Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিপিএলে সর্বনাশা জুয়া


১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৯:৫৬

।। মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ক্রিকেট মানেই যেন জুয়া, রমরমা ব্যবসা। প্রতিটি বলে বলে টাকা। টাকা আর টাকা। তবে ভদ্রলোকের এই খেলার গায়ে জুয়ার কলঙ্ক লেগেছে বহু আগেই। স্পট ফিক্সিং কিংবা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মরণ ফাঁদে পা দিয়ে অকালেই কত প্রতিভাবান ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারের এপিটাফ লেখা হয়ে গেছে সে খবর নিশ্চয়ই ক্রিকেট প্রেমীরা রাখেন। উদাহরণ খুঁজতে অন্য দেশে যাওয়ার দরকার নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান আশরাফুল বিপিএলে এই রেডলাইট জোনে পা দিয়ে পেয়েছেন নিষেধাজ্ঞার সাজা। যা তার স্বর্ণালী ক্যারিয়ারকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আশঙ্কার কথা হলো সর্বনাশা সেই জুয়া এখন শুধু খেলোয়াড় কিংবা কর্মকর্তাদের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে দর্শকদের মাঝেও। বিপিএল এলেই যা দৃশ্যমান হয়। বিপিএল ও জুয়া যেন একে অপরের সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে। মাঠে বিপিএল গড়িয়েছে অতএব জুয়া খেলতেই হবে। সেটা হোক গ্যালারিতে কিংবা টিভি সেটের সামনে। পাড়ায়, মহল্লায়, এমনকি দেশের আনাচে কানাচে তরুণদের মধ্যেও এর প্রবনতা দিন দিন প্রবল হয়ে উঠছে। এতে জুয়ারিরা লাভবান হলেও এর ফাঁদে পড়ে হাজারো মানুষ হয়েছেন নিঃস্ব।

কিন্তু তারপরেও কিংকর্তব্যবিমুঢ় বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। আরো নির্দিষ্ট করে বললে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বিপিএলের ৫টি আসর হয়ে গেল তবুও জুয়া বন্ধে করণীয় ঠিক করে উঠতে পারেনি লাল সবুজের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই সংস্থাটি। টুর্নামেন্ট চলাকালীন জুয়া বন্ধে আইন থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ নেই। যাও আছে ততটা কঠিন নয় যে কেউই জুয়া খেলার দুঃসাহস দেখাবে না। বরং প্রচলিত আইনে জুয়ারিরা আরো উতসাহিত হয়ে জুয়া খেলছেন!

বিজ্ঞাপন

গেল ৮ জানুয়ারি মিরপুরে রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ম্যাচ চলাকালীন গ্যালারি থেকে ৫ ভারতীয় জুয়ারীকে হাতেহাতে ধরলো বিসিবি’র দুর্নিতী দমন ইউনিট (আকসু)। ৪ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিল! বুধবার (১৬ জানুয়ারি) রাতেও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রংপুর রাইডার্স ও সিলেট সিক্সার্সের ম্যাচে ৪ ভারতীয় জুয়ারীকে হাতেনাতে ধরে ১ মাসের জেল দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। জানা গেল বিপিএলের ইতিহাসে এটিই নাকি সর্বোচ্চ শাস্তি!

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা প্রধান মেজর (অব) হোসেন ইমামের দেয়া তথ্যমতে, বিপিএল ঢাকা পর্বে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ২৫ জুয়ারিকে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে ১০ জন ভারতীয় এবং ১৫ জন বাংলাদেশি। কিন্তু কারো বিরুদ্ধেই জেলের বিধান কিংবা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি। জরিমানাই শেষ।

কেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রাখা হলো না? বিসিবি নিরাপত্তা প্রধানের কাছে জানতে চাইলে বললেন, ‘এটা বিজ্ঞ মেজিস্ট্রেট ও মোবাইল কোর্টের সিদ্ধান্ত। এখানে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। যিনি বিসিবির হয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন তিনি বলতে পারবেন।’

অগত্যা তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেই হলো হলো। নাম মো.ইমরুল হাসান। সিনিয়র সহকারী সচিব ও নির্বাহি মেজিস্ট্রেট ঢাকা মেট্রোপলিটান এরিয়া। তিনিই এবারের বিপিএলে বিসিবির হয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। ইমরুলের কাছে প্রথমেই জানতে চাই জুয়ারিদের জন্য কী কী শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে?

ইমরুল জানালেন, বিপিএলের যে টিকিট আছে তার পেছনে কিছু নির্দেশনা আছে। ১৪ নাম্বার নির্দেশনাটি যদি দেখেন, সেখানে স্পষ্টভাবে লেখা আছে মাঠে কোনো প্রকার জুয়া, বেটিং; এগুলো খেলা যাবে না। অর্থাত এটা কর্তৃপক্ষের আদেশ। তাহলে কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করার জন্য একটা শাস্তির বিধান করতে পারি। আরেকটি হলো বঙ্গীয় জুয়া আইন। আমরা ওইটাও করতে পারি। এছাড়া সিভিল ড্রেসে যখন জুয়ার তদারকি করে তখন যদি বাধা দেয়া বা মারামারি করে বা কর্তৃপক্ষের আদেশ মানতে না চায় বা সরকারী কর্মকর্তার ওপর আঘাত করে মানে মারাত্মক পর্যায়ে গেলে এই আইনেও আমরা কিছু করতে পারি। এরপর দন্ডবিধি আছে মানে সরকারী আদেশ অমান্য। যেহেতু বাংলাদেশে প্রকাশ্যে জুয়া খেলা যায় না, ক্যাসিনোতে গিয়ে খেলতে পারে। এই ধারাগুলোর আমরা বিচার করি।

শাস্তিগুলো কী জুয়া বন্ধে যথেষ্ট? এমন প্রশ্নে ইমরুলের দাবী, ‘প্রথম দিন আমরা ১৬ জন আসামি ধরেছিলাম। এরপর একজন, দুইজন করে ধরা পড়ছে। তিন জনের বেশি আর ধরা পড়েনি। তার মানে কমে যাচ্ছে। কাউকে আমরা ১০ হাজার টাকাও জরিমানা করেছি। আমি কিন্তু তিনজনকে জেলও দিয়েছি। এক জনকে ১১ দিনের, এক জনকে ৪ দিনের, আরেক জনকে ৫ দিনের।’

‘মোবাইল কোর্টে বিচার করতে হলে আমার সামনে অপরাধ সংগঠিত হতে হবে। তদন্ত করে বিচার করা হয় রেগুলার কোর্টে। তবে, বিসিবি যদি তদন্ত করে বা তারা যদি দুর্ণীতিদমন কমিশনে অভিযোগ দেয়। আর দেশের বাইরে গিয়ে তদন্ত করতে হলে আপনাকে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাইতে হবে। আমি পারবো ব্যাপারটা এরকম না।’ যোগ করেন ইমরুল।

ইমরুলের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট তার কাজ ম্যাচ চলাকালীন জুয়ারিদের ওপর সতর্ক নজর রাখা এবং অপরাধী পেলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা। সেই শাস্তির মাত্রা কতখানি সেটাও বোধ করি স্পষ্ট। এর বাইরে আইনত তিনি কিছুই করতে পারেন না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধানে বিসিবির শৃঙ্খলা কমিটিকে দায়িত্ব নিতে হবে। ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটের গৌরব ধরে রাখতে প্রয়োজনে কঠোর আইন তৈরি ও তার প্রয়োগ করতে হবে। আর যেন কোনো আশরাফুলের ক্যারিয়ার অকালেই শেষ হয়ে না যায় লাল সবুজের ক্রিকেটের স্বার্থে সেই নিশ্চয়তাও তাদেরই দিতে হবে।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি

জুয়া বিপিএল ২০১৯

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর