অপেক্ষার প্রহর ফুরাবে কবে?
১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:১৮
।।জাহিদ-ই-হাসান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকাঃ ফুটবল বিশ্বকাপ তো বাদের ঘরে। সে অনেক দূর! স্বপ্নেও কেউ ভাবার সাহস করবেন না হয়তো। ভাববেনও বা কিভাবে? বাংলাদেশ যে দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরোতেই হাফিয়ে উঠছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও এএফসি পর্যায়ে বলার মতো কোন সাফল্য নেই লাল-সবুজদের।‘‘সর্বশেষ ১৯৮০ সালে শুধু একবার এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলেছিল বাংলাদেশ।’’
তারপর কেটে গেছে ৩৮টি বছর। এশিয়ান পর্যায়ের সর্বোচ্চ আসরের মূলপর্বের টিকিট নিশ্চিত করতে পারে নি ১৬ কোটি মানুষের দেশটি। সময়ের পরিক্রমায় র্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে দেশ। অন্যদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্ররা এগিয়ে গেছে সমান তালে। বিশ্বকাপের স্বপ্নে বিভোর সেই রাষ্ট্রগুলো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় এখন এএফসি এশিয়ান কাপেও আধিপত্য বজায় রাখছে।
সেখানে এশিয়ান পর্যায়তো দূরে থাক, দক্ষিণ এশিয়ায় রাজত্ব হারিয়ে গদি খোঁজার লড়াইয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি নিয়মিত। নেপাল-মালদ্বীপ-শ্রীলঙ্কানরা এখন বিভীষিকার নাম হয়ে গেছে দেশের জন্য। সর্বশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বাংলাদেশ জিতেছে ২০০৩ সালে। আজ থেকে ১৫ বছর আগে গেলবার তো গ্রুপ পর্বেই বাদ!
‘২০২২ সালে বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ’ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি হওয়ার পর এমন কথা জানিয়ে রীতিমত তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন কাজী সালাউদ্দীন। বিশ্বকাপ তো দূরের কথা। সাফ-এএফসি পর্যায়ে কি করছে বাংলাদেশ?
এএফসি এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের রেকর্ডঃ
সেই একবারই ১৯৮০ সালে কুয়েতে অনুষ্ঠিত এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলেছিল বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে লাল-সবুজরা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিল প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন ইরান, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া এবং চায়নাকে। এশিয়ান কাপে যেখানে গল্পের শুরু সেখানেই রীতিমত কবর হয়েছে বাংলাদেশের। উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে ৩-২, সিরিয়ার বিপক্ষে ১-০, ইরানের বিপক্ষে ৭-০ এবং চায়নার বিপক্ষে ৬-০ এর বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়। পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকে বিদায় নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে ১৫ গোল হজমের অভিজ্ঞতা নিয়ে।
১৯৮৪ এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে এক সান্ত্বনার জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ফিলিপাইনের বিপক্ষে ৩-২ এর জয় ছাড়া বাকী সবগুলো ম্যাচ হারের স্বাদ নিয়েই বিদায় নিতে হয়েছে বাছাইপর্বেই। লাল-সবুজরা হেরেছে ইরান, সিরিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে।
নিয়তির কী নিষ্ঠুর বাস্তবতা দেখেন। সেই ইরান, থাইল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো এখন এএফসি এশিয়ান কাপের মূল মঞ্চে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর দূরদর্শিতার অভাবে পিছিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল।
কুয়েতের সেই এশিয়ান কাপের (১৯৮০) এই পর্বই বলতে গেলে দেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য। সিঁড়ি বেয়ে আর ওঠা হয় নি কখনও। কালক্রমে ‘সিঁড়িটা ঝাপসা হয়ে গেছে দেশের জন্য।’
এক নজরে এএফসি এশিয়ান কাপঃ
বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল এই সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে-
১৯৮০: রাউন্ড-১ থেকে বিদায়
১৯৮৪ থেকে ১৯৯২: যোগ্যতা অর্জন করেনি।
১৯৯৬: প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ
২০০০ থেকে ২০১১: যোগ্যতা অর্জন করেনি
২০১৪: বাছাইপর্ব থেকে বিদায়
২০১৯: যোগ্যতা অর্জন করেনি
এশিয়ান কাপে না হলেও এশিয়ান গেমসে নকআউট পর্বে প্রথমবারের মতো উত্তীর্ণ হয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ প্রধান কোচ জেমি ডে’র হাত ধরে। অবশ্য টুর্নামেন্টটি ছিল অনূর্ধ্ব-২৩ দলের। জাতীয় দলের এখনও পর্যন্ত সাফল্যের গণ্ডি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। সেটাও অধরা ১৫ বছর ধরে।
এএফসি এশিয়ান কাপ এশিয়ান পর্যায়ে সর্বোচ্চ শিরোপার লড়াই। সে দৌড়ে আসতে হলে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে লাল-সবুজদের। সেখানে সাফ গেমসে আধিপত্য বজায় রেখে এশিয়ান কাপের জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে দূরদর্শী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। দেশের বয়সভিত্তিক বা তৃণমূল ফুটবলে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। সেটাও কি ঠিকমতো করতে পারছে বাংলাদেশ?
এশিয়ান কাপ যে ‘সোনার হরিণে’ পরিণত হয়েছে দেশের জন্য। ‘এ টুর্নামেন্টকে কি কোন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আছে’ এমন প্রশ্নে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ সারাবাংলাকে জানালেন আশ্বাসের পুরনো গল্পই, ‘আমাদের এবার বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব আছে। এশিয়ান পর্যায়ে সাফল্য আনতে বাছাইপর্বগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিবো। দলকে উন্নত ক্যাম্প দিয়ে প্রস্তুতি নিবো। যুব পর্যায়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
বাফুফের টার্গেট থাকলেও সেই অনুযায়ী পরিকল্পনার প্রতিফলন মিলে না। কোচ আসা-যাওয়ার দৌড়ে থাকে দেশ। কোন কোচই ঠিক মতো টিকতে পারে না এ দেশে। পাইপলাইন সংকট হয় ১৬ কোটি মানুষের দেশে। ‘যোগ্য কোচের’ অভাবও লক্ষ্যণীয়। সে দেশে এশিয়ান কাপতো ‘সোনার হরিণ’ হবেই! এই অপেক্ষার প্রহর ফুরাবে কবে?
সারাবাংলা/জেএইচ