জাতীয় দল থেকে ‘এল পিপিতা’র অবসর
২৯ মার্চ ২০১৯ ০৫:৩০
আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার, ‘এল পিপিতা’ হিসেবে পরিচিত গঞ্জালো হিগুয়েন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এই ঘোষণা দেন তিনি। বর্তমানে ইংলিশ ক্লাব চেলসিতে ধারে খেলছেন হিগুয়েন।
আর্জেন্টিনার ফক্স স্পোর্টস চ্যানেলে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে হিগুয়েন বলেন, ‘জাতীয় দলের সঙ্গে আমার চক্র এরই মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে।’
অবসরের ঘোষণা দেওয়ার সময় খানিকটা অভিমানের সুর শোনা যায় হিগুয়েনের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘অনেকের খুশির কারণ হবে এটা। জাতীয় দলের হয়ে আমার চক্র শেষ হয়েছে। দলের অন্যদেরও (সিনিয়র) একই অবস্থা।’ এসময় জাতীয় দলের দুই সাবেক সতীর্থ হ্যাভিয়ের ম্যাশচারানো ও লুকাস বিলিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘দু’জনই গত বছর অবসর নিয়েছেন।’
হিগুয়েন জানান, এ মাসেই তিনি জাতীয় দলের কোচ লিওনেল স্কোলানির কাছ থেকে একটি ইমেইল পেয়েছিলেন। ওই ইমেইলে ইউরোপ ও আফ্রিকায় দু’টি প্রীতি ম্যাচ খেলার জন্য ডেকেছিলেন কোচ। কিন্তু হিগুয়েন তাতে সাড়া দেননি।
তবে দলে ঠাঁই পাওয়া বা না পাওয়া নয়, অবসরের কারণ হিসেবে পরিবারকেই তুলে ধরেছেন হিগুয়েন। তিনি বলেন, ‘আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ আমি পরিবারের সঙ্গ উপভোগ করতে চাই। আমার মেয়ের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে চাই। একইসঙ্গে আমি মনে করি, আমি আমার সাধ্যের সর্বোচ্চটুকুই আমার দেশকে দিয়েছি।’
ফুটবল নিয়ে এখন চেলসির হয়ে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেবেন বলেও উল্লেখ করেন। এর আগে স্প্যানিশ লা লিগা ও ইতালিয়ান সিরি আ’তে মাঠ মাতানো এই ফরোয়ার্ড এবারই প্রথম খেলছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। সে প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রিমিয়ার লিগ খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এখানকার খেলা আমি সর্বোচ্চ উপভোগ করতে চাই।
ক্লাব ফুটবলে বিভিন্ন দলকে একাই টেনে নিয়ে যাওয়া হিগুয়েন জাতীয় দলের জার্সিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ম্যাচেই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। সে কারণে সমর্থকদের রোষের মুখেও তাকে কম পড়তে হয়নি। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালসহ আগে-পরের দুইটি কোপা আমেরিকার ফাইনাল। কিন্তু তিনটি ম্যাচের সবগুলোতেই পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এই দলটিকে। প্রতিটি ম্যাচেই হিগুয়েন একাধিক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। যে কারণে দলে ক্রমশ ব্রাত্য হয়ে পড়তে থাকেন। সর্বশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা আশানুরূপ খেলতে না পেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়ে। এই টুর্নামেন্টে মাত্র একটি ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
জাতীয় দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে ব্যর্থতার জন্য সমালোচিত হলেও দলের সেরা স্কোরারদের মধ্যে তাকে একজন হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি নেই কারও। ২০০৯ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর ৭৫টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তাতে গোল পেয়েছেন ৩১টি।
তবে ক্লাব ক্যারিয়ার আরও অনেক বেশি সমৃদ্ধ এল পিপিতা’র। আর্জেন্টাইন জায়ান্ট রিভারপ্লেটে খেলে নজর কাড়েন ইউরোপীয় দলগুলোর। ২০০৭ সালে তাকে স্পেনে উড়িয়ে নিয়ে আসে লা লিগার একসময়কার গ্যালাকটিকো রিয়াল মাদ্রিদ। এই ক্লাবেই স্বর্ণযুগ পার করেছেন হিগুয়েন। ১৯০ ম্যাচে করেছেন ১০৭ গোল। ২০১৩ সালে মাদ্রিদ ছেড়ে ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন। সেখানে ১০৪ ম্যাচ খেলে করেন ৭১ গোল। সিরি আ’র আরেক জায়ান্ট জুভেন্টাসে পাড়ি জমান এরপর। জুভিদের জার্সিতেও নিজেকে মেলে ধরতে অসুবিধা হয়নি তার, ৭৩ ম্যাচে ৪০ গোল তারেই প্রমাণ। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ মৌসুমে জুভেন্টাস থেকে ধারে খেলেন ঐতিহ্যবাহী এসি মিলানের হয়ে। চলতি মৌসুমেও ধারেই খেলছেন গঞ্জালো হিগুয়েন, ইংলিশ লিগের জায়ান্ট চেলসিতে।
সারাবাংলা/আইই/টিআর