বেবেতোর ওই উদযাপন জানেনই না ইমরুল
২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:২৬
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
মিরপুর। সেঞ্চুরির পর পরেই হেলমেট খুলে ফেললেন। দুই হাতে ব্যাট ধরে দোলনার মতো সেটি দোলালেন। অনেকেরই হয়তো সে সময় মনে পড়ে গিয়েছিল ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের স্ট্রাইকার বেবেতোর সেই গোল উদযাপনের ছবি। তবে আজ সংবাদ সম্মেলনে ইমরুল বলেছেন, বেবেতোর ওই উদযাপনের কথা জানতেনই না তিনি।
এশিয়া কাপ শেষের সময়ই পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছিলেন। তার আগেই অবশ্য আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলেছিলেন ৭২ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ একটা ইনিংস। তবে নিজের সেরাটা যেন জমিয়ে রেখেছিলেন আজকের জন্য। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৪ রানের ইনিংসটা ক্যারিয়ারসেরা তো বটেই, মিরপুরেই কোনো বাংলাদেশির সর্বোচ্চ ইনিংস। ম্যাচ শেষে জানালেন, বেবেতোর ওই উদযাপনের কথা মাথায় ছিল না তাঁর। বরং নিজের পুত্রসন্তানের জন্যই অমন করেছিলেন, ‘আমার বেবি হয়েছে। আমার বেবির জন্য সেঞ্চুরিটা ডেডিকেট করেছি।’
কিন্তু বার বার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েও ফিরে আসার প্রেরণা কী? ইমরুল মুশফিককে উদাহরণ হিসেবে টানলেন, ‘আমি একটি ব্যাপার বিশ্বাস করি, কেউ যদি কঠোর পরিশ্রম করে, সে তার ফল পাবেই। আমি মুশফিককে দেখে অনেক কিছু শিখি। মুশফিক যেভাবে কষ্ট করে, ও কিন্তু কষ্ট করেই আজকের মুশফিকুর রহিম হয়েছে। আমি সবসময় এটা অনুসরণ করার চেষ্টটা করি। বিশ্বাস করি যে কষ্ট করলে তার ফল পাওয়া যায়।’
এই ইনিংস কি তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা? এমন প্রশ্নের জবাবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ওই ইনিংসের কথাই বললেন, ‘এটা আমার ক্যারিয়ারের ভালো একটা ইনিংস হিসেবে রাখব। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইনিংস অনেক দরকার ছিল। আটলিমেটলি নিজে ভালো খেললে দলের কাজ হয়ে যায়। আজকের ইনিংসটির জন্য বাংলাদেশ দল সেভ হয়ে গেছে। এটার জন্য আলহামদুলিল্লাহ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি কি করতে পারি, কি পারি না, অনেক কিছু জেনেছি ওই ইনিংস থেকে। আজকে ব্যাটিংয়ের সময় ওই ইনিংসটার কথা বারবার মনে করছিলাম। ওরকম একটা কঠিন পরিস্থিতিতে, চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে যদি ভালো কিছু করতে পারি, তাহলে নিজেদের কন্ডিশনে আরও ভালো কিছু করতে পারব।’
ক্যারিয়ারের এক দশক কাটিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দলে এখনো সেভাবে থিতু হতে পারেননি। এ নিয়ে কি কোনো খেদ আছে? ইমরুল অবশ্য পেছনের দিকে তাকাচ্ছেন না, ‘ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারে আপ অ্যান্ড ডাউন থাকবেই। কেউ ভালো খেলবে, আবার ভালো খেলতে খেলতে খারাপ খেলবে। এভাবেই ক্যারিয়ার হয়। কেউ কখনও একই ধারাবাহিকতায় টানা খেলতে পারে না। আমারটা হয়ত একটু ভিন্ন হয়ে গেছে। অন্য কেউ এসে ভালো খেলে ফেলেছে, এজন্য আমার হয় নাই। এখন আমি ওগুলো নিয়ে চিন্তা করি না। এখন ভাবি যে যখনই সুযোগ আসবে, দেশের হয়ে খেলায় ভালো অনুভূতি কাজ করে, সুযোগটার জন্য তাই অপেক্ষা করি এবং কঠোর পরিশ্রম করি।’
যত যাই হোক, নিজেকে সব সময় জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত রাখেন, সেটিও মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমার সঙ্গে অনেক ক্রিকেটারের একসঙ্গে অভিষেক হয়েছে, খেলেছে। তারা এখন দৃশ্যপটেও নেই। আমার কাছে মনে হয় যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি যে আমার ক্যারিয়ারে এত দ্রুত শেষ হতে পারে না। আমি সবসময় নিজেকে প্রস্তুত রাখি। যতদিন খেলব, জাতীয় দলে খেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখি। যেদি হয়তো জাতীয় দলে খেলার চান্স থাকবে না, নিজেই বলব থ্যাংক ইউ।’
আপাতত ইমরুলের কাছ থেকে এমন ইনিংস আরও অনেক বার চাইবে বাংলাদেশ।
সারাবাংলা/এএম