Wednesday 13 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২০১৮ সালে অবসর নেওয়া ১০ ক্রিকেটার


১ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:২২

।। মুশফিক পিয়াল, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ।।

চলে গেছে আরেকটি বছর। সদ্য বিদায়ী বছর ২০১৮ সালে ক্যারিয়ারের উচ্চ শিখরে থেকে অনেক বিশ্বসেরা ক্রিকেট তারকা বিদায় নিয়েছেন। আবার কোনো কোনো ক্রিকেটার জাতীয় দলে দীর্ঘদিন ব্রাত্য থেকে বিদায়ী সংবর্ধনাটাও পাননি। সারাবাংলা.নেটের নিয়মিত পাঠকদের জন্য ১০ ক্রিকেটার যারা ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক, ঘরোয়া ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন তাদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন রাখা হলো। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন কোন তারকা ক্রিকেটার ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

১। এবি ডি ভিলিয়ার্স: যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই এসেছিল ঘোষণাটা। হুট করেই এক ভিডিও বার্তায় এবি ডি ভিলিয়ার্স জানিয়ে দেন, দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে আর দেখা যাবে না তাকে। ৩৪ বছর বয়সে অবসর নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। ১১৪ টেস্ট, ২২৮ ওয়ানডে ও ৭৮ টি-টোয়েন্টির পর প্রোটিয়া এই তারকা ১৪ বছরের ক্যারিয়ারকে বিদায় জানিয়ে দেন। ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম বলে ৫০, ১০০, ও ১৫০ রানের রেকর্ড গড়েন ডি ভিলিয়ার্স। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্টে তার চেয়ে বেশি রান আছে তিন জনের, ওয়ানডেতে শুধু একজনের। তিন ফরম্যাটে ৪২০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ডি ভিলিয়ার্স করেছেন ২০ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান, যেখানে তার সেঞ্চুরির সংখ্যা ৪৭টি। তবে সংখ্যা দিয়ে তো আর তাকে মাপা যাবে না। ডি ভিলিয়ার্স স্মরণীয় হয়ে থাকবেন মাঠে তার সব উদ্ভাবনী শট ও অফুরান আনন্দের জন্য।

২। স্যার অ্যালিস্টার কুক: গত সেপ্টেম্বরে ওভালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুডবাই বলে দেন ইংলিশ সাবেক অধিনায়ক এবং ওপেনার অ্যালিস্টার কুক। তার আগে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট রান করেছেন কুক। ৩৩ বছর বয়সী এই ওপেনারের দখলে ১৬১ ম্যাচে ১২ হাজার ৪৭২ রান। টেস্টের লড়াইয়ে করেছেন ৩৩টি সেঞ্চুরি। নিজের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও খেলেছেন ৭১ আর ১৪৭ রানের ইনিংস। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষের আগে অধিনায়ক হিসেবে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচে (৫৯টি) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কুক। টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় শীর্ষে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার। ভারতীয় এই ব্যাটিং গ্রেট করেছেন ১৫ হাজার ৯২১ রান। দুইয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং করেছেন ১৩ হাজার ৩৭৮ রান, তিনে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস করেছেন ১৩ হাজার ২৮৯ রান, চারে থাকা ভারতের ব্যাটিং তারকা রাহুল দ্রাবিড় ক্যালিসের চেয়ে মাত্র ১ রান কম করেছেন। টেস্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় পাঁচে থেকে ক্যারিয়ার শেষ করেন অ্যালিস্টার কুক। যা টেস্ট ক্রিকেটে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান।

বিজ্ঞাপন

ওপেনার হিসেবে কুক ১১ হাজার ৮৪৫ রান করে দারুণ এক রেকর্ডের খাতায় নিজেকে উঁচু স্থানে রেখেছেন। ইংলিশদের হয়ে খেলেছেন ৯২টি ওয়ানডে এবং ৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। টেস্টে ৩৩টি সেঞ্চুরি আর ৫৭টি হাফ-সেঞ্চুরি করা এই ওপেনার ২০১৪ সালে ওয়ানডে ছাড়ার আগে করেছেন ৩২০৪ রান, যেখানে তার ৫টি সেঞ্চুরি আর ১৯টি হাফ-সেঞ্চুরি আছে। ইংলিশ ক্রিকেটার হিসেবে সবশেষ ২০০৭ সালে নাইটহুড পুরস্কার পেয়েছিলেন স্যার ইয়ান বোথাম। ১১ বছর পর প্রথম ইংলিশ ক্রিকেটার হিসেবে গত বছর নাইটহুড পান ২০০৬ সালের মার্চে ভারতের বিপক্ষে নাগপুরে টেস্ট অভিষেক হওয়া কুক। ইংল্যান্ড দলের জার্সিতে অসংখ্য রেকর্ড গড়া এই তারকার নামের আগে যুক্ত হয় ‘স্যার’। ইংলিশ ক্রিকেটে দারুণ অবদানের জন্য নাইটহুড উপাধি পান রানী এলিজাবেথের কাছ থেকে।

৩। গৌতম গম্ভীর: ২০১৯ আইপিএল নিলামের আগেই বাইশ গজকে বিদায় জানান ভারতের ওপেনার গৌতম গম্ভীর। ডিসেম্বরে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা দিয়ে টিম ইন্ডিয়ার এই ব্যাটসম্যান সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি জানান, ‘মনের ডাকে সাড়া দিলাম।’ ভারতীয় জাতীয় দলে ব্রাত্য গম্ভীর ফিরোজ শাহ কোটলায় রঞ্জি ট্রফিতে অন্ধপ্রদেশের বিপক্ষে তার শেষ প্রথমশ্রেণির ম্যাচ খেলেন। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন গম্ভীর। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে তার ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ৭৫ রান করেছিলেন। চার বছর পরে মুম্বাইয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে ৯৭ রান করেন। ওয়াংখেড়ের বাইশ গজে তার ৯৭ রানের দুরন্ত ইনিংস ২৮ বছর পর ভারতকে দ্বিতীয়বার ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ দেয়। দুটি বিশ্বকাপ শিরোপাই ওঠে মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে। গম্ভীর ভারতের হয়ে শেষ মাঠে নামেন ২০১৬ সালের নভেম্বরে, রাজকোটে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

বিশ্বের সেরা টেস্ট দলের সদস্য হওয়া, ২০০৯ সালে আইসিসির সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হওয়া গম্ভীর দেশের হয়ে ৫৮টি টেস্ট, ১৪৭টি ওয়ানডে এবং ৩৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে টেস্টে ৯টি আর ওয়ানডেতে ১১টি সেঞ্চুরি করেছেন। জাতীয় দলে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গম্ভীরের অভিষেক হয়েছিল ২০০৩ সালে, ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে। বাঁহাতি এই ওপেনার টেস্ট ক্রিকেটে ৪১৫৪, ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫২৩৮ এবং আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৯৩২ রান করেছেন। আইপিএলে কলকাতার সবচেয়ে সফল অধিনায়ক তিনি। ২০১২ এবং ২০১৪ সালে কলকাতাকে শিরোপা পাইয়ে দিয়েছেন। নিজের শেষ ম্যাচেও দারুণ ব্যাট করেছেন দিল্লির হয়ে খেলা গম্ভীর। প্রথম ইনিংসে তুলে নেন প্রথমশ্রেণির ম্যাচে নিজের ৪৩তম সেঞ্চুরি। সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো ৩৭ বছর বয়সী গম্ভীর প্রথমশ্রেণির ১৯৮ ম্যাচে ১৫ হাজারের ওপরে রান করেছেন। ৫০ ওভারের লিস্ট ’এ’ ম্যাচ খেলেছেন ২৯৯টি। যেখানে ২১ সেঞ্চুরি, ৬০ ফিফটিতে করেছেন ১০ হাজারের ওপরে রান।

৪। ডোয়াইন ব্রাভো: ২০১৮ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভো। ৩৫ বছর বয়সী এই তারকা জাতীয় দলের হয়ে আর না খেললেও খেলবেন বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট লিগে। সবশেষ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ম্যাচ খেলেছেন ব্রাভো। ২০০৪ সালের জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে ম্যারুন ক্যাপ মাথায় তুলেছিলেন ব্রাভো। টেস্টে ২০০৪ সালের জুলাইয়ে অভিষেক হলেও ব্রাভো তার আগেই জাতীয় দলের ওয়ানডে সদস্য হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। সে বছরের এপ্রিলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জর্জটাউনে তার ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু হয়। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অকল্যান্ডে খেলেছিলেন প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। সবশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। আর ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০১৪ সালের অক্টোবরে। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ব্রাভো।

ক্যারিবীয়ানদের হয়ে ৪০টি টেস্টে ২২০০ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ৮৬ উইকেট। আর ১৬৪ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৯৬৮ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ১৯৯ উইকেট। জাতীয় দলের জার্সিতে ৬৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১১৪২ রান করার পাশাপাশি নিয়েছেন ৫২ উইকেট। ব্রাভো সব ধরনের টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ৪১৯টি। যেখানে তার নামের পাশে রয়েছে ৬ হাজার ৮২ রান আর এই ফরম্যাটের সর্বোচ্চ ৪৬০টি উইকেট।

৫। রাজিন সালেহ: বাংলাদেশের এক সময়ের তারকা ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন রাজিন সালেহ। বাংলাদেশের জার্সিতে শেষ মাঠে নেমেছেন ২০০৮ সালে। এরপর থেকে ঘরোয়া লিগেই খেলছিলেন। ৩৫ বছরে পা রাখা রাজিন সালেহ গত ৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবেই জানিয়ে দেন অবসরে যাচ্ছেন তিনি। গত বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট ছিল সিলেটে। সেই টেস্ট দিয়ে অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে অভিষেক হয় সিলেটের। আর এই টেস্টে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটারদের। যেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজিনও। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে প্রেসবক্সে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দেন রাজিন।

আগামী ৫ নভেম্বর কক্সবাজারে জাতীয় লিগের ম্যাচ দিয়েই ক্যারিয়ারের ইতি টানেন রাজিন। তবে অবসরে গেলেও ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান। দেশের জার্সিতে ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সবমিলিয়ে ২৪ টেস্ট ও ৪৩ ওয়ানডেতে মাঠে নেমেছিলেন রাজিন। জাতীয় দলের জার্সিতে সবমিলিয়ে ২৪ টেস্টে ১ হাজার ১৪১ রান এবং ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে ৪৩ ম্যাচে ১টি শতকসহ ১ হাজার ৫ রান আছে রাজিনের।

৬। কেভিন পিটারসন: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিদায়টা ভালো ছিল না ইংল্যান্ড তারকা ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসনের। তার প্রজন্মের ক্রিকেটারদের মধ্যে ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন ইংলিশ দলের অন্যতম এই ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে বিদায় জানিয়েছিলেন অনেক আগেই। এরপর চালিয়ে যাচ্ছিলেন ঘরোয়া লিগের খেলা। গত মার্চে সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানান ৩৭ বছর বয়সী পিটারসন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ৩.৬৫ মিলিয়ন ফলোয়ারের সামনে মাত্র চার শব্দে জানান দেন, সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছেন এই ইংলিশ তারকা ব্যাটসম্যান। ২০০৪ সালের ২৮ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় তার। ২০০৫ সালের ২১ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হয় টেস্ট অভিষেক। ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্টে সর্বকালের পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী পিটারসেন। সব ধরনের ফরম্যাট মিলিয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক রানের মালিকও এই ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের হয়ে ১০৪ টেস্ট, ১৩৬ ওয়ানডে এবং ৩৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন পিটারসন। টেস্টে ৮ হাজার ১৮১ রান, ওয়ানডেতে ৪ হাজার ৪৪০ রান ও টি-টোয়েন্টিতে ১ হাজার ১৭৬ রান। সব মিলিয়ে ১৩ হাজার ৭৯৭ রান আছে তার ঝুলিতে। আর পুরো ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ৩০ হাজারেরও বেশি রান আছে ইংলিশ এই ব্যাটসম্যানের সংগ্রহে। কিন্তু, ২০১৩-১৪ অ্যাশেজে বাজে পারফরম্যান্সের পরই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে আর ফিরতে পারেননি।

৭। মিচেল জনসন: গত আগস্টে সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি ফাস্ট বোলার মিচেল জনসন। ৩৬ বছর বয়সী এই পেসার গত আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে সবশেষ ম্যাচ খেলেছেন। পিঠের ইনজুরি মুক্তি না দেওয়ায় তিনি ক্রিকেটকেই গুডবাই বলে দেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এই পেসার টেস্ট খেলেছেন ৭৩টি, ওয়ানডে খেলেছেন ১৫৩টি আর টি-টোয়েন্টিতে নেমেছিলেন ৩০ ম্যাচে। টেস্ট ক্যারিয়ারে নিয়েছেন ৩১৩ উইকেট, ওয়ানডেতে ২৩৯ উইকেট আর টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছিলেন ৩৮ উইকেট। ২০১৫ সালের নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ সাদা পোশাকে খেলেছিলেন। তার আগে একই বছরের মার্চে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন জনসন। ২০১৩ সালের আগস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন এই অজি পেসার।

৮। রঙ্গনা হেরাথ: ১৯ বছর আগে টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু করেছিলেন শ্রীলঙ্কান স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ। সেবার গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের জার্সিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল তার। গত নভেম্বরে সেই গলেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন লঙ্কান এই স্পিন গ্রেট। ক্যারিয়ার শেষের আগ পর্যন্ত টেস্ট ক্যারিয়ারে সবমিলিয়ে খেলেছেন ৯৩টি ম্যাচ। যেখানে ১৭০ ইনিংসে বল হাতে ৪৩৩ উইকেট শিকার করেছেন টেস্ট ইতিহাসে সফলতম এই স্পিনার। টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকাতে আছেন ৮ নম্বরে। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে ৩টি উইকেট নিয়ে কিংবদন্তি স্যার রিচার্ড হ্যাডলিকে (৪৩১ উইকেট, ১০ নম্বরে) ছাড়িয়ে যান হেরাথ। ইংল্যান্ড পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ৪৩৩ উইকেট নিয়ে আছেন ৯ নম্বরে। আর ভারতের কিংবদন্তি কপিল দেব ৪৩৪ উইকেট নিয়ে আছেন হেরাথের উপরে।

৯৩ টেস্টে ১৪৪ ইনিংসে ব্যাট হাতে ১ হাজার ৬৯৯ রান আছে হেরাথের সংগ্রহে। যেখানে ৩টি অর্ধশতক আছে তার। ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই ওয়ানডে অভিষেকের পর শেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সবমিলিয়ে ৭১টি ওয়ানডেতে বল হাতে ৭৪ উইকেট ও ব্যাট হাতে ১৪০ রান আছে তার সংগ্রহে। আর ২০১১ সালে সেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়ার পর ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন হেরাথ। সবমিলিয়ে ১৭ টি-টোয়েন্টিতে বল হাতে ১৮ উইকেট আছে তার ঝুলিতে। গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ইতিহাস শুরুর পর হেরাথ বিদায়ের মঞ্চ হিসেবে বেছে নেন সেই চেনা ভেন্যুকেই। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে গলে খেলতে নেমে অন্যরকম এক সেঞ্চুরি করেন হেরাথ। শেষ ম্যাচে সফরকারী অধিনায়ক জো রুটকে ম্যাচের ১৭তম ওভারে বোল্ড করেন হেরাথ। তাতেই ঢুকে যান নির্দিষ্ট কোনো ভেন্যুতে ১০০ উইকেট তুলে নেওয়ার রেকর্ডে। গল স্টেডিয়ামে হেরাথের উইকেট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় শতকে। তার আগে এমন কীর্তি গড়েছিলেন আরেক লঙ্কান গ্রেট স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং ইংল্যান্ডের পেসার জেমস অ্যান্ডারসর। সাদা পোশাকের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি মুরালিধরন তিনটি আলাদা স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচে উইকেটের সেঞ্চুরি করেছিলেন। এর মধ্যে আছে কলম্বোর সিংহলিজ স্টেডিয়াম, ক্যান্ডির আসগিরিয়া স্টেডিয়াম এবং গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। আর ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সাদা পোশাকে ১০০ উইকেট পেয়েছিলেন।

৯। মরনে মরকেল: গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার মরনে মরকেল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পর জাতীয় দলকে বিদায় জানান ৩৪ বছর বয়সী এই তারকা। প্রোটিয়া জার্সিতে তিনি ৮৬ টেস্টের পাশাপাশি খেলেছেন ১১৭টি ওয়ানডে। আর টি-টোয়েন্টিতে নেমেছেন ৪৪ ম্যাচে। প্রোটিয়া জার্সিতে মরকেলের ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০০৭ সালে, সেটি আবার বেঙ্গালুরুতে এশিয়া একাদশের বিপক্ষে। তার আগের বছর সাদা পোশাকে অভিষেক হয় বক্সিং ডে টেস্টে ভারতের বিপক্ষে। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছেন প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। জাতীয় দলের জার্সিতে টেস্টে ৩০৯, ওয়ানডেতে ১৮৮ আর টি-টোয়েন্টিতে ৪৭ উইকেট নিয়েছেন মরকেল।

১০। মোহাম্মদ কাইফ: ২০০২ সালের ১৩ জুলাই লর্ডসের মাঠে ভারতকে জেতানোর পর লর্ডসের বারান্দায় জার্সি খুলে মাথার উপর ঘুরাচ্ছেন সৌরভ গাঙ্গুলি আর মাঠে জয়োল্লাস করছেন মোহাম্মদ কাইফ, যুবরাজ সিং, জহির খান ও বিরেন্দর শেওয়াগরা। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত সেই দৃশ্যের প্রধান নায়ক মোহাম্মদ কাইফ। সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে সেই ম্যাচে অনেকটা পিছিয়ে থেকেও ভারতকে জেতান কাইফ। ২০০৬ সালে জাতীয় দলের হয়ে সবশেষ ম্যাচ খেলা ভারতীয় এই ব্যাটসম্যান ২০১৮ সালে সবধরনের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন। জাতীয় দলে সর্বশেষ খেলার পরও ১২ বছর ঘরোয়া পর্যায়ে খেলেছেন ৩৭ বছর বয়সী কাইফ। অবসর নেয়ার জন্য কাইফ এমন একটি দিনকেই বেছে নিলেন, ১৬ বছর আগের যে দিনে তিনি লর্ডসে ভারতকে আনন্দে ভাসিয়েছিলেন।

নিজের বিদায়ের কথা জানাতে গিয়ে টুইটারে কাইফ লিখেছিলেন, ‘যখন থেকে ক্রিকেট খেলতে শুরু করি, তখনই স্বপ্ন ছিল একদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলার, জাতীয় দলের ক্যাপ মাথায় দেয়ার। আমি সৌভাগ্যবান যে, আমি তা পেরেছি। আমার জীবনের ১৯০ দিন আমি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছি। সঠিক সময়েই ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে পারায় সবাইকে ধন্যবাদ। লর্ডসে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জেতার ১৬ বছর হয়ে গেল। আমার মনে হয় আজই অবসর নেয়ার সঠিক সময়। আমি দেশের হয়ে ১২৫টি ওয়ানডে এবং ১৩টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবি।’

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজারের বেশি রান করেছেন কাইফ। ঘরোয়া পর্যায়ে খেলেছেন উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের হয়ে। এছাড়া কাউন্টি ক্রিকেটেও খেলেছেন তিনি।

সারাবাংলা/এমআরপি

২০১৮ ক্রিকেট ডি ভিলিয়ার্স রাজিন সালেহ স্পোর্টস স্পেশাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর