সিলেটের সবুজে ক্রিকেট উৎসব
১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:৫২
।। স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট ।।
সিলেট থেকে: সিলেট শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ‘লাক্কাতুরা’ চা বাগান। যার কোলে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দেশের একমাত্র সবুজ ভেন্যু সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বিমানবন্দর সড়ক সংলগ্ন মূল গেইট থেকে টিলার পাদদেশের আঁকাবাঁকা ৫শ গজের রাস্তাটি যেখানে গিয়ে থেমেছে ঠিক সেখানেই গড়ে উঠেছে বৃটিশ স্থাপত্য ধাঁচের অপরূপা স্টেডিয়ামটি। প্রকৃতির সবুজের সমারোহ এখানে এতটাই গাঢ় যে কেউই বিস্মিত হবেন, চমকে যাবেন।
বাইরের মতো সবুজের নিবিড় ছোঁয়া মিলবে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও। পশ্চিম দিকের টিলার গাঁ ঘেষে গড়ে উঠা ‘গ্রিন গ্যালারি’তে বসে যে কেউই ভুল করে বসতে পারেন আপনি দেশের বাইরের কোনো গ্যালারিতে আছেন। ভক্তদের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে টিলার ওপরেও। নিপুন শৈল্পিকতার টিলার ১০ স্তরের গ্যালারিতে বসে খেলা উপভোগের অনাবিল আনন্দ মিলবে শুধু এখানেই।
সেখানেই আজ ক্রিকেট উৎসবে মেতেছে গোটা সিলেট বাসী। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি দেখতে হাজার হাজার ক্রিকেট প্রেমী আজ এখানে ভীড় জমিয়েছেন। ক্যারিবীয়ানদের হারিয়ে আরেকবার বছরে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ টাইগাররা নিজেদের করে নেবে সেই উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়িও তাদের মধ্যে প্রবল।
হাতে চার, ছয় এর প্ল্যাকার্ড, মাথায় ও কপালে প্রিয় বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে উপস্থিত সবাই গ্যালারি থেকে টাইগারদের প্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছেন। মাশরাফি, সাকিবদের প্রতিটি বল তাদের উইকেটের উপলক্ষ্য এনে দিচ্ছে। জ্বলে উঠছেন স্পিনিং অলরাউন্ডার মিরাজ, উৎসবে মেতে উঠছে গ্যালারি।
অনেকে আবার ম্যাচটি দেখতে এসেছেন মাশরাফির ‘শেষ’ বলে। মাশরাফির শেষ! একথা মাশরাফি তো নিজে কখনোই বলেননি। তাহলে আপনারা কি করে জানলেন? জানতে চাওয়া হলে পশ্চিম দিকের গ্যালারিতে বসা জনাকয়েক মাশরাফি ভক্ত জানালেন, ‘উনি না বললেও আমরা জানি। ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেললে দেশের মাটিতে এটাই তো তার শেষ ম্যাচ হওয়ার কথা।’
তাজ্জব হয়ে যাই তাদের অনুমান প্রসূত এসব কথা শুনে। আবার ভাবতে থাকি হতেও তো পারে। মাশরাফি বলে কথা। কখন যে ক্রিকেটকে বিদায় বলেন সেটা তার চাইতে ভালো আর কে বলতে পারেন? ২০০৯ এ ইনজুরিতে পড়ে কোনো ঘোষণা ছাড়াই সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন। বিদায় বলতে দ্বিধা করেননি টি-টোয়েন্টিকেও। গেল বছরের মার্চেই তো কলম্বোয় সবাইকে অবাক করে সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের এই ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন। সেখানেও কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন বোধ করেননি লাল সবুজের ক্রিকেটের সবচাইতে সফল এই অধিনায়ক।
সেই সফল মাশরাফির নেতৃত্বেই আজ এই মাঠের অভিষেক ওয়ানডেতে নেমেছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বের ২০০তম ওয়ানডে ভেন্যু হিসেবেও যাত্রা শুরু করলো। ভেন্যুটিতে স্বাগতিকরা আজ অব্দি দুটি ম্যাচ খেলে একটিতেও জয়ের মুখ দেখেনি। একমাত্র টি-টোয়েন্টি খেলেছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। সফরকারী লঙ্কানদের বিপক্ষে ম্যাচটিতে শেষ হাসি হেসে মাঠ ছাড়তে পারেনি।
সাদা ফরমেটের ক্রিকেটেও টাইগারদের অবস্থা তথৈবচ। নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট, সিলেট স্টেডিয়ামের অভিষেক ম্যাচে ১৫১ রানের পরাজয় দেখতে হয়েছে। পরিসংখ্যান শঙ্কার উদ্রেক করলেও এদেশের ১৬ কোটি ক্রিকেট ভক্ত একটি জায়গাতে অন্তত আশ্বস্ত হতে পারেন। ওই দুটি ম্যাচের কোনোটিতেই মাশরাফি ছিলেন না। আজ আছেন। বাংলাদেশর ক্রিকেটের কতকিছুর গোড়াপত্তনই তো তার হাত ধরে হয়েছে। আজকেও না হয় আবার হবে!
সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি