তামিম এক নক্ষত্রের নাম
২০ মার্চ ২০১৯ ১৩:৫২
নিজের দিনে যেকোনো দলের বিপক্ষে রাজত্ব করতে পারতে তিনি। ব্যাট হাতে যেকোনো বোলারকেই বিধ্বস্ত করতে পারেন। বাংলাদেশ দলের হয়ে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে সবার চেয়ে বেশি রানও আছে তার। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালের আজ (২০ মার্চ) ৩০তম জন্মদিন।
১৯৮৯ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের কাজীর দেউরির খান পরিবারে জন্ম হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটিং তারকার। খেলাধুলার মধ্যেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। বাবা ইকবাল খান ছিলেন ফুটবলার, আর অন্যদিকে চাচা আকরাম খান ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড়। এছাড়াও বড় ভাই নাফিজ ইকবালও এই ক্রিকেট নিয়েই স্বপ্ন দেখেছেন। খেলাপ্রিয় পরিবারে বেড়ে উঠেই আজ ক্রিকেটের আকাশে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশ দলের উজ্জ্বলতম এই নক্ষত্র।
শুধু দেশসেরা ওপেনার হিসেবেই নয়, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেট ইতিহাসের দিকে তাকালে তামিমকেই হয়তো সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান বলতে হবে। কারণ ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাটেই শতক আছে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের।
ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বড় ইনিংস আছে তামিমেরই। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক আছে তার। ২০১৬ সালের মার্চে ভারতের ধর্মশালায় ওমানের বিপক্ষের ৬৩ বলে শতক পেয়েছিলেন তিনি। সেদিন চারটি বাউন্ডারি ও ৫টি ছক্কার মার ছিল তার ব্যাটে। টি-টোয়েন্টিতে দেশের হয়ে শুধু সর্বোচ্চ ইনিংসই নয়, এই ফরম্যাটে দেশের সেরা পাঁচটি ইনিংসের তিনটিই আছে তামিমের।
ওয়ানডেতে তার ১৫৪ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস। ২০০৯ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৩৮ বলে ৭ চার ও ৬ ছক্কায় এই ইনিংসটি খেলেন তিনি।
তবে টেস্টে তামিমের ২০৬ রানের ইনিংসটি হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। টাইগারদের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ২১৯ রানের ইনিংস আছে মুশফিকুর রহিমের, আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৭ রানের ইনিংস আছে দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের।
বাংলাদেশ দলের অসংখ্য ম্যাচ জয়ের নায়ক তামিমের দেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে সেদিন শুরুটা ভালো না হলেও ক্যারিয়ারটা ঠিকই উজ্জ্বল করে নিয়েছেন তিনি। ওয়ানডেতে সবমিলিয়ে ১৮৯ ম্যাচ খেলে ৪৪টি অর্ধশতক ও ১১টি শতকসহ ৬ হাজার ৪৬০ রান আছে তার।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের বছরই তামিম নিজেকে চিনিয়েছেন দারুণভাবে। সে বছর বিশ্বকাপে তার ব্যাটেই স্বপ্নভাঙ্গে ভারতের। সেদিন তার ব্যাট থেকে আসা ৫৩ বলে ৫১ রানের ইনিংসে ভর করে ভারতকে হটিয়ে জয় পায় টাইগাররা।
এছাড়াও টি-টোয়েন্টিতে একই বছরের (২০০৭ সাল) ১ সেপ্টেম্বরে কেনিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল তামিমের। এই ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ৭৫টি ম্যাচ খেলে ৬টি অর্ধশতক ও ১টি শতকসহ মোট ১ হাজার ৬১৩ রান আছে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের।
আর টেস্টে দেশের জার্সিতে তামিমের অভিষেক হয়েছিল ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সবমিলিয়ে ৫৮টি টেস্টে ব্যাট হাতে ৯টি শতক ও ২৭টি অর্ধশতকসহ তার রান আছে ৪ হাজার ৩২৭। সবশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে টাইগার দলের অন্য ব্যাটসম্যানরা যেখানে ক্রিজে দাঁড়াতে হিমসিম খেয়েছে, সেখান তামিম খেলেছেন দুটি অর্ধশতক ও একটি শতকের ইনিংস (৭৪, ১২৬, ৭৪)।
দলকে জেতানো অসংখ্য ইনিংস আছে তামিমের। সেগুলো লেখা হয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে। তবে গতবছর এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে তার বীরত্বের কথা হয়তো কখনোই ভুলতে পারবে না সমর্থক কিংবা বাংলাদেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কেউই।
দুবাইতে সেদিন শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুর দিকে আঙুলে বড় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। এরপর হাসপাতালেও নিতে হয়েছিল। তবে কোনো কিছুই যেন সেদিন তাকে আটকে রাখতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত মাঠে নেমেছেন, এক হাতে ব্যাট করে বল মোকাবিলা করেছেন। মুশফিককে সঙ্গ দিয়েছেন। মুশফিক খেলেছেন ১৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস। আর তামিম ২ রানে অপরাজিত ছিলেন। সেই ম্যাচে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ দল।
সেদিন হয়তো তামিমকে নতুনভাবেই চিনেছিল ক্রিকেটবিশ্ব। এমন অসংখ্য ইতিহাস হয়তো লিখে যাবেন বাংলাদেশ দলের অন্যতম এই কান্ডারি।
জন্মদিনে টাইগার দলের এই নক্ষত্রের জন্য শুভকামনা।
‘শুভ জন্মদিন তামিম’
সারাবাংলা/এসএন