।। জাহিদ-ই-হাসান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দেশের ক্রিকেটে মাস গেলেই বিসিবি থেকে একটা নির্দিষ্ট অংকের পারিশ্রমিক পাচ্ছে ‘তালিকাভুক্ত’ ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটে বেতন কাঠামো আছে। তারই ভিত্তিতে সাকিব-মাশরাফিরা মাস শেষে বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু দেশের ফুটবলে দৃশ্যটা পুরোটাই ভিন্ন।
লাল-সবুজ জার্সিধারীদের নেই কোনো পারিশ্রমিক! অর্থাৎ জামাল ভুঁইয়া-সুফিল-ইমনদের কোনো বেতন দেয়া হয় না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে। নেই কোনো বেতন কাঠামো। শুধু ম্যাচ ফি’র উপরে নির্ভর থাকতে হয় সব ফুটবলারদের।
কিন্তু দেশের আরেক জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের শ্রেণি অনুযায়ী মাসিক বেতন দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। পাঁচটি ক্যাটাগরিতে (এ+, এ, বি, সি ও ডি) সাকিব-তামিমদের বেতন দেয়া হয়। সর্বোচ্চ ৪ লাখ থেকে সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা করে মাসিক বেতন পাচ্ছেন খেলোয়াড়রা। প্রতি বছর চুক্তির আওতায় কেউ ক্যাটাগরিতে ঢুকছেন আবার কেউ চুক্তি থেকে বাদ পড়ছেন। এখানে আছে প্রণোদনার সুযোগও।
যদিও টাকা কম কি বেশি সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে। কিন্তু এটা বাস্তবতা যে ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের মাস গেলে অন্তত একটা আর্থিক যোগান মিলছে। সেখানে জাতীয় ফুটবলারদের এমন কোনো বেতন কাঠামোই নেই। খেলোয়াড়রা বলতে গেলে ‘বেতনহীন’ লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চাপিয়ে খেলার জন্য উন্মুখ থাকে যেখানে কোচ থেকে কর্মকর্তা সবারই নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো আছে।
কঠিন বাস্তবতা হলো- দেশের জাতীয় ফুটবলারদের অর্থের একমাত্র উৎস হলো ক্লাব। নিম্ন স্তরের ফুটবলাররা না হয় ইনজুরির কথা মাথায় রেখে পেটের দায়ে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে খ্যাপ খেলে ঘর চালান। কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ে খ্যাপ খেলার বাধ্যবাধকতা আছে। ক্লাব যা দিবে তাই নিয়েই পেট চালাতে হয় ফুটবলারদের। আর যখন লাল-সবুজ জার্সিতে ডাক পড়ে তখনই ছুটে যান ক্যাম্পে। দুয়েক মাসের সেই ক্যাম্পে প্রণোদনার জন্য দিন চলার মতো পারিশ্রমিক দিয়ে থাকে ফেডারেশন। পরিমাণে যা খুবই কম। আর ম্যাচ ফি’ও খুব কম। পুরো বছরে কয়টাই বা ম্যাচ হয় বাংলাদেশের! বেশি হলে পাঁচটা।
এ নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ আছে জাতীয় ফুটবলারদের। জাতীয় দলে খেলেন এমন কয়েকজন ফুটবলারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে সারাবাংলার। তাদের বেশিরভাগের মন্তব্য এমন-‘জার্সি পড়ে খেলি এটাই বড় পাওয়া। এমনিতেই ম্যাচ কম হয়।’ কোনো বেতন কাঠামো না থাকার বিষয়টি নিয়ে একটু আক্ষেপ আছে অনেকের। ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের দিতে পারলে ফুটবলাররা বঞ্চিত হয় কিনা প্রশ্ন করলে বসুন্ধরা কিংসের তারকা ফুটবলার ইমন মাহমুদ বাবুর কথায়, ‘বঞ্চিত বলা যায়। ক্রিকেটে পায়। আমাদের তো কোনো বেতন কাঠামোই নেই। কাঠামো থাকলে ভালো হতো।’
এ নিয়ে ফেডারেশন কাপ চলাকালীন দেশসেরা তারকা ফুটবলার জামাল ভুঁইয়া একবার বলেছিলেন, ক্লাবে খেলতে ভালো লাগে কারণ ক্লাব তাদের বেতন দেয়। দিনশেষে আর্থিক নিরাপত্তা বলে একটা বিষয় আছে।
বেতন কাঠামো নিয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ সারাবাংলাকে জানান, ‘কোনো দেশেই জাতীয় ফুটবলারদের বেতন নেই। তাদের আয়ের উৎস ক্লাব। তার উপরেই নির্ভর করতে হয়। তাছাড়া ক্যাম্পে থাকাকালীন তাদের হাতখরচের কিছু টাকা দেয়া হয়। ম্যাচ ফি তো আছেই।’ এমন বেতন কাঠামোয় কখনও যাবে না বাফুফে এমনটা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ক্রিকেটারদের বছরজুড়ে নানান টুর্নামেন্টে বা লিগে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে আর্থিক লগ্নির সুযোগ থাকলেও ফুটবলাররা চেয়ে থাকেন শুধু ক্লাবের দিকেই। তাই দলবদলের বাজারে ফুটবলারদের দাম প্রত্যাশার চেয়ে বেড়ে যায় সহসাই। বাফুফের ফুটবলারদের জন্য বেতন কাঠামো না থাকায় দেশের ফুটবলারদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে ঘুরে ফিরে।
সারাবাংলা/জেএইচ/এমআরপি