নারকেলের ডাল দিয়ে শুরু করেছিলেন ক্রিকেটের বরপুত্র
১৩ মার্চ ২০১৯ ১৪:৩৬
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
‘ক্যারিবীয়ান রাজপুত্র’ বলুন আর ‘ক্রিকেটের বরপুত্র’ বলুন- তিনি একজনই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রাজপুত্র ব্রায়ান চার্লস লারা। যিনি ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো নামের ছোট্ট দ্বীপ থেকে উঠে এসে সারা বিশ্বের আলো কেড়েছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারা। সাফল্যের মুকুটে রয়েছে অসংখ্য রেকর্ড। লারারা ছিলেন সাত ভাই, চার বোন। ১১ ভাইবোনের মধ্যে লারা ছিলেন দশম। লারার মতে, পরিবারের সদস্য সংখ্যাই একটা ক্রিকেট দল গঠন করার জন্য যথেষ্ট ছিল।
পারিবারিক ম্যাচের মধ্য দিয়ে লারার ক্রিকেট খেলার হাতেখড়ি। বয়সের বিচারে তাকে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে হতো। প্রথমে ব্যাট করতেন বড় ছয় ভাই। মারলিন, অ্যাগনেস আর ক্যাটলিন- তিন বড় বোনও লারার আগে ব্যাট করতেন। বড় ভাইবোনের ব্যাট চার বছরের লারার কাছে ভারী লাগতা। তাই বড় ভাই নারকেল গাছের ডাল কেটে একটা ব্যাট বানিয়ে দিয়েছিলেন। চার বছর বয়সে পাওয়া সেই ব্যাটটাই লারার জীবনের প্রথম ব্যাট।
লারা শুধু ক্রিকেটই নয়, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর জুনিয়র ফুটবল এবং টেবিল টেনিস খেলতেন। কিন্তু বিশ্বাস করতেন তার সাফল্যের পথ ক্রিকেট। পথিকৃৎ হিসেবে ভাবতেন গর্ডন গ্রিনিজ, ভিভ রিচার্ডস, রয় ফ্রেডরিকসকে এবং তাদেরকেই অনুসরণ করতেন।
আইসিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে লারা জানান, আমার বড় ভাই নারকেলের ডাল কেটে আমাকে ব্যাট বানিয়ে দিয়েছিলেন। আপনারা জানেন, ক্যারিবীয়ান দ্বীপ নারকেল গাছের জন্য বিখ্যাত। সেখানে সবাই নারকেল গাছকে খুব ভালোবাসে। যখন আমার ৪ বছর বয়স তখন নারকেলের ডাল দিয়ে বড় ভাইয়ের বানিয়ে দেওয়া ব্যাট দিয়ে খেলতাম। আমরা প্রচুর খেলতাম, রাস্তায় খেলতাম। হাতের কাছে যা পেতাম তাই বল বানিয়ে নিতাম। শক্ত কমলা, বাতাবি লেবু, মার্বেল দিয়ে বল বানাতাম।
সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের অন্যতম বলেও লারা স্বীকৃত। টেস্ট ও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট, উভয়টিতেই এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত রানের বিশ্বরেকর্ড তার দখলে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম খেলোয়াড় যিনি এক ইনিংসে ৪০০ রান করেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রায় ১২ হাজার রান করেছেন লারা। সাদা পোশাকে খেলেছেন ১৩১ ম্যাচ, ওয়ানডেতে খেলেছেন ২৯৯টি ম্যাচ। লারার বাবা বান্টি এবং বড় বোন অ্যাগনেস সাইরাস তাকে ছয় বছর বয়সেই স্থানীয় হার্ভার্ড কোচিংয়ে ভর্তি করে দেন। ফলে ওই ছোট্ট বয়সেই লারার পক্ষে ভালো ব্যাটিং শেখার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়। লারার বাবা ১৯৮৯ সালে না ফেরার দেশে চলে যান। পরের বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে তার অভিষেক হয়।
বাবার প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে লারা জানান, গ্রীষ্মে আমরা ফুটবল খেলতাম, আমি টেবিল টেনসিও খেলতাম। খুব ভালো খেলতাম। বাবা আমাকে ক্রিকেট খেলায় মন দিতে বলেন। আমিও বুঝতে পারছিলাম ক্রিকেট আমাকে বেশি টানে। ক্রিকেটে উন্নতি করতে সেদিকে মন দেই। আমার ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে বাবা আমাদের গ্রামে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। তিনি আমার জন্য অনেক করেছেন, সেরা লেভেলে যেতে তিনি অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন। পরিবারের এই আত্মত্যাগ আমি ভুলতে পারবো না।
১৪ বছর বয়সেই লারা স্কুল বয়েজ লিগে ৭৪৫ রান করেন। সেই টুর্নামেন্টে তার ব্যাটিং গড় ছিল চোখ কপালে তোলার মতো, ১২৬.১৬। যা তাকে ত্রিনিদাদের অনূর্ধ্ব-১৬ দলে ডাক পাইয়ে দেয়। ১৫ বছর বয়সে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। ওই বছরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৭ ছিল লারার জন্য সাফল্যের অন্যতম একটি বছর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি আগের বছরে কার্ল হুপারের গড়া ৪৮০ রানের রেকর্ড ভেঙে ৪৯৮ রানের নতুন রেকর্ড গড়েন।
সারাবাংলা/এমআরপি