছিল ওয়ানডের ৩০৫৮তম ম্যাচ। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ৪৪.২ ওভারে স্বাগতিকরা তোলে ১৭৪ রান। ৪৯.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে সফরকারী নিউজিল্যান্ড করে ১৭১ রান। শেষ উইকেটটি তুলে নিয়েই লম্বা দৌড় দেন রুবেল হোসেন, ততক্ষণে সতীর্থদের মধ্যমনি তিনি। বাংলাদেশ সিরিজ জেতে ৪-০ ব্যবধানে। হোয়াইটওয়াশের লজ্জা নিয়ে দেশে ফেরে কিউইরা।

বিজ্ঞাপন

ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের ওপেনার শাহরিয়ার নাফিস ব্যক্তিগত ১১ রানে সাজঘরে ফেরেন। আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েস করেন ৩৪ রান। তিন নম্বরে নামা জুনাইদ সিদ্দিকী ১০, রকিবুল হাসান ৬ রান করে বিদায় নেন। অধিনায়ক সাকিব ৪৭ বলে করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৬ রান। মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১৯, সোহরাওয়ার্দী শুভ ৩, আবদুর রাজ্জাক ২, শফিউল ইসলাম ৫* আর রুবেল হোসেন করেন ২ রান। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টরি এবং কাইল মিলস তিনটি করে উইকেট তুলে নেন। দুটি করে উইকেট পান অ্যান্ডি ম্যাকায় এবং গ্রান্ট ইলিয়ট। কোনো উইকেট পাননি নাথান ম্যাককালাম।

৫০ ওভারে ১৭৫ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই হোঁচট খায় নিউজিল্যান্ড। টপঅর্ডরের পাঁচ ব্যাটসম্যান ফেরেন দুই অঙ্কের ঘরে যাওয়ার আগেই। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, জেসি রাইডার, বিজে ওয়াটলিং, রস টেইলর এবং কেন উইলিয়ামকে ফিরিয়ে দেন রুবেল-রাজ্জাকরা। এরপর জুটি গড়ে দলকে টেনে নেন অধিনায়ক ভেট্টরি এবং গ্রান্ট ইলিয়ট। ভেট্টরি সাকিবের বলে আউট হওয়ার আগে করেন ৪৩ রান। আর সোহরাওয়ার্দি শুভর বলে আউট হওয়ার আগে ওয়াটলিং করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৯ রান। মাঝে নাথান ম্যাককালাম ৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে।

ব্যাট হাতে ঘুরে দাঁড়ান কাইল মিলস। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হওয়ার আগে ম্যাচ প্রায় বের করে নিয়েছিলেন তিনি। দুটি চার আর দুটি ছক্কায় সেদিন তিনি করেছিলেন ৪৭ বলে ৩৩ রান। শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৮ রান। সাকিব বল তুলে দেন রুবেলের হাতে। চাপের মধ্যে থেকে রুবেলের লেগ সাইডে করা প্রথম বলটি সীমানা ছাড়া করেন মিলস। তখন কিউইদের জিততে দরকার ৫ বলে ৪ রান। দলপতি সাকিব বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন রুবেলের সঙ্গে। রুবেলের দ্বিতীয় বলটি ডট হয়। তৃতীয় বলে সরাসরি বোল্ড হন মিলস। ১৭১ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ জয় তুলে নেয় ৩ রানের। তারচেয়ে বড় কথা সেই সময়ের বাঘা দল নিউজিল্যান্ডকে ৫ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে টাইগাররা ৪-০ ব্যবধানে হারিয়ে দেয়।

টাইগার পেসার শফিউল ইসলাম ৫ ওভারে ২৩ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকেন। ৯.৩ ওভারে ২৫ রান দিয়ে রুবেল হোসেন তুলে নেন সর্বোচ্চ চারটি উইকেট। আবদুর রাজ্জাক ১০ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে পান দুটি উইকেট। মাহমুদুল্লাহ ৭ ওভারে ১৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পেলেও চাপের মধ্যে রেখেছিলেন কিউইদের। সোহরাওয়ার্দি শুভ ৮ ওভারে ২৯ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। আর দলপতি সাকিব ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে পান দুটি উইকেট। সিরিজ সেরা হন সাকিব আর ম্যাচ সেরা হন রুবেল হোসেন।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৪৯.৩ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ২২৮ রান। বৃষ্টির কারণে নিউজিল্যান্ডের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৩৭ ওভারে ২১০। কিউইরা ৮ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে ২০০ রান। বাংলাদেশ বৃষ্টি আইনে জয় পায় ৯ রানের। পরের ম্যাচে বৃষ্টির কারণে কোনো বল মাঠে গড়ায়নি। তৃতীয় ম্যাচে ৪২.৫ ওভারে সফরকারীরা অলআউট হয়েছিল ১৭৩ রান তুলে। বাংলাদেশ ৪০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে। তৃতীয় ম্যাচটি টাইগাররা জেতে ৬০ বল হাতে রেখে, ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচটিও টানটান উত্তেজনার পর জেতে বাংলাদেশ। ৪৮.১ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে টাইগাররা করেছিল ২৪১ রান। ৪৯.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে কিউইরা তোলে ২৩২ রান। বাংলাদেশ সিরিজ নিশ্চিতের পাশাপাশি জিতেছিল ৯ রানের ব্যবধানে।

https://www.youtube.com/watch?v=7lWlPKIMHzw

সারাবাংলা/এমআরপি

টাইগার নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশ রুবেল হোসেন স্পোর্টস স্পেশাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর