দেশের ফুটবলে ‘টেন ইয়ার চ্যালেঞ্জ’
২০ জানুয়ারি ২০১৯ ২৩:১৬
।। জাহিদ-ই-হাসান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকাঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে ‘টেন ইয়ার চ্যালেঞ্জ’। দশ বছরে বদলটা কেমন তা নিয়ে সরগরম তারকাসহ সাধারণ মানুষ। আড্ডাতেও যেন প্রাধান্য পাচ্ছে এই চ্যালেঞ্জ। তারই সূত্র ধরে এই দশ বছরে কেমন হয়েছে দেশের ফুটবল! পুরুষ ও নারী পর্যায়ে উত্থান-পতনটা কেমন হয়েছে?
গত ১০ বছর কেমন ছিল বাংলাদেশের ফুটবল তাই তুলে ধরার চেষ্টা করবে সারাবাংলাডটনেট। সময়ের হিসেবে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই দশ বছরের দেশের ফুটবলের গ্রাফটা যাচাই করে নেয়া যাক।
পুরুষ ফুটবলঃ
বয়সভিত্তিক পর্যায়ে সাফল্য আসলেও জাতীয় পুরুষ ফুটবল দল পিছিয়ে অনেক এই দশ বছরে। ২০১০ সালে এস এ গেমসে স্বর্ণ এসেছে বটে তবে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট সাফ শিরোপা হাত দিয়ে ধরার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। এ দশ বছর শুধু হতাশার গল্প পুরুষ ফুটবলে। তবে, এশিয়ান গেমসে অনূর্ধ্ব-২৩’এ ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। ইতিহাসে প্রথমবার নক আউট পর্বে পা রেখেছে জামাল ভুঁইয়ারা। তবে, জাতীয় পুরুষ দলে এই এক দশক ছিল হতাশার সময়।
যেমন এই দশ বছরের মাঝেই এই দেশ লজ্জ্বার হার হরেছে ভুটানের কাছে। ২০১৬ সালে অক্টোবরে ভুটানের কাছে হেরে প্রায় ১৭ মাস নির্বাসনে ছিল পুরুষ ফুটবল। এর মাঝে ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৬ ও ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে সাফল্য যেখানে অপার সম্ভাবনার উঁকি দিচ্ছিল সেখানে জাতীয় পর্যায়ে ব্যর্থতার গল্প নির্বাসনের দিকেই আঙ্গুল তুলে ঈশারা দিচ্ছিল।
অলৌকিক হলেও সত্য এই দশ বছর আগে দেশের ফুটবল অভিভাবক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে এসেছিলেন দেশের সবচেয়ে বড় ফুটবল তারকা কাজী সালাউদ্দিন।
তার আমলে পুরুষ ফুটবল দেখেছে হতাশার রূপ। তবে শুরুটা ভালই ছিল। এস এ গেমসে স্বর্ণ। ২০০৯ সালে তো ঢাকায় সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল। ভালো দিয়ে শুরু করা সালাউদ্দিনের তৃতীয় মেয়াদে পুরুষ ফুটবল তলানিতে। এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারাও যে ফুটবল উদ্ধার করেছিলেন তা বলা যাবেনা।
তবে, দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সালাউদ্দিনের আমলে সাফল্য চেয়েছে সমর্থকরা। উল্টো যেখানে মালদ্বীপ-নেপাল-ভুটানদের মতো দলের কাছেও হারে লাল-সবুজরা সেখানে তিনি ২০২২ সালে বিশ্বকাপ খেলার ঘোষণা দিয়ে হাস্যরসের উপন্যাস রচনা করেছেন। না বিশ্বকাপতো অনেক দূর। তার থেকেও দূর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০০৩ সালের পর থেকে এই শিরোপা ধরে দেখার সাহস হয়নি বাংলাদেশের। আমাবশ্যার চাঁদের মতোই অধরা এটি।
২০১১ সাল থেকে আর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বই পেরোতে পারছে না বাংলাদেশ৷ ২০১৮ পর্যন্ত টানা চারবার এমন ঘটেছে ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নদের ভাগ্যে৷
নারী ফুটবলঃ
দেশের ফুটবলে উন্নয়নের জোয়াড় এনে দিয়েছে মেয়েরাই। এই দশ বছরে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অসামান্য সাফল্য এনে ফুটবলটা বাঁচিয়ে রেখেছে তারাই। মারিয়া-তহুরা-আঁখিদের হাত ধরে এএফসি পর্যায়ে বাছাইপর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া বা বেশ কয়েকটি বয়সভিত্তিক সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা ঘরে তুলেছে মেয়েরা।
যদিও জাতীয় নারী ফুটবল দলের ভরাডুবি হয়েছে ২০১৮ সালে। মিয়ানমারে চার ম্যাচের তিনটিতেই হার বাংলাদেশের। সামনে সিনিয়র সাফ আছে নেপালে। সেখানে আরেকবার চ্যালেঞ্জ নেয়ার অপেক্ষায় গোলাম রাব্বানী ছোটনের শিষ্যরা।
এই এক দশকে নারী ফুটবলে উন্নতির ছাপ উল্লেখযোগ্য হলেও পুরুষ ফুটবলে হতাশাজনক অবস্থা র্যাঙ্কিংয়েও ছাপ স্পষ্ট। ২০০৯ সালের দিকে ১৫০ ঘরে থাকা বাংলাদেশ ২০১৯ সালে ১৯২ অবস্থানে আছে। গেল বছরে আরও লজ্জ্বাজনক অবস্থায় (১৯৭) গিয়েছিল বাংলাদেশ। এখন এই অবস্থা যেন সহনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে! সুদিন ফিরবে কি?
সারাবাংলা/জেএইচ