ঘরোয়া ক্রিকেটের অব্যবস্থাপনায় অশনী সংকেত দেখছেন সালমা
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:৪৬
।। মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল সবশেষ ম্যাচ খেলেছে আজ থেকে চার মাস আগে, বিশ্বকাপে। এরপর আর কোনো খেলা নেই। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নারী ক্রিকেটারদের প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়ানোর কথা ছিল, কিন্তু গড়ায়নি। দেশের ক্রিকেট রাজনীতির বাস্তবতায় কাউন্সিলর ধরে রাখতে দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেটকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে নারী ক্রিকেটারদের করা হলো অবজ্ঞা। সারাবছর প্রস্তুতি নিয়ে সালমা, রুমানারা যখন প্রিমিয়ার লিগের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত, আচমকা জানতে পারেন দ্বিতীয় বিভাগের ক্রিকেট চলছে তাই মাঠ নেই।
কাজেই প্রিমিয়ার লিগের প্রশ্নই ওঠে না। ভেস্তে গেল সকল প্রস্তুতি। এরপর জানানো হলো, প্রিমিয়ার লিগ না হলেও ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জাতীয় লিগ অনুষ্ঠিত হবে। তাও পিছিয়ে দেওয়া হলো। কবে হবে, সেই নিশ্চয়তাও মিলছে না। ঘরোয়া ক্রিকেটের এমন অব্যবস্থাপনায় হতাশ হয়ে পড়েছে পুরো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। আর এই অব্যবস্থাপনাকেই বিশ্ব ক্রিকেটে দাপুটে হয়ে ওঠার পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন টাইগ্রেস টি-টোয়েন্টি দলপতি সালমা খাতুন।
সালমা জানালেন, ‘এটা আমাদের জন্য খু্ব দুঃখজনক। আমরা সারাবছর অনুশীলন করি প্রিমিয়ার লিগটার জন্য। প্রিমিয়ার লিগটা যেহেতু হয়নি, ফেব্রুয়ারিতে একটি তারিখ দিয়েছিল, ১২ তারিখ জাতীয় লিগ হবে। সেটাও হলো না। ৮ তারিখ রাতে বলা হলো খেলা হবে না। অথচ ৯ তারিখ আমাদের কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল। এখন প্রক্রিয়া চলছে। হয়তো জাতীয় লিগটা হবে, এই মাসের ২৪-২৫ তারিখে।’
‘আমরা এশিয়া কাপের পরে কিন্তু অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছি। বিশ্বকাপ বাছাই খেলেছি, বিশ্বকাপ খেলেছি। বিশ্বকাপের পর কিন্তু তিন-চার মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা কোনো ম্যাচ খেলছি না, কোনো ক্যাম্পও করছি না। আমার মনে হয় এদিকে একটু নজর দিলে আমাদের জন্য ভালো হতো,’— যোগ করেন সালমা।
এ তো গেলো ক্রিকেটীয় প্রতিবন্ধকতার আলোচনা। এবার আসা যাক তাদের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির আলোচনায়। আপনারা হয়তো জানেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে সালমা-রুমানারা মাসিক বেতন হিসেবে যা পান, সেটা মাশরাফি-সাকিবদের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে বোর্ডের দেওয়া বেতনের পর তাদের আয়ের একটি বড় উৎস প্রিমিয়ার লিগ, এরপর জাতীয় লিগ। কিন্তু ক্রিকেট রাজনীতির বাস্তবতায় সেই পথটিও যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন তাদের আর্থিক অবস্থা কী দাঁড়ায়?
কষ্ট বোঝাতে খুব বেশি বাক্য ব্যয় করলেন না সালমা খাতুন। স্রেফ বড় ক্ষতি বলেই ক্ষান্ত থাকলেন। বললেন ‘আমাদের নারী ক্রিকেট দলের সব সদস্যই এটার ওপরে নির্ভর করে। যারা ক্রিকেটে আছে, সারাবছর আমরা অনুশীলন করি কেবল এই প্রিমিয়ার লিগটার জন্য। প্রিমিয়ার লিগ খেললে কিছু টাকা আয় হয়। ওইটা দিয়েই কিন্তু আমাদের সারাবছর চলে। তো এটা আমার এবং আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি।’
প্রিমিয়ার লিগ নেই, হাতে পর্যাপ্ত টাকাও নেই। তবুও ক্রিকেটের প্রতি নিবেদনে তাদের এতটুকু ঘাটতি নেই। বিসিবির কর্তাব্যক্তিরা আশ্বাস দিয়েছেন ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে কক্সবাজারে জাতীয় লিগ অনুষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষ্যে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে নিজেরাই অনুশীলন ও অনুশীলন ম্যাচের আয়োজন করেছেন এশিয়া কাপে শিরোপা জয়ীরা। বিসিবির তরফ থেকে দুপুরের খাবারও মিলছে না। নিজেদের টাকায় খাবার খেয়ে আগামীর জন্য শান দিচ্ছেন। দেওয়ার মধ্যে বিসিবি দিচ্ছে কেবল বল, উইকেট ও ক্রিকেট একাডেমির ওই মাঠ। তারপরেও দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির প্রতি তাদের কোনো অভিযোগ নেই।
সালমা জানালেন, ‘যেহেতু আমরা নিজেরাই আয়োজন করে খেলছি, তাই নিজেরা লাঞ্চ কিনে আনছি। শুধু কিছু বল, মাঠ ও উইকেট বিসিবি দিচ্ছে। আমরা আয়োজন করে খেলছি, এটা কিন্তু আমাদের জন্য মজার বিষয়। আমরা লাঞ্চ কিনে খাচ্ছি এটাও কোনো বড় ব্যাপার না।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে নড়বড়ে কাঠামো, টাকা নেই, বিসিবির বাড়তি নজরদারিরও অভাব। অথচ আসন্ন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ কিংবা বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের আসরে এই মেয়েদের কাছেই সিরিজ জয় কিংবা শিরোপা দাবী করে বসবে বিসিবিসহ দেশের তামাম ভক্তরা। তাতে অবশ্য সালমার কোনো আপত্তি নেই। তবে ভাবনা আছে। তাও নিজেকে নিয়ে নয়, উঠতি ক্রিকেটারদের নিয়ে।
সালমা শেষ করলেন এভাবে, ‘আসলে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা যখন অবসরে থাকি তখন কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেট খেলাটা জরুরি। আর আমি বলবো শুধু প্রিমিয়ার লিগই না, জাতীয় লিগও। কারণ আমাদের জাতীয় দলের বাইরে যারা আছে তারা অনেকে স্বচ্ছল পরিবার থেকে আসা, অনেকে আবার মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। ওরা কিন্তু আসে প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ অর্থাৎ ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার জন্য। কেননা ওখানে পারফর্ম করলেই কিন্তু ওরা জাতীয় দলে আসবে। কিন্তু সেটা যদি ওরা প্রমাণ করতে না পারে, কী করে জাতীয় দলে ঢুকবে? সারাবছর অনুশীলন করছি কিন্তু যদি কোনো ম্যাচ খেলতে না পারি, আমার পারফরম্যান্স দেখাতে না পারি, তাহলে কী করে জাতীয় দলে ঢুকব?’
সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি/জেএএম