বাংলাদেশের খেলার ফেরিওয়ালা তিনি
১ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৩১
ঢাকা: মানুষের কত নেশাই না থাকে। কারও বই পড়ার নেশা কারও বই সংগ্রহের নেশা। কারও খেলার নেশা, কারও টিকিট সংগ্রহের নেশা। কিন্তু এমন মানুষ কি পেয়েছেন যিনি চার যুগের বেশি সময় পুরোনো ছবি সংগ্রহ করে রেখেছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ইতিহাস জমিয়ে রেখেছেন। তার সংগ্রহে আছে প্রায় লাখেরও উপর দুর্লভ ছবি, বিরল কোটপিন আর অজস্র ব্যাংকনোট।
খেলার জগতে তেমনই একজন ফেরিওয়ালার গল্পই আজ জানবো। তার নাম নাজমুল আমিন কিরণ। খেলাজগতের এই মানুষটি বাংলাদেশের খেলার বিরল সব ছবি জমিয়েছেন। ভারতের মাটিতে ঐতিহাসিক আতহার আলী খানের ম্যান অব দ্য ম্যাচের মুহূর্ত, বিশ্ববিখ্যাত মোহাম্মদ আলীর বাংলাদেশ পরিদর্শন কিংবা স্বাধীন বাংলা দলের দুর্লভ সব ছবি। সবই তার সংগ্রহে আছে।
খেলার প্রতি অনেক ভালোবাসা থেকেই এমন নেশায় মেতেছেন জানালেন কিরণ, আব্বা সরকারি চাকুরিজীবি ছিল। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। আট জেলায় ঘোরা হয়েছে। তখন থেকেই খেলা, লেখা আর ছবি সংগ্রহের নেশা উঠে। ঝোঁকটা ছিল পেপার কাটিং কালেকশন। কারণ পেপারে যে ছবিটা ছাপা হয় সেটা কিন্তু দলিল। ওই ছবিতে মিথ্যা বানানোর কিছু নেই। সে কারণে পেপার কাটিং ছবিটা অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
শুধু তাই নয় বাসায় সবসময় কাঁচি রাখতেন তিনি! কি কারণে সেই কাঁচি, ‘ছোটবেলায় খুব খেলতাম তো। শখের বশেই খেলার ছবি সংগ্রহের ইচ্ছা জাগে। বাসায় যখন পেপার ছিল তখন ছবি কেটে রাখতাম। আব্বা সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার ছিল। মেডিসিন যে পেপারে দিতো সেখান থেকেও ছবি কেটে রাখতাম। স্টোরেও পুরান পেপার থাকতো কেটে নিতাম খেলার ছবি। রুমে একটা কাঁচি থাকতোই।
একসময় নিজেও পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন। তারপর ব্যাট-বল ছেড়ে নেমে পড়েছেন সাংবাদিকতায়। বিচিত্রা ও ক্রীড়াজগতের মতো প্রসিদ্ধ ম্যাগাজিনে ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। জমিয়েছেন বিরল ইতিহাস।
মজার বিষয় হলো কাজী সালাউদ্দীন, আব্দুস সালাম মুর্শেদি, নান্নু, কায়সার হামিদের মতো সাবেক তারকা খেলোয়াড়রা তার বাসায় ভিড় জমান ছবির অনুরোধ নিয়ে। চার যুগের এই বিরল রেকর্ডগুলো জমাতেও বেশ ঘাম ঝড়াতে হয়েছে তাকে। সবগুলো ছবি স্ক্যান করে বহুকষ্টে কম্পিউটারে রিজার্ভ করে রেখেছেন তিনি।
https://www.facebook.com/Sarabangla.net/videos/1997091377251699/UzpfSTEwMDAwMTAwMzg0NTQzMDozMDYwNjExMjk0OTk0MTQ6MTA6MDoxNTU2NjkzOTk5OjIxMTM4NTY0OTUyOTk2NzkxOTA/
নিজের অফিসে উল্টে-পাল্টে সেই ছবিগুলো দেখাচ্ছিলেন এবং নিয়ে যাচ্ছিলেন সেই ইতিহাসে। চোখ চড়ক গাছে উঠে যাওয়ার ব্যাপার হলো যখন তিনি দেখালেন আমেরিকার সবকটা রাজ্যের সবগুলো মূদ্রা! এও সম্ভব!
বর্তমানে কিরণ সাবেক জাতীয় ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ক্যারিয়ার নিয়ে একটি বই নিয়ে কাজ করছেন। সে ব্যাপারে জানান এই পাবনার সংগ্রহক, ‘বইটা সালাম মুর্শেদির ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে বিশাল ভলিউম। তার খেলোয়াড় জীবন, সাংগঠনিক জীবন, ব্যবসায়িক জীবন তুলে ধরা হবে। ফুটবল জীবনকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তার ক্যারিয়ারের প্রায় হাজার খানেক ছবি থাকবে এ বইয়ে। এ বইয়ে মূলত প্রাধান্য পাবে ঢাকার ফুটবলে তার ২৭ গোলের রেকর্ড।
প্রাপ্তির মধ্যে একটা অপ্রাপ্তি কুড়ে কুড়ে খায় তাকে। এতো বিরল সংগ্রহ নিয়েও কখনও প্রদর্শনী করতে পারেননি তিনি। তার মুখে সেই আক্ষেপের সূর, ‘চার দশক ধরে ছবিগুলো জমিয়েছি। খেলোয়াড়দের ছবিগুলোইতো সংগ্রহ করি। স্মৃতিগুলো ধরে রাখি। বাংলাদেশের খেলার ইতিহাস যে আমি ধরে রাখছি কি জন্য? বর্তমান প্রজন্মকে দেখানোর জন্য। কিন্তু আজ পর্যন্ত এখনও কোন প্রদর্শনী করতে পারিনি।’
‘কষ্ট লাগে সবাই কিন্তু আমার কাছে ছবি নেয়। বেশিরভাগ সুপারস্টার ছবি নেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি।’ যোগ করেন তিনি।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জমিয়ে রাখা এই মানুষটি কি পারবেন প্রদর্শনী করতে? কিছু টাকাই পারবে সেই সুযোগটা করে দিতে?
সারাবাংলা/জেএইচ
https://www.youtube.com/watch?v=jmDe2Xvtoy8
আব্দুস সালাম মুর্শেদী কাজী সালাউদ্দীন নাজমুল আমিন কিরণ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন স্পোর্টস স্পেশাল