Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইপিএলের চেয়ে বিপিএল কোনো অংশে কম নয়: ফ্রাইলিঙ্ক


১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ১৯:১৯

।। মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিপিএলে এবারই প্রথম হলেও আইপিএলের অভিজ্ঞতা বেশ ভালোই আছে প্রোটিয়া অলরাউন্ডার রবি ফ্রাইলিঙ্কের। পার্থক্য একটিই। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে ডাক পেয়েও মাঠে নামা হয়নি। পক্ষান্তরে চিটাগং ভাইকিংসে তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সেই শেষ চারের স্বপ্ন বুনছে বন্দরনগরীর দলটি। তবে আইপিএলে মাঠে না নামলেও দিল্লির অনুশীলন, টিম হোটেল এবং ডাগ আউটে টিমের সঙ্গে তার যে অভিজ্ঞতা সেটা দুর্লভ। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ফ্রাইলিঙ্ক জানালেন- গুণগতমান বিবেচনায় আইপিএলের চেয়ে বিপিএল কোনো অংশেই কম নয়।

বিজ্ঞাপন

বিপিএলে পয়েন্ট টেবিলে চিটাগং ভাইকিংস আপাতত যে দাপুটে স্থানে (২) আছে তাতে তার অবদান অগ্রগণ্য। ঢাকা পর্বে ভাইকিংসদের খেলা মোট চার ম্যাচের তিনটিতেই হয়েছেন প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ। বিপিএলের ইতিহাসে প্রথমবার যে সুপার ওভার হলো সেখানে বল হাতে তিনিই খুলনা টাইটান্স বধের নায়ক।

জীবনের ৩৪টি বসন্তু পার করা ফ্রাইলিঙ্ক দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে শুধু টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, ৩টি। তাও আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের দ. আফ্রিকা সফরে তিন ম্যাচ সিরিজের তিনটিতেই তিনি খেলেছেন। কিন্তু টেস্ট ও ওয়ানডেতে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তার কখনোই নামা হয়নি। নামার ইচ্ছেও নেই। তরুণদের জন্য ওই দুই ফরম্যাট তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রোটিয়া দলের অংশ হতে প্রবল আগ্রহী এই নিপুণ অলরাউন্ডার। বিশ্বমঞ্চে দেশের হয়ে পারফর্ম করতেও তিনি মুখিয়ে আছেন।

সারাবাংলা.নেট কে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সেসব কথাই জানালেন ফ্রাইলিঙ্ক। জানিয়েছেন আরো অনেক কিছুই। পাঠকদের উদ্দ্যেশ্যে তা তুলে ধরা হলো।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: প্রথমবারের মতো বিপিএল খেলছেন। অনুভূতিটা কেমন?
ফ্রাইলিঙ্ক: অবশ্যই দারুণ সুযোগ। এই সুযোগেই বাংলাদেশে আসতে পেরেছি। আমি রোমাঞ্চিত। তাছাড়া বিপিএলও ভালো হচ্ছে। সবেই ঢাকা পর্বের খেলা শেষ হলো। মাঠে দর্শকদের উপস্থিতি আশানুরুপ ছিল। টুর্নামেন্টের এই পর্যন্ত যা যা হয়েছে খুবই খুশি।

সারাবাংলা: বিপিএলের মতো বাংলাদেশেও এবারই প্রথম। কেমন লাগছে? ঢাকার আশপাশটা ঘুরে দেখেছেন?
ফ্রাইলিঙ্ক: না। খুব একটা ঘুরে দেখা হয়নি। নিরাপত্তা কর্মকর্তা আমাকে একা বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু গলফ কোর্সে গিয়েছি। ২ রাউন্ড গলফ খেলেছি। ভালো লেগেছে।

সারাবাংলা: যতটুকুই দেখেছেন এদেশের সংস্কৃতি কেমন লেগেছে?
ফ্রাইলিঙ্ক: খুব বেশি জানার সুযোগ হয়নি। কেননা টিমের বাইরে অধিকাংশ সময়ই আমাকে একা থাকতে হয়। তবুও টিম হোটেল, স্থানীয় ক্রিকেটার এবং টিম ম্যানেজমেন্টকে যতটুকু দেখেছি মন্দ লাগেনি। বেশ ভালো।

সারাবাংলা: চিটাগংয়ের হয়ে ঢাকা পর্বের টানা তিন ম্যাচে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন। কতটা গর্বের এটা?
ফ্রাইলিঙ্ক: হ্যাঁ, এটা অসাধারণ। আমার ধারণা প্রথম ম্যাচের উইকেট খুবই ভালো ছিলো। নতুন উইকেট, নতুন ম্যাচ। উইকেট বুঝে বল করে কয়েকটি উইকেটও পেয়েছিলাম। আমি খুবই ভাগ্যবান ছিলাম যে সুপার ওভারের ওই ম্যাচটিতে আমরা জিতেছি। আমার জন্য এটা সত্যিই ভালোলাগার। তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমি দলের জন্য কিছু করতে পেরেছি এবং দলকে একটি সুসংহত অবস্থানে রাখতে পেরেছি।

সারাবাংলা: পয়েন্ট টেবিলে চিটাগং ভাইকিংস দুই নাম্বারে। যেখানে আপনার অবদান সবচেয়ে বেশি। এই ব্যাপারটা আপনাকে কতটা তৃপ্তি দেয়?
ফ্রাইলিঙ্ক: আসলে আমি এভাবে ভাবি না যে, আমার অবদানই বেশি। এটা দলীয় সাফল্য এবং দলীয় পারফরম্যান্স। আমি দলের একটি অংশ মাত্র। বোলাররা লাইন, লেংথ বজায় রেখে বল করেছে, ব্যাটসম্যানরা রান করেছে। এর সমন্বয়ে আমরা আজ এখানে। একা নয়, আমরা সবাই। তবে আমি নাঈমের (নাঈম হাসান) কথা বলবো, সে অসাধারণ বল করেছে।

সারাবাংলা: খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে সুপার ওভারটি কেমন ছিল? একবারও ভেবেছিলেন ওদের আটকে দিতে পারবেন? এটা আপনার ক্যারিয়ারের প্রথম সুপার ওভার এবং বিপিএলের ইতিহাসেও।
ফ্রাইলিঙ্ক: একদম ঠিক বলেছেন। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এটা প্রথম সুপার ওভার এবং বিপিএলেও প্রথম। সত্যি বলতে দারুণ রোমাঞ্চকর ছিল। আমি দলের সবাইকে বলছিলাম এটা সহজ হবে না। তারপরেও যখন জিতলাম পুরো দল উল্লাসিত ছিল। আমাদের ড্রেসিং রুমের পরিবেশও ছিলো আনন্দঘন। তবে আমি এটা ভেবে খুশি যে দলের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছি। আপনি বলছিলেন আমার বিশ্বাস ছিল কী না? হ্যাঁ, নিজের ওপর আমার পুরোপুরি বিশ্বাস ছিল এবং এমন অবস্থায় আপনাকে বিশ্বাস রাখতেই হবে। কেননা দল আপনার উপর আস্থা রেখেই ওরকম অবস্থায় আপনাকে বোলিংয়ে পাঠাচ্ছে। এটা আমার ক্রিকেটীয় স্কিলের একটি অনন্য পরীক্ষাও ছিল।

সারাবাংলা: শেষ ম্যাচে আপনারা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ১৮৫ রান তাড়া করে জিতেছেন। কখনো কি ভেবেছেন এটা সম্ভব হবে?
ফ্রাইলিঙ্ক: অবশ্যই আমরা ভেবেছিলাম, এটা সম্ভব। আমি মনে হয় দুটি ওভার হিট করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আপনি জানেন টি-টোয়েন্টিতে জয়ের জন্য এক বা দুটি বড় ওভারই যথেষ্ট। তাছাড়া এমন পরিস্থিতিতে কেউ একজন ৬০ থেকে ৭০ রান করলেই হয়। যেটা আমাদের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম করেছিল। মোহাম্মদ শাহজাদ পাওয়ার প্লেতে দারুণ খেলেছে। উইকেটও ভালো ছিল, ব্যাটে বল আসছিল।

সারাবাংলা: যেভবে ব্যাটিং করছেন, বিপিএল সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন?
ফ্রাইলিঙ্ক: না, সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার স্বপ্ন আমি দেখি না। আমি সবসময়ই ভাবি কি করে মাঠে, মাঠের বাইরে এবং অনুশীলনে দলের জন্য অবদান রাখা যায়, সেটা। আমি দলের স্থানীয় ক্রিকেটার এবং তরুণদের সাহায্য করতে চেষ্টা করি এবং এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।

সারাবাংলা: জন্মগভাবে আপনি একজন দক্ষিণ আফ্রিকান। আমরা দেখেছি ওখানে গিবস, ক্লুজনার, ক্যালিস, ভিলিয়ার্সের মতো ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা জন্মেছেন। অনেক তরুণ ক্রিকেটারের আইকন তারা। এদের ভেতরে আপনি কাকে অনুসরণ করেন?
ফ্রাইলিঙ্ক: আমি ল্যান্স ক্লুজনারকে অনুসরণ করি। ঘরোয়া ক্রিকেটে যখন আমার অভিষেক হলো তিনি আমার অধিনায়ক ছিলেন। এক অসাধারণ অলরাউন্ডার তিনি। ব্যাটিংয়ে গভীরতা যেমন ছিল, তেমনি ভালো বলও করতেন। আমি ওনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। এই মুহূর্তে তিনি কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জানেন হয়তো কোচিং করাতে উনি ইংল্যান্ডেও গিয়েছেন।

সারাবাংলা: আপনি আইপিএল খেলেছেন, বিপিএলেও খেলছেন। দুই টুর্নামেন্টের মধ্যে মৌলিক পার্থক্যটা কী দেখছেন?
ফ্রাইলিঙ্ক: অবশ্যই বলবো আইপিএল বড় টুর্নামেন্ট। কারণ বেশ লম্বা সময়ব্যাপী হয়। অবশ্য এটা ওদের জনসংখ্যার কারণে। তবে গুণগত মান বিবেচনায় বিপিএল আইপিএলের চেয়ে কোনো অংশেই কম না, কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। দুটোই ভালে। আপনি দেখেন বিপিএলেও ডেভিড ওয়ার্নার, ভিলিয়ার্স, ক্যারিবীয়ানরাও আছে। তার মানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিবেচনায় বিপিএল আইপিএল সমান সমান।

সারাবাংলা: দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে আপনি বেশ পরে এসেছেন। শুধু টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। টেস্ট ও ওয়ানডে দলে খেলার ইচ্ছে আছে?
ফ্রাইলিঙ্ক: মনে হয় না টেস্ট ও ওয়ানডে দলে আমি ‍সুযোগ পাব। আমি সেদিকে ফোকাসও করছি না। কারণ এই মুহূর্তে আমাদের দলে অসংখ্যা প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার আছে। আমি জানি আমি কী পারি। আমার কাজ ভালো খেলা, ভালো পারফর্ম করা। বাদবাকিটা সময়ই বলবে।

সারাবাংলা: বললেন, টি-টোয়েন্টি খেলছেন এবং এখানেই আপনার যত ফোকাস। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলে সুযোগ পাবেন বলে মনে হয়?
ফ্রাইলিঙ্ক: অবশ্যই বিশ্বকাপে খেলতে চাই। দেখেন, আমি আর তরুণ নই। আমার মতো যে কোনো সিনিয়রই দলের অংশ হতে চাইবে এবং দেশের হয়ে বিশ্বকাপে খেলতে চাইবে। তবে এটা আমার হাতে নেই। আমার কাজ ভালো খেলা।

সারাবাংলা: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
ফ্রাইলিঙ্ক: বিপিএলে আমি অনেককেই দেখার সুযোগ পাচ্ছি। কেউ আমার দলে খেলছে, কেউ বা আমার বিপক্ষে। বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান স্থানীয় ক্রিকেটার আমি দেখেছি। কয়েকজন সিনিয়র তারকা প্লেয়ারদের দেখার সুযোগও আমার হয়েছে। টুর্নামেন্টে যারা এসেছে তাদের সবার মধ্যে প্রতিভা আছে।

সারাবাংলা: যদি নাম উল্লেখ করতে বলি, কার কার কথা বলবেন?
ফ্রাইলিঙ্ক: আমার দলের অফস্পিনার নাঈম (নাঈম হাসান) অসাধারণ। খালেদ (খালেদ আহমেদ) আছে। বেশ জোড়ে বল করতে পারে। বলে গতি আছে, ১৪০ কিলোমিটার। আমি জানি সে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছে। তবে ওর বোলিং দেখে মনে হয়েছে আরেকটু দেখভাল করলে খালেদ আরো ক্ষুরধার হয়ে উঠবে।

সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।
ফ্রাইলিঙ্ক: নো প্রবলেম।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি

চিটাগং ভাইকিংস বিপিএল ২০১৯ রবি ফ্রাইলিঙ্ক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর