বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাত’র অভাব ঘুঁচবে কবে?
২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:৩৬
।। মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
সাব্বিরকে বাদ দিলে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে সাত নাম্বারে এমন একজন ব্যাটসম্যান নেই যিনি দলের প্রয়োজনে জ্বলে উঠতে পারেন। যার বিস্ফোরক ব্যাট থেকে ১৫ বলে ২৫ বা ৩০ রান অনায়াসেই আশা করা যায়। দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক কিংবা বৈশ্বিক; যে কোন আসরে লোয়ার অর্ডারে দাপুটে ব্যাট চালিয়ে যিনি দলের সংগ্রহের ঝুলিটা আরো সমৃদ্ধ করতে পারেন। আর সে কারণেই মাশরাফি, নান্নুদের ‘নিষিদ্ধ’ সাব্বির রহমানের মুখাপেক্ষী হতে হয়।
একের পর এক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পাওয়া ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এক মাস কমিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টকে তাকে কেন্দ্র করেই বিশ্বকাপ ভাবনা ভাবতে হয়। গোটা টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। যা আগামির তরুণদের জন্য বাজে দৃষ্টান্ত রেখে যায়। কলঙ্কিত হয় লাল সবুজের ক্রিকেট। দেশের গণমাধ্যমে সমালোচনার তীব্র ঝড় বইয়ে যায়।
কিন্তু সাতে যে কেউ নেই ব্যাপারটা এমন না। অনেকেই ছিলেন কিন্তু তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়া হয়নি এবং পরিচর্যা করা হয়নি। আরিফুল হক টিমের সঙ্গে একটা বছর ঘুরলেন কিন্তু তাকে খেলানো হলো না। ডাগ আউট, ড্রেসিং রুম, টিম বাস আর টিম হোটেল পর্যন্তই তার দৌঁড় সীমাবদ্ধ থাকলো। সন্দেহ নেই এতে করে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করা এই অলরাউন্ডার। যার কূ-প্রভাব চলতি বিপিএলে জাজ্বল্যমান।
বিপিএল ষষ্ঠ আসরের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে র্যাবিটহোলবিডি।
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও এই অর্ডারে মন্দ নন। তার প্রমান তিনি ব্যাটেই দিয়েছেন। কিন্তু তিনিও সাব্বির বাধায় পড়েছেন। শুরু থেকে সাব্বিরকে অটোমেটিক চয়েজ করে ফেলায় আরিফুল-মোসাদ্দেক থেকে গেছেন অবহেলার পাত্র হয়ে। অথচ ক্যারিয়ারে ৫৪টি ওয়ানডে খেলা সাব্বিরের একটি সেঞ্চুরিও নেই। ৫টি হাফ সেঞ্চুরি। আর গড় ২৪.৫১। সর্বোচ্চ ৬৫ রান।
সাব্বির হয়তো ৯০ কিন্তু তারা দু’জন একশ’তে ৮৫। বিকল্প ভাবাই যেত। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট সেভাবে ভাবেননি।
গেল ছয় মাস সাব্বিরের অনুপস্থিতিতে সাতে কখনো মোসাদ্দেক-মেহেদি হাসান মিরাজ, কখনো মাশরাফি কখনো বা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদের ব্যাট থেকে আহামরি কিছু দেখা যায়নি। আবার মাহমুদউল্লাহকে এখানে খেলাতেও মাশরাফির বিবেকে বাঁধে। সেকথা তিনি নিজেই বলেছেন বহুবার। তাহলে আর উপায় কি? নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ এই অর্ডারের জন্য বিকল্প কাউকে এতদিন বিসিবি’র গড়ে তোলা উচিত ছিলো। কিন্তু না, সেই প্রচেষ্টা তাদের মধ্যে এতটুকুও দেখা যায়নি। বরং যাকে সামনে পাওয়া গেছে তাকেই নামিয়ে দিয়েছে লাল সবুজের টিম ম্যানেজমেন্ট।
বিষয়টিকে মারাত্মক ভুল ও দুঃখজনক বলে উল্লেখ করলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তার চোখে সমস্যার মূল কারণ হলো, ঘরোয়া ক্রিকেট; আরো স্পষ্ট করে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এই অর্ডারের ক্রিকেটারদের গুরুত্ব না দেয়া। যার ফলশ্রুতিতে আজও এখানে ভালো কোন ব্যাটসম্যান তৈরি করা যায়নি।
‘এটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের জাতীয় দলের ক্রিকেটার নির্বাচন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে কেন্দ্র করে হয়। দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে এটা। ওইখানে যারা ওপরে খেলার সুযোগ পায়, প্রচুর রান করে এবং নিয়মিত খেলে তাদেরকে আমরা ভালো ব্যাটসম্যান বলি। ওইসব খেলাতে যারা ৬, ৭, ৮ নাম্বারে এসে ছোট ছোট কিন্তু মূল্যবান ইনিংস খেলে তাদের ওইভাবে দাম দেই না। এজন্যই ওই ওর্ডারে কেউ গড়ে উঠছে না। ওপরের ভালো প্লেয়ারদের ওইখানে জায়গা দেয়ার চেস্টা করি, যেটা কি না মারাত্মক ভুল।’
‘দেশের বাইরে যদি দেখি ঘরোয়া ক্রিকেটে সাতে খেলা ক্রিকেটারটিই জাতীয় দলে সাতে খেলছে। সে ওইভাবেই গড়ে উঠেছে এবং জানে ওখানে কি করতে হয়। ১, ২, ৩ নাম্বারের ব্যাটসম্যানের পক্ষে এটা জানা সম্ভব না যে সাতে কি করতে হয়।’ যোগ করেন ফাহিম।’
সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএন