Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশের ফুটবলে একেবারে নতুন যে প্রযুক্তি


১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১৭

।। জাহিদ-ই-হাসান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকাঃ বিশ্ব ফুটবলে প্রযুক্তি ছোঁয়া লেগেছে বহু বছর আগে। পূর্ণ প্রতিযোগিতার এই যুগে কেউ পিছিয়ে থাকতে চায় না। ক্লাব বা দেশ প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে বিশ্বফুটবল। চলমান ম্যাচেও পুরো ম্যাচের যাবতীয় তথ্য এক ক্লিকেই হাতের মুঠোয় দেখিয়ে দিচ্ছে প্রযুক্তি। যার ফলে ফুটবলটা আরও সহজ হয়ে এসেছে। প্রযুক্তির উপর ভর করেই তার পূর্ণ উপযোগিতা নিয়ে সাফল্য পাচ্ছে অনেক দলই। তবে, প্রযুক্তি দৌড়ে ঢের পিছিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল।

বিজ্ঞাপন

অনেক পরে হলেও দেশের ক্লাবগুলো এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। জিপিএসের মতো উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর ডিভাইস এনে ব্যবহার শুরু করেছে আরামবাগ-সাইফ স্পোর্টিংয়ের মতো দেশের ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ ক্লাবগুলো। তার সুফলও হাতেনাতে পেয়েছে আরামবাগ। বছরের শুরুতে স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মতিঝিলের ক্লাবটি।

জিপিএসের পর নতুন আরেক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। যা দেশের ফুটবলে একেবারে নতুন। গত মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে অভিষিক্ত ক্লাবটি দেশের ফুটবল উন্নয়নে এবার একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা শুরু করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে একটি দলের বিশ্লেষণ, খেলার ধরনের তুলনামূলক অবস্থা এবং খেলা পরিবর্তনের সেট-প্লে বিশ্লেষণ করে থাকে এ প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি বলে দিতে পারবে কিভাবে বিপক্ষ দল আচরণ করছে এবং করবে ও খেলবে।

দ্য ভিডিও অ্যানালিস্ট সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছেন সাইফের সহকারী কোচ আলেক্স ম্যাককার্থি। ইতোমধ্যে দলের খেলার উন্নয়নে এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে সাইফ। এই প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে এমন প্রশ্নে আলেক্স ম্যাককার্থি সারাবাংলাকে জানান, খেলার ভিডিওকে বিভিন্নভাবে ভাগ করে দেখায় এ প্রযুক্তি। কোথায় সমস্যা, কোথায় দুর্বলতা দেখিয়ে দেয় এই প্রযুক্তি। কোন খেলোয়াড় কোথায় অবস্থান নিবে, তার কি দায়িত্ব তারও সুপারিশ করবে এই প্রযুক্তি। ফুটবলকে আরও সহজ করবে এই প্রযুক্তি।’

বিজ্ঞাপন

এ জন্য ম্যাচের ভিডিওয়ের উপর নির্ভর করতে হয় এই প্রযুক্তির। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই প্রযুক্তি নিয়ে কতটুকু কাজ করার সুযোগ আছে জানান এই ইংলিশ কোচ, ‘আপাতত মাইকুজো বা যে টেলিভিশনে ম্যাচ দেখানো হয় সেই ভিডিও বিশ্লেষণ করে এই সফটওয়্যার। তবে, বাংলাদেশে ম্যাচ ভিডিও যেখানে বল আছে শুধু সেখানে অবস্থানটা দেখা যায়। তাই এর বাইরে পেছনের ফুটবলারদের আচরণ কি হচ্ছে তা দেখাতে পারছে না এই প্রযুক্তি। উন্নত দেশের অনেক ক্যামেরা থাকায় বিশ্লেষণ করা সহজ হয়।’

ফুটবলারদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে এই প্রযুক্তি আনা হয়েছে বলে জানান ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরী, ‘গত মৌসুমের পর থেকেই এ বছর কোচিং স্টাফ, ব্যাকগ্রাউন্ড ইকুয়েপমেন্সের জন্য ম্যাক্সিমাম বরাদ্দের উপর জোর দিয়েছি। খেলোয়াড়রা যাতে ঠিকপথে থাকে, আন্তর্জাতিকমানের হয় সেজন্য চেষ্টা করছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ বছর প্লেয়ারদের চেয়ে দশগুণ বেশি খরচ করেছি এসব সরঞ্জমাদি ও কোচিং স্টাফ নিয়োগ দিতে।’

গতবছর দেশের পেশাদার লিগে নাম লেখানো এই ক্লাব দেশের তারকা ফুটবলারদের নিয়েই গেল মৌসুমে বড় বাজেটের দল সাজিয়েছিলো সাইফ। প্রথমবারেই এএফসি কাপ খেলেছে তারা। পরের মৌসুম এবার অনেকটা রহমত-জাফরদের মতো তরুণ তুর্কীদের নিয়ে দল গঠন করেছে সাইফ। তারকা ফুটবলার বলতে জামাল ভুঁইয়া আছেন।

তারকারাজি না গড়ে দেশের তরুণ ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক মানের হিসেবে তৈরি করতেই জিপিএস প্রযুক্তি এনেছেন বলে জানালেন নাসির উদ্দিন চৌধুরী, ‘ট্রেনিং ফ্যাসিলিটিসগুলো নিশ্চিত করতে চাই ফুটবলারদের। ম্যাচ বিশ্লেষণের জন্য ভালো সফটওয়্যার ব্যবহার করছি। সামনে আধুনিক আরও প্রযুক্তি নিয়ে আসবো ধীরে ধীরে পরিকল্পনা মোতাবেক। একটি ড্রোন ক্যামেরা আনবো। সেটা দিয়ে পুরো মাঠের খেলোয়াড়দের অবস্থান বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনেক ভিডিও খেলোয়াড়দের দেয়া হয়েছে। তাদেরও অ্যাডপ্টেশনের ব্যাপার আছে।’

ড্রোন ক্যামেরা পরিচালনার শর্ত আছে দেশে। অনুমতি নিয়েই ডিজিটাল ক্যামেরা এনে ফুটবলারদের উন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় সাইফ। এই ক্যামেরা আনলে প্রযুক্তি যেভাবে কাজ করবে জানালেন কোচ আলেক্স ম্যাককার্থি, ‘এই প্রযুক্তি আমাদের অনেকগুলো সুপারিশ তৈরি করে দেয় বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে। আমাদের শুধু প্রশ্ন করতে হবে এবং বিশেষজ্ঞরা সমাধান এনে দিবেন। এই ধরনের বিশ্লেষণ সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের খেলাগুলোতে দেয়া হয়। বাস্কেট বল, আমেরিকান ফুটবল এবং বেসবলে এই ধরনের গভীর বিশ্লেষণ দেখা হয়। ফুটবলে ইউরোপের দেশ ও শীর্ষ ক্লাবগুলো ব্যবহার করে।’

ক্লাবগুলো উদ্যোগী হলেও এই জিপিএসই ব্যবহার শুরু করতে পারে নি জাতীয় ফুটবল দল। সম্প্রতি দেশের ফুটবলারদের জন্য জিপিএস ডিভাইস প্রযুক্তি কিনে এনেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এমন অনেক প্রযুক্তি নেই জাতীয় দলের। দেশের ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তুলতে প্রযুক্তি নির্ভরতার বিকল্প নেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সারাবাংলা/জেএইচ

আরামবাগ ক্রীড়া চক্র আলেক্স ম্যাককার্থি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর