ছাঁটাই করা সেই মরিনহোর শরণাপন্ন রিয়াল!
৫ মার্চ ২০১৯ ১১:৫৩
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
রিয়াল মাদ্রিদের বাজে সময়ে আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে ক্লাবের কোচ পরিবর্তনের ব্যাপারটি। জিনেদিন জিদান কোচ থাকার আগে ও পরে বেশ কয়েকবার কোচ পরিবর্তন করে স্প্যানিশ ক্লাবটি। এই মৌসুমে সান্তিয়াগো সোলারির আগেও কোচ পাল্টেছে রিয়াল। সোলারির অধীনে খুব একটা স্বস্তিতে নেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। আবারো পালে হাওয়া লেগেছে রিয়ালের কোচ পাল্টানোর গল্পে। যে গল্পে আছেন সাবেক কোচ হোসে মরিনহো।
জুলিয়েন লোপেতেগুইকে বরখাস্তের পর সান্তিয়াগো সোলারির অধীনে খেলছে রিয়াল। সোলারির হাতে পড়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তাতে প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন ক্লাবের সমর্থকরা। তবে, সমর্থকরা আবারও হতাশ। শুরুতে চমক দেখালেও এ আর্জেন্টিনা কোচের অধীনে এখন আবারো ধুঁকছে বার্নাব্যুর ক্লাবটি। তাই অনেকেই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ভবিষ্যত কোচ হিসেবে আবারও হোসে মরিনহোকেই ভাবছেন।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে, রিয়ালের পরবর্তী কোচ কে হতে যাচ্ছেন। তাদের প্রতিবেদন বলছে, রিয়ালের আগামী কোচ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন ফ্রি বসে থাকা হোসে মরিনহো। গত বছরের শেষ দিকে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হয়ে আপাতত বেকার আছেন মরিনহো। অন্যদিকে অভিজ্ঞ কোচ খুঁজছে রিয়াল। দুইয়ে দুইয়ে তাই অনেকে চার মেলানোর চেষ্টা করছেন। তাইতো খবরটি ভাসছে বাতাসে, ফের বার্নাব্যুতে ফিরছেন মরিনহো!
রিয়াল মাদ্রিদে এর আগেও কোচ হিসেবে কাজ করেছেন মরিনহো। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্প্যানিশ ক্লাবটির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সে সময় বার্নাব্যুর ক্লাবটিকে তিনি ৩টি শিরোপা জিতিয়েছিলেন। এমনও খবর রটেছে, রিয়ালের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ আবার মরিনহোকে পুরোনো চেয়ারে বসাতে চাইছেন! যদিও আগেরবার রিয়াল থেকে তার বিদায়টা খুব একটা সুখকর ছিল না। তবে, মরিনহো জানালেন, রিয়ালের সঙ্গে তার কোনো শত্রুতা নেই। স্প্যানিশ ক্লাবটি ডাকলে সেখানে কাজ করবেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন মরিনহো।
ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনির স্থলাভিষিক্ত হয়ে রিয়ালে যোগ দেওয়া মরিনহো গণমাধ্যমে জানান, রিয়ালের সঙ্গে আমার কোনো ঝামেলা নেই। কারণ ক্লাবটির লক্ষ্য এখনও একই। এটা আমাকে অনেক সম্মান জানায়, যখন পুরোনো ক্লাব আপনাকে ডেকে থাকে। আমি স্পেন পছন্দ করি, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো দেশের ক্লাবকে অগ্রাধিকার দিতে রাজী নই। এটা সত্যি যে, রিয়াল বিশ্বের অন্যতম একটি বড় ক্লাব। তারা ১৩ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে।
মরিনহো আরও জানান, আপনি দেখে থাকবেন ইউরোপের প্রতিযোগিতায় শেষ পাঁচ বছরে রিয়াল অনেক কিছুই অর্জন করেছে। এটা অবিশ্বাস্য। গত সাত বছরে তারা সাতটি শিরোপার সেমি ফাইনালে খেলেছে। পাঁচ বছরে চারটি ফাইনাল খেলেছে আর চারটি শিরোপাও জিতেছে। অবশ্যই এটা রিয়ালের জন্য বড় পাওয়া। আপনি যদি কোনো ফুটবলারকে জিজ্ঞেস করেন, সে উত্তর দেবে তার কাছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। সেক্ষেত্রে আপনি রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারেন না। কারণ গত ছয় বছরে তারা চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে। একজন কোচ হিসেবে লিগের শিরোপা জেতাটা অনেক বড় পাওয়া। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জেতাটা তার থেকেও বেশি কিছু।
ইংলিশ ট্যাবলয়েড পত্রিকা দ্য সান-এর খবর, মরিনহোকে আবার কোচ করতে চাইছে রিয়াল। শুধু চাওয়া নয়, মরিনহোর এজেন্ট হোর্হে মেন্ডিসের সঙ্গে নাকি এরই মধ্যে যোগাযোগও করেছেন ক্লাবটির সভাপতি। শুধু তাই নয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিয়ালের এক সাবেক খেলোয়াড় জানিয়েছেন, ক্লাবের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে মরিনহোর সম্পর্ক খুবই ভালো। আর ইউনাইটেড থেকে বরখাস্ত হওয়ার পরপরই মরিনহোকে কোচ করার প্রস্তাব দিয়েছিল তার স্বদেশি ক্লাব বেনফিকা। বেনফিকার প্রেসিডেন্ট বিশাল অঙ্কের টাকা প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু তাতে রাজী হননি তিনি। একমাত্র রিয়ালে ফিরবেন বলেই নাকি মরিনহো এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছেন। ২০০০ সালে মরিনহো কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকাতেই।
অথচ রিয়াল মাদ্রিদে মরিনহোর সাফল্য আহামরি কিছু নয়। ২০১০ সালে রিয়ালে এসে তিন বছর কাজ করার পর বাজে পারফরম্যন্সের জন্য ২০১৩ সালে বরখাস্ত করা হন। এ সময়ে একটি লা লিগা, একটি কোপা দেল রে ও একটি সুপার কোপা জিতেছিলেন তিনি। শেষ মৌসুমে ট্রফিশূন্য ছিল দলটি। এরপর যোগ দেন ইংলিশ ক্লাব চেলসিতে। দুই বছর না যেতেই সেখান থেকেও ছাঁটাই হন তিনি। এরপর যোগ দেন আরেক ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। সেখান থেকেও চাকরি হারান বার্সেলোনার একচ্ছত্র রাজত্বে হানা দিয়ে ২০১১-১২ মৌসুমে রিয়ালকে লিগ শিরোপা জেতানো স্পেশাল ওয়ান। তার অধীনে খেলেছিলেন আর্জেন্টিনার ডি মারিয়া, ব্রাজিলের কাকা, জার্মানির মেসুত ওজিল, পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরা।
সারাবাংলা/এমআরপি