Thursday 10 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হারিয়ে যাবে না তো মেহেদী-উচ্ছ্বাসরা?


৪ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:১৭ | আপডেট: ৪ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:১৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।। জাহিদ-ই-হাসান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ভারত-পাকিস্তানের মতো দলকে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত সাফ জয়ী এই বাংলাদেশের কিশোররা মাত্র আড়াই মাসের অনুশীলনে প্রমাণ করেছে দেশের ফুটবলে পাইপলাইনে মোটেও কোন কমতি নেই। অপরাজিত চ্যাম্পিয়নরা দেশে ফিরে পেয়েছে হাজারো ফুলেল শুভেচ্ছা। তবে, ফুটবল প্রেমিদের শঙ্কা- দেশের নিদারুণ ফুটবল ‘সিস্টেমের গেড়াকলের বলি’ হবেন না তো এই চ্যাম্পিয়ন উদীয়মান ফুটবলাররা!

ফুটবলই যাদের ধ্যান-জ্ঞান, পেট চলার একমাত্র সম্বল তাদের ক্যারিয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে শঙ্কা জেগে ওঠা অপ্রাসঙ্গিক নয়। উদীয়মান ফুটবলার হারানোর ঐতিহ্য আছে এ দেশের! বাংলাদেশে নেই কোন ফুটবল একাডেমি, নেই কোন ক্লাব সংস্কৃতি, নেই কোন ফুটবলার তৈরি ও গড়ে ওঠার পরিবেশ! সেখানে তাদের ফুটবল নিয়ে উচ্চাখাঙ্খা ‘হাত দিয়ে পাহাড় ঠেলার’ মতোই অলীক সত্য।

বিজ্ঞাপন

বাস্তবতা যেখানে এতো কঠিন সেখানে থেকেও এই কিশোররা ট্রায়াল থেকে মাত্র আড়াই মাসের অনুশীলন নিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এটা যেমন গর্বের মতো বিষয় যদিও, কিন্তু তাদের ভাগ্য নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। কারণ এখনও বয়সভিত্তিক কোন ছেলে ফুটবল নিয়ে নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল অভিভাবক বাফুফের কোনও প্রদক্ষেপ চোখে পড়েনি। কয়েকবার যুব দলকে নিয়ে আধুনিক প্রশিক্ষণ আর আবাসিক ক্যাম্পের আশ্বাস দিয়ে পা গুটিয়ে নিয়েছে বাফুফে। তারই ধারাবাহিতকতা এবারও অব্যাহত রাখার গৌরবে (?) ভাসতে পারে ফুটবল সংস্থাটি।

এর আগেও ২০১৫ সালে অ-১৬ দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। বাফুফে কর্মকর্তারা সেই দলকে দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলন ও একাডেমিতে রাখার কথা বলেছিল। ফেডারেশন তাদের দেখাশোনা না করায় অনেকেই হারিয়ে গেছে। সেই দলের মধ্য থেকে মাত্র সাদউদ্দিন জাতীয় দলে খেলছেন। দুই একজন ক্লাব পর্যায়ে রয়েছেন।

দীর্ঘ তিন বছর পরে পুরুষ ফুটবল দল দেশের বাইরে থেকে ট্রফি আনল। ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফ গেমসের ফুটবল ট্রফির স্মৃতি টানলেন অনেকে। সাফ অ-১৫ দলের কোচ পারভেজ বাবু ১৯৯৯ সালের চূড়ান্ত স্কোয়াডে সুযোগ পাননি। তার কোচিংয়ে ১৯ বছর পর কাঠমান্ডু থেকে আরেকবার শিরোপা নিয়ে ফিরল বাংলাদেশ। কোচ পারভেজ বাবুর মিশ্র প্রতিক্রিয়া,‘ সেই দলে আমি সুযোগ পাইনি। কাঠমান্ডু থেকে যখন দল চ্যাম্পিয়ন হলো তখন আফসোস ছিল নিজেও হয়তে থাকতে পারতাম। আজ সেই অপূর্ণতা দূর হলো। আমার কোচিংয়ে সাফের ট্রফি নিয়ে ফিরলাম।’

১৯৯৯ সালে অপূর্ণতা থাকলেও আরেক দিক থেকে তিনি বাংলাদেশের ফুটবলের বিশেষ স্থানে। কোচ ও খেলোয়াড় হিসেবে সাফের ট্রফি জয়ের। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন। এবার কোচ হিসেবে ট্রফি জিতলেন। এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ট্রফি জয় গর্বের। দুই দায়িত্ব থেকে দুই ট্রফি জেতাও বেশ গৌরবের। আমি আমার সেরাটা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি।’

বিমানবন্দরে পারভেজ বাবু যখন এই কথাগুলো বলছিলেন তখন তার পাশে ২০০৩ সাফের চ্যাম্পিয়ন দলের আরেক সদস্য আরিফ খান জয়। তার বর্তমান পরিচয় অবশ্য যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী। অ-১৫ দলের সাফল্যে ছুটে গেছেন বিমানবন্দরে। খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব ক্রীড়ামোদী। তোমাদের জয়ে অভিনন্দন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তোমাদের নিশ্চয় এই সাফল্যের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে।’

বাংলাদেশের ট্রফি জয়ের নায়ক গোলরক্ষক মেহেদী হাসান তার অসাধারণ অভিজ্ঞতার ব্যাপারে বলেন,‘ কোচের নির্দেশনা অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি। খুব সিরিয়াস অনুশীলন করতাম। আত্মবিশ্বাস ছিল গোল সেভ করতে পারব। সেই আত্মবিশ্বাসই কাজে দিয়েছে।’ অধিনায়ক মেহেদী হাসান সাফল্যের জন্য ফেডারেশনকে ধন্যবাদের পাশাপাশি দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘নীলফামারীতে আমরা দুই থেকে আড়াই মাস কঠোর পরিশ্রম করেছি। সেই পরিশ্রমের ফল পেয়েছি। আমরা ফুটবলার হতে চাই। ফেডারেশন আমাদের পর্যবেক্ষণে রাখবে সেটাই প্রত্যাশা।’

ম্যাচ শেষে অবশ্য বাফুফের সভাপতি আশ্বাস দিয়েছেন বিশেষ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করবেন। এর আগেও তার আমলেই সাফ চ্যাম্পিয়নরা আশ্বাসের পরেও কোনও ব্যবস্থা পায় নি। সেই চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে গোনা দুই-একজন ছাড়া ফুটবলে নেই কেউ। হারিয়ে গেছে। মেহেদী-উচ্ছ্বাসদের পরিণতি কি হবে সময়ই বলবে।

সারাবাংলা/জেএইচ

অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর