মাশরাফির ম্যাচে উইন্ডিজদের উড়িয়ে দিলো টাইগাররা
৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৪৮
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
এই ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ ইনজুরির পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে ফেরেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। আর নিজের ক্যারিয়ারে দেশের জার্সিতে ২০০তম ম্যাচে মাঠে নামেন ওয়ানডে দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয়ের প্রত্যাশা নিয়েই মাঠে নেমেছিল মাশরাফি-মুশফিক-সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা।
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার পর তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সফরকারীদের ছুঁড়ে দেওয়া ১৯৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে প্রত্যাশিত জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। ৩৫.১ ওভারে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে। ৫ উইকেটের এই জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরেজে ১-০ তে লিড নিল স্বাগতিকরা।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে টাইগারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৫০ ওভার শেষে সফরকারীরা ৯ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৯৫ রান। মাশরাফি ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন তিনটি উইকেট। সাকিব ১০ ওভারে ৩৬ রানের বিনিময়ে পান একটি উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ ১০ ওভারে ৩০ রান খরচ করে নেন একটি উইকেট। রুবেল হোসেন ১০ ওভারে ৬১ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। আর মোস্তাফিজুর রহমান ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে তুলে নেন তিনটি উইকেট।
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ২৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যক্তিগত ১০ রানে সাকিব আল হাসানের বলে রুবেল হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কিয়েরন পাওয়েল। এরপর উইকেট শিকারে যোগ দেন অধিনায়ক মাশরাফি। দলীয় ৬৫ রানে তার বলে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১৯ রানে ফেরেন ড্যারেন ব্রাভো। দলীয় ৭৮ রানে ৪৩ রান করা শাই হোপকে ফেরান মাশরাফি। এরপর উইকেট তুলে নেন মিরাজ, ফিরিয়ে দেন শিমরন হেটমেয়ারকে। বোল্ড হওয়ার আগে করেন ৬ রান। আবারো উইকেট শিকার করেন টাইগার দলপতি ম্যাশ। উইন্ডিজ দলপতি রোভম্যান পাওয়েলকে (১৪) ফিরিয়ে দেন তিনি। দলীয় ১১৯ রানে সফরকারীরা পঞ্চম উইকেট হারায়।
ইনিংসের ৪০তম ওভারে রুবেল হোসেন ফিরিয়ে দেন মারলন স্যামুয়েলসকে (২৫)। দলীয় ১২৭ রানে টপঅর্ডারের ছয় ব্যাটসম্যানকে হারায় উইন্ডিজ। এরপর কিছুটা রানের চাকা ঘোরান রোস্টন চেজ এবং কেমো পল। দলীয় ১৭৮ রানের মাথায় রোস্টন চেজকে (৩২) সাজঘরের পথ দেখান মোস্তাফিজ। শেষ ওভারে মোস্তাফিজের বলে আউট হন কেপো পল। তার আগে কেমো পল ২৮ বলে করেন ৩৬ রান। এক বল পরেই দেবেন্দ্র বিশুকে ফেরান ফিজ।
১৯৬ রানের টার্গেটে স্বাগতিকদের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন ইনজুরি থেকে ফিরে প্রস্তুতি ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস। দলীয় ২২ রানের মাথায় কেমার রোচের বলে শিমরন হেটমেয়ারের তালুবন্দি হন লিটন। কিন্তু নো-বলের সুবাদে সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। অষ্টম ওভারের শেষ বলে বিদায় নেন তামিম ইকবাল। দলীয় ৩৭ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রোস্টন চেজের বলে দেবেন্দ্র বিশুর তালুবন্দি হওয়ার আগে তামিম করেন ১২ রান। পরের ওভারে ওশানে থমাসের বলে বোল্ড হন ইমরুল কায়েস (৪)। দলীয় ৪২ রানের মাথায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায়।
৫৭ বলে পাঁচটি বাউন্ডারিতে ৪১ রান করে কেমো পলের বলে বোল্ড হন ওপেনার লিটন দাস। ১৯তম ওভারে দলীয় ৮৯ রানে টাইগাররা তৃতীয় উইকেট হারায়। দলীয় ১৪৬ রানের মাথায় বিদায় নেন সাকিব আল হাসান (৩০)। রোভম্যান পাওয়েলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে সাকিব ২৬ বলে চারটি বাউন্ডারি হাঁকান। ৩০তম ওভারে ফেরেন সৌম্য সরকার (১৯)। রোস্টন চেজের বলে স্লিপে ক্যাচ দেওয়ার আগে সৌম্য দুটি চার আর একটি ছক্কায় ১৩ বলে করেন ১৯ রান। তার বিদায়ে বাংলাদেশ পঞ্চম উইকেট হারায়।
মুশফিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩১তম ফিফটি তুলে নিয়ে ৭০ বলে পাঁচটি বাউন্ডারিতে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২১ বলে এক ছক্কায় করেন অপরাজিত ১৪ রান। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি হবে আগামী ১১ ডিসেম্বর, মিরপুরে। সেটিও দিবারাত্রির ম্যাচ।
ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করে গাজী টিভি। খেলাটি অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করে র্যাবিটহোলবিডি।
ওয়ানডেতে সব শেষ পাঁচ ম্যাচের মাত্র একটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, নিজেদের খেলা সব শেষ ৫ ম্যাচের একটিতে জয়, একটিতে ড্র আর বাকি তিনটিতেই হেরেছে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ২৩টি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে। ঘরের মাঠেই জিতেছে ১৮টি সিরিজ। আর অ্যাওয়ে সিরিজে পাঁচবার সিরিজ জয়ের স্বাদ নিয়ে এসেছে। তবে পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে টাইগারদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে উইন্ডিজরা। ১৯৯৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশ মোট ৩১ ওয়ানডে ম্যাচে উইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছিল। যেখানে জয়ের পাল্লা ভারী ক্যারিবীয়ানদের দিকে। ২০ ম্যাচে জিতেছিল উইন্ডিজরা। আর বাংলাদেশের জয় আছে ৯টি তে। বাকি দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
বাংলাদেশ একাদশ:
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন এবং মোস্তাফিজুর রহমান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ:
রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), কিয়েরন পাওয়েল, শাই হোপ (উইকেটরক্ষক), ড্যারেন ব্রাভো, মারলন স্যামুয়েলস, শিমরন হেটমেয়ার, রোস্টন চেজ, দেবেন্দ্র বিশু, কেমার রোচ, কেমো পল এবং ওশান থমাস।
** টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
** কিংবদন্তি কপিলকে টপকে গেলেন মাশরাফি
** জয়ের জন্য টাইগারদের দরকার ১৯৬
সারাবাংলা/এমআরপি