শের-ই-বাংলার বন্ধ্যাত্বের মূলে ‘কাট গ্রাস’
২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:১৮
।। মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
বিপিএল চট্টগ্রাম পর্ব দিয়ে যেন চার-ছক্কার ধুম ধারাক্কার এই টুর্নামেন্টের সত্যিকারের আমেজটা পাওয়া গেল। সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চলতি আসরে এই পর্যন্ত খেলা ৪ ম্যাচে মোট রান সংখ্যা ৮১২। ম্যাচ প্রতি গড় রান ২০৩! সিলেট পর্বের ১০ ম্যাচে রান ছিলো ১৫৯৯। গড় ১৫৯। আর ঢাকায় মোট ১৮ ম্যাচে রান হয়েছে ২৭৬১টি। যেখানে গড় ১৫৩ দশমিক ৩৮।
ওপরের পরিসংখ্যান দেখে একটি বিষয় খুব খুব সহজেই অনুমেয়, বিনোদনেই যে ক্রিকেটের শেষ কথা তা উপভোগ করতে এসে সবচাইতে বেশি হতাশ হয়েছেন ঢাকার দর্শকরা। পক্ষান্তরে বন্দরনগরীর উইকেট তা দর্শকদের দু’হাত ভরে দিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে সেই বিচারে সিলেট ছিলো মাঝারি ঘরানার।
অবশ্য এবারের বিপিএলে প্রথম ২’শ রান ছাড়িয়ে যেতে দেখা গেছে সিলেটেই। মাহমুদউল্লাহর খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে মুশফিকের চিটাগং ভাইকিংস করেছিলেন ২১৪। যা তখন পর্যন্ত বিপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং এবারের সর্বোচ্চ। চট্টগ্রামে গিয়ে তো নতুন ইতিহাসই হলো। রুশো, হেইলসের বিধ্বংসী ব্যাটে সর্বকালের সেরা সংগ্রহ (২৩৯) রান দেখলো দেশের ঘরোয়া সবচাইতে জাঁকজমকপূর্ণ এই আসরটি।
চট্টগ্রামে হয়, সিলেটেও হয়। কিন্তু ঢাকায় কেন রান উৎসব হয় না? ঢাকায় কেন ব্যাটসম্যানদের ছাপিয়ে বোলারদের দাপট দেখা যায়? শুনলে হয়তো চমকে যাবেন, ঢাকায় খেলা ১৮ ম্যাচের মাত্র ৫টিতে ম্যাস সেরা হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। বাদ বাকি সবগুলোতেই ছিলো বোলারদের দাপট। পক্ষান্তরে সিলেট ও চট্টগ্রামে ব্যাটসম্যানদের দাপট। কিন্তু কেন?
সেই উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করেছে সারাবাংলা। এবং উত্তর জানতে কথা বলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গ্রাউন্ডস বিভাগের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, হোম অব ক্রিকেটের উইকেটে ‘কাট গ্রাস’র ব্যবহারের ফলেই রান প্রসবা হয়ে উঠতে পারছে না শের-ই-বাংলা।
এবার আসুন জেনে নেই ‘কাট গ্রাস’ টা কী?
কাট গ্রাস হলো কাটা ঘাস। অর্থাৎ মাঠে বেড়ে ওঠা ঘাসের উপরের অংশ, যা কেটে ফেলা হয়। কাটার পরে তা রোদে শুকিয়ে উইকেটের ওপর দিয়ে রোলার মেশিনে রোলিং করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়। এই ঘাস এতটাই বিপদজনক যে কোন বোলারের স্বাভাবিক গতিকে মন্থর করে দেয়।
ধরা যাক, কোন পেসার ১৪০ কিলোমিটার বেগে বল করেছেন, উইকেটে এই কাটগ্রাসের সংমিশ্রণ থাকায় তা কমে ব্যাটসম্যানের কাছে ১৩০ বা ১৩৫ কিলোমিটার বেগে আসছে। তখনই ব্যাটসম্যানের টাইমিংয়ে সমস্যা হয়। ফলে রান না আসা এবং আউট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠছে। স্পিনাররাও একই সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন। তাতে বিপাকে পড়ছে ব্যাটসম্যানরা।
এবার জেনে নেয়া যাক কাট গ্রাস কেন ব্যবহার করা হয়?
সাধারণত যেসব উইকেটে ঘাস থাকে না, যেসব উইকেট বেশি সংখ্যক ম্যাচ আয়োজিত হয়ে থাকে সেখানে কাট গ্রাস ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত টার্ন ঠেকাতে এবং উইকেট ভেঙে যাওয়া রোধেও এর ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু মিরপুরে তো আর ঘাসের অভাব নেই। যদিও এখানে বেশি সংখ্যক ম্যাচ আয়োজিত হয়ে থাকে। তাই বলে কাট গ্রাস (কাটা ঘাস) ব্যবহারের কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাই ভালো বলতে পারবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক কিউরেটর জানালেন, ‘শুধুমাত্র মিরপুরেই এই ঘাসের ব্যবহারটা আমরা দেখছি। টি-টোয়েন্টিতে যার প্রয়োজনীতা একেবারেই নেই।’
উদাহরণ টানলেন চট্টগ্রামের উইকেট দিয়ে, ‘চট্টগ্রামে পুরোটাই কার্পেটিং ঘাস। এই ঘাস দিয়ে ওখানকার কিউরেটর বিভিন্ন ফর্মেটের (টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) উইকেট প্রস্তুত করে থাকেন। টোয়েন্টির জন্য ওখানকার ঘাসগুলো পানি দিয়ে রোলিং করে উইকেটের মাটির সঙ্গে যুতসইভাবে মিশিয়ে দিচ্ছেন। ফলে বলগুলোও স্বাভাবিক গতিতে আসছে। যা ব্যাটসম্যান অনায়াসে খেলতে পারছেন। এতে করে রানও হচ্ছে প্রচুর।’
তার সঙ্গে কথা বলে আরো একটি বিষয় জানা গেল। বিপিএল সিলেট পর্বের প্রথম তিনটি ম্যাচ ওই কাট গ্রাসের কারণেই উইকেটে রান উৎসব দেখা যায়নি। বিষয়টি বুঝতে পেরে ঢাকা থেকে বিসিবি’র গ্রাউন্ডস ম্যানেজার সৈয়দ আব্দুল বাতেন শের-ই-বাংলার কিউরেটর গামিনিকে নিয়ে সিলেট উড়ে গিয়ে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই উইকেট রানবন্ধব করে তুলেছেন।
বিপিএল ষষ্ঠ আসরের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে র্যাবিটহোলবিডি।
এখন প্রশ্ন হলো, যে কিউরেটর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই সিলেটের উইকেট বদলে দিতে পারলেন সেই তিনিই কেন দিনের পর দিন সুযোগ পাওয়া সত্বেও শের-ই-বাংলার উইকেটে রান উৎসব এনে দিতে পারছেন না? সিলেট পর্বের সঙ্গে ঢাকার দ্বিতীয় পর্বের খেলার ব্যবধান ছিলো ৭ দিন। তারপরেও কেন দর্শক মনে হতাশা দেখা গেল? তাহলে আর তাকে মাসে ৫ লাখ টাকা বেতন দিয়ে রাখার মানে কি?
চট্টগ্রামে বিপিএল যাওয়ায় তিনি আবারও ৮ দিনের বিরতি পেয়েছেন। দেখা যাক, এই সুযোগে উইকেট প্রস্তুত করেশের-ই-বাংলায় রান উৎসব এনে দিতে পারেন কী না।
সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএন