Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আশরাফুল তো দৃষ্টান্তই স্থাপন করতে চান


২ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:৪৬

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিপিএলে ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে প্রথমে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন লাল সবুজের ‘মোস্ট ট্যালেন্টেড‘ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আশরাফুল। এর মধ্যে স্থগিত নিষেধাজ্ঞা ছিল তিন বছরের। আপিলের পর শাস্তিটা কমে হলো দুই বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ ৫ বছর। বিপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আশরাফুল খেলায় ফিরেছেন ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট।

কিন্তু তার সবগুলোই ছিল ঘরোয়া ক্রিকেট। জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল), বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল), ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) ক্রিকেট খেলেই তাকে তুষ্ট থাকতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও বিপিএলে তার পা শেকলবদ্ধই ছিল। সদ্য বিদায়ী বছরের ১৩ আগস্ট সেই শেকল থেকে অবমুক্ত হয়ে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন এক সময়ের সর্বকণিষ্ঠ এই টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান।

পুরো ৫ বছর ৯ মাস টি-টোয়েন্টি থেকে বঞ্চিত ছিলেন অ্যাশ। নির্বাসনের লম্বা এই সময়ে দিন গুণেছেন কবে শেষ হবে? কবে আবার ব্যাট হাতে রানের ঝংকার তুলবেন? অবশ্য সেই দু:সময় ইতোমধ্যেই পেছনে ফেলে এসেছেন সাবেক এই টাইগার দলপতি। সবকিছু ঠিক থাকলে ৫ জানুয়ারি চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে বিপিএল দিয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নামবেন।

কিন্তু তার ফেরাটা কতটা বর্ণিল হবে? পারবেন তো? নির্বাসনের সুদীর্ঘ সময়টিতে টি-টোয়েন্টি ভুলে যাননি তো? না, কিছুই ভোলেননি আশরাফুল। সবই তার নখোদর্পণে আছে। তার প্রমাণ তিনি বিপিএলেই দেবেন। আর প্রমাণ করবেন নিষিদ্ধ থেকেও তিনি ক্রিকেট ভুলে যাননি। উদাহারণ তৈরি করবেন, মাঠে নির্বাসনে থাকলেও তার ক্রিকেটীয় প্রতিভা নির্বাসনে যায়নি। এই বিপিএলে পারফর্ম করেই আবার জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়বেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২ জানুয়ারি) মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে দলের অনুশীলন শেষে সংবাদ মাধ্যমকে সেকথাই জানালেন আশরাফুল। জানিয়েছেন আরো বেশ কয়েকটি বিষয়। সারাবাংলার পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো।

*** পাঁচ বছর পর ফিরে আসা বিপিএলের জার্সি আপনার গায়ে। সবকিছু মিলে কেমন লাগছে?
আশরাফুল: আসলে খুবই ভালো লাগছে। গত দুই বছর প্রথমশ্রেণি এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পেরেছিলাম। কিন্তু এই খেলাগুলো আসলে সম্প্রচার হয় না। এই বিপিএলটি একটি আন্তর্জাতিকমানের টুর্নামেন্ট। এখানে খেলতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। আর যেহেতু আমি খেলাটি জানি এবং আমার অভিজ্ঞতা আছে সুতরাং চেষ্টা করবো সুযোগ পেলে ভালো খেলার।

*** প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা শেষে আপনি বিসিএল খেলেছেন, এনসিএল খেলেছেন। কিন্তু বিপিএল অন্যমানের ক্রিকেট। এখানে মানিয়ে নেয়াটা কত কঠিন? কেমন চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
আশরাফুল: অবশ্যই চ্যালেঞ্জের হবে। যেটি বললাম যে এটি একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, এখানে ভালো খেললে কাউন্ট হয়। আমার যেহেতু অভিজ্ঞতা আছে, আমি ১৩ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি এবং প্রথম দুই আসর বিপিএলে খেলেছিলাম। সেখানে চ্যাম্পিয়ন দলের অংশ ছিলাম এবং ভালো খেলেছিলাম। চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে এবারও ভালো খেলার চেষ্টা করবো। দলটিও যেন ফলাফল পায় আমার পারফর্মেন্সের মাধ্যমে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।

*** আপনার নামের পাশে যে কলঙ্কটা লেগেছে সেটা বিপিএল থেকেই। এখন কি সেই কলঙ্ক মোচনের দায় আপনার আছে?
আশরাফুল: আমি যে অন্যায় করেছিলাম তার শাস্তি আমি পেয়েছি এবং সেটার কারণে কিন্তু আমি ৫ বছর ৯ মাস বাইরে ছিলাম এই ফরম্যাট থেকে। যেহেতু আমি অন্যায় স্বীকার করেছি এবং প্রায়শ্চিত্ত পেয়েছি এবং গত দুটি বছর আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি। মোটামুটি ভালো ক্রিকেট খেলেছি, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বলেন, বিসিএলের এই মৌসুমটি ভালো হয়েছে। আমি চেষ্টা করবো কারণ আমার যারা ভক্ত আছেন তারা সকলেই অপেক্ষায় আছেন যেন আমি আবার ফিরে আসতে পারি। তাদের জন্য হলেও চেষ্টা করবো এই বিপিএলে ভালো খেলতে। ক্রিকেটের জন্য ফিরে আসতে পারি, এটা একটি উদাহরণ তৈরি হবে। দীর্ঘ সময় বাইরে থেকেও আবার পারফর্মেন্স দিয়ে ফিরে আসাটা এটাও একটা চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি।

বিজ্ঞাপন

*** আপনাকে দেখলাম অনুশীলনে এসে তাকিয়ে ছিলেন। মনে হচ্ছিলো দারুণ উচ্ছ্বসিত। এভাবে আপনাকে আগে দেখা যায়নি। এই অনুভূতিটা কেমন? নিশ্চয়ই এই সময়ের জন্য অনেকদিন ধরে স্বপ্ন দেখে আসছেন।
আশরাফুল: এটা তো অবশ্যই। আসলে সবকিছুরই অভিজ্ঞতা হয়েছে। বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় টেস্ট থেকেই দলে ছিলাম। গত পাঁচ বছর বাইরে ছিলাম। যদিও আমার এখানে (মিরপুর) আসার অনুমতি ছিল নিয়মিত। তবে এরপরেও আমি অনুশীলন পর্বটি আমার বাসার ওখানেই করতাম। এত দূর আসতাম না। গত দুই বছর আমি জাতীয় লিগ, ঢাকা লিগ, বিসিএলে খেলেছি। তবে এই ফরম্যাটগুলো ভিন্ন ছিল। আর এই ফরম্যাটটি (বিপিএল) এখানে সম্প্রচার হয়, ফোকাস হয়, পারফর্মেন্সটি কাউন্ট হয়। সবগুলো পারফর্মেন্সই গণ্য করা হয়, তবে এটি একটু আলাদাভাবে হয়। একজন ক্রিকেটারের যে স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলা, সেটার জন্য আসলে এটি অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম। আমি আসলে এর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম গত পাঁচটি বছর।

*** এতদিন পর আবার টি-টোয়েন্টির এই পরিবেশে এসেছেন, এত বড় ফোকাস পাচ্ছেন। পুনর্জন্ম হচ্ছে মনে হয়?
আশরাফুল: আমি যখন জাতীয় লিগে খেলেছি তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আসার পর তখনই আমার আলাদা একটি অনুভূতি হয়েছে। যাদের সাথে খেলতাম তিন বছর পর আবারও তাদের সাথে জাতীয় লিগে খেলেছি। কিন্তু এই ফরম্যাটটিতে খেলা হয়নি পাঁচ বছর। অবশ্যই অন্যরকম একটি অনুভূতি হচ্ছে। আমি প্রত্যেকটি মুহূর্ত উপভোগ করার চেষ্টা করছি। এই ধরণের ফরম্যাট এবং পরিস্থিতিতে খেলার অভিজ্ঞতা আমার আগেও ছিল। এমন না যে আমার আজকে নতুন হচ্ছে। এই কারণে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তাভাবনা করছি।

*** বিপিএলে আপনার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। একই সাথে এই টুর্নামেন্টের সঙ্গে অনেক সিনিয়ররা সম্পৃক্ত। টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে অনেক সময় খালেদ মাহমুদ সুজন কাজ করেছেন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু আপনার দল চিটাগং ভাইকিংসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের সাথে আপনার আপনার আলোচনা হয়েছে?
আশরাফুল: আমি যখন প্রিমিয়ার লিগে খেলি তখন আমার প্রথম অধিনায়ক ছিলেন নান্নু ভাই। প্রথমশ্রেণির ক্রিকেটে আমার অধিনায়ক ছিলেন সুজন ভাই। আর মুশফিকের যখন অভিষেক হলো তখন আমি বাংলাদেশ দলের নিয়মিত সদস্য ছিলাম। একসাথে আমরা খেলতে পারছি, ভালো লাগছে। আলোচনা সেভাবে হয়নি। কারণ চিটাগাং ভাইকিংসের সবার সাথে আজকেই সাক্ষাৎ হলো এবং অনুশীলন করছি। সামনের সময়গুলোতে হয়তো আমরা আরও আলোচনা করবো।

*** আপনার উপর থেকে সবগুলো নিষেধাজ্ঞাই উঠে গেছে এবং তিনবছর যাবত আপনি খেলছেন। আপনার কী মনে হয় বিপিএলে ফেরার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়া পরিপূর্ণতা পেল?
আশরাফুল: হ্যাঁ, এটি সত্যি কথা যে স্বপ্নটা দেখছি বাংলাদেশ দলের জার্সিটি আবারো পড়তে চাই, সেটার জন্য সবথেকে বড় প্ল্যাটফর্ম এটি, আমি আগে থেকেই জানি এটি এবং সবাই জানে। আমি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছি কিন্তু কেউ খেলা দেখেনি, শুধু স্কোরগুলো দেখেছে। আমার খেলার স্টাইল অনেক পরিবর্তন হয়েছে, আমি যখন খেলা শুরু করেছিলাম তখন কিন্তু এখন যে স্টাইলটি চলছে সেভাবে খেলতাম। এই কারণে আমার একটি জায়গা দরকার ছিল, যেখানে আমি মনে করি যে সুযোগ পেলে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পারবো। যেই প্ল্যাটফর্মটি আমার দরকার ছিল, পাঁচ বছর পর আমি পেয়েছি। যদি আমি সুযোগ পাই তাহলে আমার পারফর্মেন্স দিয়ে চেষ্টা করবো ভালো করার।

*** আপনার দল কিংবা অন্য দলের সদস্য যারা আপনার সঙ্গে জাতীয় দলে খেলেছে তারা সবাই আপনাকে কেমন স্বাগত জানিয়েছে?
আশরাফুল: সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক আছে আল্লাহর রহমতে। এখন শুধু পারফর্মেন্সের জন্য অপেক্ষা করছি।

*** ক্যারিয়ারের এই বয়সে এসে কত বছর পর্যন্ত ক্রিকেট খেলবেন এবং বিশ্বকাপের আগে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
আশরাফুল: যেহেতু আমি একজন ব্যাটসম্যান, সুতরাং আমি যদি ফিট থাকতে পারি, বিশ্বাস করি আরও চার-পাঁচ বছর খেলতে পারবো ইনশাল্লাহ। আপনি যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দেখেন তাহলে দেখবেন অনেকেই আছেন এমন। সেটা নির্ভর করবে ফিটনেসের ওপরে। গত দুই বছরের থেকে আমি নিজেকে অনেক ফিট মনে করছি সবকিছুর দিক দিয়েই। ফিটনেস এবং পারফর্মেন্স ঠিক থাকলে যতো লম্বা সময় খেলা যায়। আর বাংলাদেশ দলে তো অবশ্যই খেলতে চাই। কারণ তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছি বাংলাদেশের হয়ে ২০০৩, ২০০৭ এবং ২০১১ সালে। ২০১৫ সালে নিষেধাজ্ঞা না থাকলে হয়তো তখন সুযোগ পেতে পারতাম। সামনে যেহেতু ২০১৯ বিশ্বকাপ রয়েছে, যদিও আমি সেটি নিয়ে চিন্তা করছি না। তার পরেও আমি মনে করি যে আমি যদি ভালো পারফর্মেন্স করতে পারলে আমার অভিজ্ঞতাগুলো নির্বাচকরা কাউন্ট করতে পারে।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি

আশরাফুল চিটাগং ভাইকিংস বিপিএল ২০১৯

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর