Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বপ্নের বাড়ি আর মাঠে ফেরার লড়াইয়ে চামেলী


১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ১৫:৪৩

।। সুমন মুহাম্মদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

স্বপ্ন ছিল সুন্দর একটা বাড়ি হবে। সেখানে থাকবেন বাবা-মা পরিবার পরিজন নিয়ে। এমন কল্পনা বুকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্ত হঠাৎ এক বিকেলে সেই স্বপ্নে ভাঙ্গন ধরে। পায়ের লিগামেন্ট ছিড়ে যাবার কারণে যেমন মাঠে ফেরা হয়নি। তেমনি সুন্দর একটি বাড়ি তৈরির স্বপ্নও খান খান হয়ে যায়। আনসার ভিডিপিতে চাকরির টাকা দিয়ে যেখানে সংসার চালানো দায়। সেখানে ইট কংক্রিটের বাড়ি নির্মাণতো অনেকটাই দু:স্বপ্ন। আর এই দু:স্বপ্নের মধ্যে দিন কাটছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অলরাউন্ডার চামেলী খাতুনের।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহীর দরগাপাড়ায় বাবার বাড়িটি কতদিন যে সংস্কার হয়নি তা ঠিক করে বলাই কঠিন। ইটের দেয়ালের প্লাস্টারগুলো খসে খসে পড়ছে। মাথার উপরের টালির ছাদের অবস্থাও করুণ। বর্ষাকালে পানি পড়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে। আর শীতে পরিস্থিতি হয় আরো ভয়াবহ। স্যাত স্যাতে ভাব আর গুমোট গন্ধ জীবনকে করে তোলে আরো দুর্বিসহ। বাড়িটি এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমন একটা পরিবেশে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে থাকতে হচ্ছে এই নারী ক্রিকেটারকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা শেষে এই বাড়িতেই রয়েছেন চামেলী। তবে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে এমন পরিবেশ বেষ্টিত বাড়িতে তিনি আসলে কতটুকু সুস্থ হতে পারবেন। যেখানে তিনি দ্রুত সুস্থ হবার জন্য সংগ্রাম করছেন, সেখানে আশাহত হচ্ছেন পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে।

ভারত থেকে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে আসার পর মাঝে মধ্যেই অসুস্থ থাকছেন। তাই তার দ্রুত সুস্থ হবার পাশাপাশি মাঠে নামার বিষয়টি কপালে ভাঁজ ফেলেছে। তার অসুস্থতার খবর বিভিন্ন গনমাধ্যমে আসার পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাকে দেখতে আসেন এবং বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন।

বিজ্ঞাপন

মেয়র লিটন চামেলীকে দেখতে এসে সেদিন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, চামেলী ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম, তারা অর্থ সংকটে রয়েছেন। তার চিকিৎসার পুরোপুরি ব্যয়ভার মেটাতে যা করা দরকার তা করা হবে। সেই সাথে সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। আর জরাজীর্ণ যে বাড়িতে তারা বসবাস করছেন, সেটি নিয়েও ভাবছি কি করা যায়।

এমন সব পরিস্থিতির মধ্যেও মাঠে ফেরার স্বপ্নে বিভোর ক্রিকেটার চামেলী খাতুন। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ফের দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের এই সাবেক অলরাউন্ডার। তার আশা একদিন লাল-সবুজ জার্সি পরে মাঠ মাতানোর সুযোগ পাবেন তিনি। ভারত থেকে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে দ্রুত সুস্থ হবার চেষ্টা চলছে তার। লিগামেন্টের ইনজুরি তাকে ক্রিকেট জগৎ থেকে ছিটকে দিতে চাইলেও চিকিৎসার পর মনে সাহস পাচ্ছেন। ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর বেসরকারি স্পর্শ অর্থপেডিক হাসপাতালের ডা. ডা. প্রশান্ত তেজওয়ানির দেয়া চিকিৎসাপত্র অনুয়ায়ি চলছে চামেলীর সকল কার্যক্রম। তবে শরীরচর্চার বিষয়ে তাকে যে পরামর্শ দেয়া হয়েছে তা করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ রাজশাহীতে নেই। তা রয়েছে কেবল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জিমে। ফলে শরীর চর্চা প্রয়োজনমাফিক হচ্ছে না।

এর পরেও থেমে নেই চামেলী। তার সুস্থ হয়ে উঠার দিকে তাকিয়ে আছে তার পরিবারের সদস্যরাও। কারণ পরিবারের পুরো দায়িত্ব তার কাঁধে। দীর্ঘদিন থেকে পরিবারের সদস্যদের সার্বিক ব্যয় বহন করে চলেছেন তিনি। তাই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পারলে বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।

২০১১ সালে চামেলীর পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে অবস্থান করছিলেন দরগাপাড়ার জরাজীর্ণ বাড়িতে। এ সময় তার চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাধনমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি গত ২ নভেম্বর রাজশাহী থেকে ঢাকায় নিয়ে ভর্তি করা হয় জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে)। সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় ভারতে। গত ২৩ নভেম্বর চিকিৎসার জন্য ভারতের ব্যাঙ্গালুরু যান। প্রায় আড়াই সপ্তাহ ধরে চলা চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরেন।

কথা হয় চমেলীর সাথে। তিনি জানান, আসলে পারিপার্শিক নানা প্রতিবন্ধকতা তার দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারপরেও তিনি থেমে নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ি যতটুকু সম্ভব নিজেকে সারিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছেন। স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণের ব্যাপারে তিনি বলেন, জাতীয় দলে খেলার সময় দেশের অন্যান্য খেলোয়াড়দের মতোই বুকে লালন করছিলেন নিজের মাথা গোঁজার ঠাইটুকু করতে পারবেন। সেই পথে হাঁটছিলেন। কিন্ত মাঝপথে লিগামেন্ট ছিড়ে যাবার কারণে চিকিৎসা খরচ আর পরিবার পরিজনদের ব্যয়ভার বহন করতেই হিমশিম খেতে হয়। দীর্ঘ আট বছর মাঠের বাইরে। আনসার ভিডিপির মাসিক বেতন দিয়ে চলে তার পরিবারের খরচ। তিনি বলেন, অসুস্থতার খবর পেয়ে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দেখতে এসে বাড়ি নির্মাণের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বর্তমানে তার চিকিৎসা ব্যয় চলছে প্রধানমন্ত্রীর অর্থায়নে। গত ১৯ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রাধনমন্ত্রীর দেয়া ৫ লাখ টাকার চেক পেয়েছেন।

স্পর্শ হাসপাতালের অর্থপেডিকের ডা. প্রশান্ত তেজওয়ানির বরাত দিয়ে চামেলী জানান, পুরোপরি সুস্থ হয়ে উঠতে কমপক্ষে এক বছর লাগবে। তারপর মাঠে নামার ক্ষেত্রটি অনেকটাই সহজ হবে। আগামী মার্চ মাসের দিকে আবারো তাকে চেকআপের জন্য ভারতের এই হাসপাতালে যাবার পরামর্শ দেয়া আছে।

বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের হয়ে ১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত মাঠ মাতিয়েছেন চামেলী খাতুন। ২০১০ সালের এশিয়া কাপের রানারআপ হওয়া দলের সদস্য এই দাপুটে ক্রিকেটার। এর বাইরে ঢাকা বিভাগে খেলেছেন টানা চার বছর। দুই মৌসুম শেখ জামালের ক্যাপ্টেন হিসেবে সামনে থেকে টেনে নিয়ে গেছেন দলকে। সেই তিনিই পরাস্ত হন ইনজুরিতে। এখন তার চিকিৎসা চলছে।

সারাবাংলা/এসএম/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর