টেস্টের বদলি খেলোয়াড় মাশরাফির ‘ইনিংসে তিন ক্যাচ’
২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:৩৬
।। মুশফিক পিয়াল, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ।।
১৮শ শতাব্দীর শেষদিকে ‘ইংল্যান্ড নামধারী দলগুলো’ ক্রিকেট খেলতে শুরু করে। কিন্তু ওই দলগুলো প্রকৃতভাবে প্রতিনিধিত্বকারী দল ছিল না। ফরাসী বিপ্লব ও আমেরিকার গৃহযুদ্ধ শুরুর দিকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় বিঘ্ন ঘটায়। ১৮৪৪ সালের ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম কানাডার মধ্যে প্রথমদিকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে, খেলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেনি। প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড। এরপর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত টেস্ট হয়েছে ২৩৩৫টি।
সারাবাংলা.নেটের পাঠকদের জন্য আজ থাকছে টেস্ট ক্রিকেটে ক্যাচের রেকর্ডস।
সর্বোচ্চ ক্যাচ:
এই তালিকায় সবার উপরে ভারতের সাবেক অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়। টিম ইন্ডিয়ার বর্তমান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ দ্রাবিড় ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৬৪টি টেস্ট ম্যাচ। যেখানে ৩০১ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২১০টি ক্যাচ লুফে নিয়েছেন। ইনিংস প্রতি তার ক্যাচ নেওয়ার গড় ০.৬৯৭। এই তালিকায় দুইয়ে আছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে। লঙ্কান এই গ্রেট ১৪৯ ম্যাচের ২৭০ ইনিংসে নিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০৫টি ক্যাচ। তালিকায় তিনে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক কিংবদন্তি অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস। এই প্রোটিয়া তারকা ১৬৬ ম্যাচে ৩১৫ ইনিংসে ক্যাচ নিয়েছেন ২০০টি।
টেস্টে দুইশো ক্যাচ নেওয়ার রেকর্ডসে নেই আর কারো নাম। ১৬৮ ম্যাচে ৩২৮ ইনিংসে ১৯৬টি ক্যাচ নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং। ১২৮ ম্যাচের ২৪৫ ইনিংসে ১৮১টি ক্যাচ নিয়েছেন অজি সাবেক তারকা মার্ক ওয়াহ। ইংল্যান্ডের হয়ে এখনও খেলছেন অ্যালিস্টার কুক, তিনি ১৬১ ম্যাচের ৩০০ ইনিংসে নিয়েছেন ১৭৫টি ক্যাচ। নিউজিল্যান্ডের সাবেক দলপতি স্টিফেন ফ্লেমিং ১১১ ম্যাচের ১৯৯ ইনিংসে নিয়েছেন ১৭১টি ক্যাচ।
ইনিংসে সর্বোচ্চ ক্যাচ:
এক ইনিংসে ক্যাচ নিয়ে প্রতিপক্ষের সর্বোচ্চ পাঁচজন করে ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন ১১ ক্রিকেটার। ১৯৩৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে টেস্ট ক্রিকেটের ২৫১তম ম্যাচে এমনটি ঘটেছিল প্রথমবার। সেবার ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ইনিংসে ফিল্ডিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টর রিচার্ডসন ৫টি ক্যাচ লুফে নেন। আর সবশেষ ২০১৮ সালের মার্চে কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের নেতৃত্ব দেওয়া স্টিভ স্মিথ ৫টি ক্যাচ নিয়েছিলেন প্রথম ইনিংসে। সেই সিরিজেই বল টেম্পারিংয়ের কাণ্ডে নিষিদ্ধ হন স্মিথ। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা এখনও কাটেনি তার। একই কাণ্ডে সেই সিরিজের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ আছেন সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা ডেভিড ওয়ার্নার এবং তরুণ ব্যাটসম্যান ক্যামেরুন ব্রানক্রফট।
রিচার্ডসন আর স্মিথের মাঝে ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫টি করে ক্যাচ নেওয়াদের মধ্যে আছেন ভারতের ইয়াজারভিন্দ্রা সিং, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, কৃশ শ্রীকান্ত, আজিঙ্কা রাহানে, নিউজিল্যান্ডের স্টিফেন ফ্লেমিং, দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্যারেন স্যামি, জারমাইন ব্লাকউড এবং ড্যারেন ব্রাভো।
এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচ:
এই তালিকায় সর্বোচ্চ ৮টি ক্যাচ নিয়ে শীর্ষে ভারতের আজিঙ্কা রাহানে। ২০১৫ সালের আগস্টে গলে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রাহানে এক ম্যাচে ফিরিয়েছেন আট ব্যাটসম্যানকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাতটি করে ক্যাচ নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান গ্রেগ চ্যাপেল, ম্যাথু হেইডেন, ভারতের ইয়াজারভিন্দ্রা সিং, লোকেশ রাহুল, নিউজিল্যান্ডের স্টিফেন ফ্লেমিং, শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশান।
এক সিরিজে সর্বোচ্চ ক্যাচ:
৫ ম্যাচ টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ ১৫ ক্যাচ নিয়ে এই তালিকায় শীর্ষে অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক গ্রেগরি। ১৯২০-২১ অ্যাশেজ সিরিজে ইংলিশদের বিপক্ষে ১০ ইনিংসে তিনি ১৫টি ক্যাচ লুফে নেন। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাতুইদি ট্রফিতে ভারতের লোকেশ রাহুল ৫ ম্যাচের সিরিজে ৯ ইনিংসে নিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪টি ক্যাচ। এক সিরিজে ১৪টি ক্যাচ নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি গ্রেগ চ্যাপেল। সেটি ছিল ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমের অ্যাশেজের ৬ ম্যাচের সিরিজ। এছাড়া, এক সিরিজে ১৩টি করে ক্যাচ নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা (৪ ম্যাচ), ভারতের রাহুল দ্রাবিড় (৪ ম্যাচ), অস্ট্রেলিয়ার বব সিম্পসন (৫ ম্যাচ), ইংল্যান্ডের অ্যালিস্টার কুক (৫ ম্যাচ)। এর মধ্যে দুবার করে এক সিরিজে ১৩টি করে ক্যাচ নিয়েছেন ব্রায়ান লারা এবং বব সিম্পসন।
বদলি খেলোয়াড় হয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ক্যাচ:
এই তালিকায় শীর্ষে পাকিস্তানের ইউনিস খান। বাংলাদেশের বিপক্ষে মুলতানে ২০০১ সালের আগস্টে তৃতীয় ইনিংসে ইউনিস খান নিয়েছেন চারটি ক্যাচ। বদলি খেলোয়াড় হিসেবে এক ইনিংসে তিনটি করে ক্যাচ নিয়েছেন ইংল্যান্ডের বার্ট স্ট্রুডউইক, পাকিস্তানের হারুন রশিদ, ভারতের গুরশরন সিং, বিরেন্দ্রর শেওয়াগ।
এই তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজার। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমে নিয়েছিলেন তিনটি ক্যাচ। সাকলাইন মুশতাক, ইনজামাম উল হক, ইউনিস খান, রশিদ লতিফ, উমর গুলদের বিপক্ষ সেই ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে ছিলেন না মাশরাফি।
হান্নান সরকার, জাভেদ ওমর, হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ আশরাফুল, রাজিন সালেহ, অলোক কাপালি, খালেদ মাহমুদ, খালেদ মাসুদ, মোহাম্মদ রফিক, তাপশ বৈশ্য, মনজুরুল ইসলামরা সেই ম্যাচে ১ উইকেটে হেরেছিল। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমে মাশরাফির তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরেছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ, ইয়াসির হামিদ এবং সালমান বাট।
সারাবাংলা/এমআরপি