জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে শক্তিটা জানান দিয়েছে বাংলাদেশ
২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ১৯:১২
মোসতাকিম হোসেন, মিরপুর থেকে
ফাইনালে উঠে গেছে আগেই, বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচ হতে পারত নিজেদের শক্তিটা জানান দেওয়ার আরেকটা উপলক্ষ। ব্যাটিংয়ে সেটা করতে না পারার জন্য যদি একটু খেদ থেকে থাকে, বোলিংয়ের পর তা ধুয়েমুছেই যাওয়ার কথা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯১ রানের জয়টা আরেকবার জানান দিল, মিরপুরে এই বাংলাদেশকে হারানো এখন যে কোনো দলের জন্যই বড় একটা পরীক্ষা।
লক্ষ্যটা অবশ্য জিম্বাবুয়ের সামনে খুব বেশি ছিল না। ওয়ানডের যুগে ২১৬ তো আসলে তেমন কোনো রানই নয়। তবে মিরপুরের উইকেট আর বাংলাদেশের বোলিং বলছিল, কাজটা খুব একটা সহজ হবে না। সাকিব আল হাসান আর মাশরাফি বিন মুর্তজা শুরু থেকেই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, জিম্বাবুয়েকে এই রান তাড়া করতে দুর্গম গিরি কান্তার মরু সবই পাড়ি দিতে হবে।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট পেতে পারতেন সাকিব, হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে রিভিউ নিয়েও আউট করতে পারেননি সাকিব। পরের ওভারেই অবশ্য বিদায় নিয়েছেন মাসাকাদজা, মাশরাফির বলে স্লিপে খোঁচা দিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন।
ধাক্কাটা সেখান থেকেই শুরু, প্রথম ১০ ওভারেই আসলে ম্যাচের ভাগ্য ঠিক হয়ে গেছে। ৭ রান করে সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে গেছেন সলোমন মিরে, তবে জিম্বাবুয়ে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে এরপর। মুখোমুখি প্রথম বলেই কোনো রান না করে ফিরে গেছেন অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর, সাকিবের সামনে হ্যাটট্রিকের হাতছানি। শেষ পর্যন্ত তা আর পাওয়া হয়নি। জিম্বাবুয়ের প্রথম চারজনের কেউই পারেননি দুই অঙ্ক ছুঁতে।
পরে অবশ্য সানজামুলও পেয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সুযোগ, তার আগে হয়ে গেছে অনেক কিছু। আরভিন ভালো কিছুর আশা দেখাচ্ছিলেন, কিন্তু মাশরাফি-সাব্বিরের যুগলবন্দির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে ফিরেছেন ১১ রানে। ৩৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়েই জিম্বাবুয়ে তখন কাঁপছে।
টাইগারদের জয়ের মুহূর্ত
Winning Moments of Bangladesh against Zimbabwe
Posted by Rabbitholebd.com on Tuesday, 23 January 2018
সিকান্দার রাজা পুরো সিরিজেই দারুণ খেলেছেন। আজও বিরুদ্ধ স্রোতে বৈঠা বাওয়ার কাজটা করতে হয়েছে তাকেই। রান অবশ্য আসছিল শম্বুক গতিতেই, মোস্তাফিজের প্রথম ২২ বল থেকেই কোনো রান আসেনি। চার ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র এক রান, তবে উইকেট পাননি। কে জানত, ম্যাচের সবচেয়ে প্রার্থিত উইকেট অপেক্ষা করছে তার জন্য?
পিটার মুর-রাজার জুটিটা যখন জমতে শুরু করেছে, তখনই সানজামুলের আঘাত। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা, মুরকে এলবিডব্লু করার পরের বলেই ওয়ালারকেও ফিরিয়ে দেন। জিম্বাবুয়ের প্রতিরোধের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুটা হলো তখন। গ্রায়েম ক্রেমার ও রাজার জুটিতে আসে ২৭ রান। সেই জুটি ভাঙেন রুবেল, ৩১ বলে ২৩ রান করে তার বলে ফিরে যান ক্রেমার। রাজা ছিলেন তখনো, মোস্তাফিজের বলে চার মেরে পালটা আক্রমণের আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু মোস্তাফিজই হাসলেন শেষ হাসি, রাজা বোল্ড হয়ে যান ৩৯ রানে। পরে সাকিব ও মোস্তাফিজ মিলে ছেটে দেন জিম্বাবুয়ের ম্যাচ।
অথচ ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের বোধ হয় ২০-৩০ রান কম হয়ে গেছে। মাশরাফির সিদ্ধান্তের যথার্থতা নিয়েও উঠে গিয়েছিল প্রশ্ন। অবশ্য শেষদিকে সানজামুল-মোস্তাফিজরা না থাকলে ২০০ হতো কি না সন্দেহ।
সাকিবের ৫১ রানের ইনিংস ভিডিও
এনামুল হক বিজয় দ্রুত ফিরে যাওয়ার পর অবশ্য বাংলাদেশকে পথেই রাখছিলেন তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসান। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরেই যেন হঠাৎ করে খোলসে ঢুকে গেলেন দুজন। রান নেওয়া হয়ে উঠল ভীষণ কঠিন, রাজা-ওয়ালারের তো পর পর দুই ওভারে কোনো রানই হলো না। শেষ পর্যন্ত সাকিব ফিফটি পেলেন, কিন্তু জমে থাকা চাপটাই যেন কাল হয়ে উঠল। রাজাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়েই হয়ে গেলেন স্টাম্পড। ৮০ বলে ৫১ রানের ইনিংসটা আর যাই হোক, ঠিক সাকিবসুলভ ছিল না।
তামিম অবশ্য আগের ম্যাচেও শুরুতে স্লথ ছিলেন, পরে তা পুষিয়ে দিয়েছেন। সাকিবের মতোই ফিফটি পেয়েছেন ঠিক ৭৮ বলে, এরপর অবশ্য স্ট্রাইক রেটটা বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যেই এক ভেন্যুতে সবচেয়ে বেশি রান, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ছয় হাজার এসব রেকর্ডও হয়ে গেছে। ফিফটি বা ছয় হাজার রানেও ব্যাটটা উঁচিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই সেঞ্চুরি আর পাওয়া হলো না। দায়টা নিজেকেই নিতে হবে, ক্রেমারের গুগলিটা বুঝতে না পেরে ক্রিজ ছেড়ে খেলতে গিয়ে হয়ে গেছেন স্টাম্পড।
তখনও অবশ্য বোঝা যায়নি, বাংলাদেশের এত বড় ধস আসছে। মুশফিকের শুরুটা ভালোই ছিল, কিন্তু ক্রেমারের বলে পেস বুঝতে না পেরে ক্যাচ দিয়েছেন ২৫ বলে ১৮ রান করে। মাহমুদউল্লাহও ক্রেমারের গুগলি বুঝতে না পেরে এলবিডব্লু ২ রানে, তার খানিক পরেই ফিরে যান তামিম। ১০৬ বলে ৭৬ রানের ইনিংসে তৃপ্তির চেয়ে অনেক বেশি আফসোসই থাকবে। বাংলাদেশ তখন ১৬৩ রানে হারিয়েছে ৫ উইকেট।
তামিমের ৭৬ রানের ইনিংস ভিডিও
এমন পরিস্থিতিতে সুযোগটা ছিল সাব্বির-নাসিরের। দুজন প্রথম দুই ম্যাচে সেভাবে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। কিন্তু আজ সুযোগ পেয়েও পায়ে ঠেললেন। সাব্বিরেরটা অবশ্য দুর্ভাগ্যই, জার্ভিসের বলে আরভিন শর্ট মিড উইকেটে যে ক্যাচ নিয়েছেন, সেটা অনেক দিন মনে রাখার মতো। কিন্তু নাসির আরও একবার ব্যর্থ, দায়টা, দায়টা নিজেকেই নিতে হবে। জার্ভিসের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা খোঁচা দিয়ে আউট হয়েছেন ২ রান করে। মাশরাফিও ফিরে যান কোনো রান না করে, হঠাৎ করেই ১৭০ রানে ৮ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে নবম উইকেটে মোস্তাফিজ-সানজামুল যোগ করেছেন ২৬ রান। তবে আসল রোমাঞ্চ বাকি ছিল তখনও। জার্ভিসের শেষ ওভার থেকেই চার-ছয়ে মোস্তাফিজ-রুবেল নিয়েছেন ১৩ রান। মোস্তাফিজ করেছেন ১৮, যেখানে এই ম্যাচের আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে রানই ছিল ১৭। ২১৬ যথেষ্ট কি না, এই প্রশ্নও উঠেছিল তখন। কে জানত, ম্যাচ শেষে তা রীতিমতো হাস্যকর হয়ে যাবে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২১৬/৯ (৫০ ওভার) (তামিম ৭৬, সাকিব ৫১, সানজামুল ১৯; ক্রেমার ৩২/৪, জারভিস ৪২/৩)
জিম্বাবুয়ে: ১২৫/১০ (৩৬.৩ ওভার) (রাজা ৩৯, ক্রেমার ২৩; সাকিব ৩৪/৩, মাশরাফি ২৯/২, সানজামুল ২৮/২, মোস্তাফিজ ১৬/২)
ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল
সারাবাংলা/এএম/এমআরপি