ক্রিকেট খেলে সংসার চালানো এক তরুণের গল্প
৬ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৮
বয়স ২৩ বছর। অবয়বে বিত্ত-বৈভবের ছাপ একেবারেই নেই। দেখেই বোঝা যায় কতটা ঝঞ্ঝা, বিক্ষুব্ধ তার জীবন। চেহারার সঙ্গে বাস্তবের মিলও হুবহু। ছোটবেলা থেকেই চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে আসছেন। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম বলতে ছিলেন বাবা মোহাম্মদ আশিক খান। পেশায় পানের দোকানী। সেই দোকানটিও প্রশাসন ভেঙে দিল। বাবার আয় বন্ধ হয়ে গেলে অগত্যা সংসারের হাল ধরতে হলো তাকেই। ক্রিকেট খেলে যা আয় করেন তাই দিয়ে তাদের তিন বেলা অন্ন জোটে।
নাম আবেশ খান। আইপিএলের চলতি আসরে খেলছেন দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে। মধ্যপ্রদেশের এই পেসার বল হাতে নিলেই প্রতিপক্ষের জন্য মূর্তমান ত্রাস হয়ে ওঠেন।
আবেশের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিলো নেট বোলার হিসেবে। টিম ইন্ডিয়ার নেট বোলার হয়ে প্রথম গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। এরপর গেল বছর এশিয়া কাপ মাঠে গড়ানোর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে নেটে বল করার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মাদের নেটে বল করে অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে ‘নেট বোলার’- থেকে সরাসরি জায়গা করে নিয়েছেন আইপিএলে। হয়ে উঠেছেন সৌরভ-পন্টিংয়ের দিল্লি ক্যাপিটালসের অন্যতম ভরসার পাত্র।
ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচাইতে জমজমাট আসর আইপিএলে আবেশের অভিষেক হয়েছিলো ২০১৭ তে, বেঙ্গালুরেুর হয়ে। ওই আসরে আহামরি সাফল্য দেখাতে পারেননি। তবে পরের আসরে সেসময়ের দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে সাত ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন আবেশ।
আবেশের বাবার একটা ছোট পানের দোকান ছিল মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে। সেখান থেকে যা উপার্জন হত তা দিয়েই তাদের সংসার চলত। প্রতিদিন সাকুল্যে আয় হত ৫০০ টাকা। কিন্তু হঠাৎ করেই ভাগ্য দেবী প্রসন্ন দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন। রাস্তা চওড়া করতে হবে বলে বাবা আশিক খানের পানের দোকানটি ভেঙে দিল স্থানীয় প্রশাসন। যৎসামান্য আয়ের পথটিও বন্ধ হয়ে গেল।
জীবন যুদ্ধের শুরুটা হল তখন থেকেই। টানা দুই বছর ক্ষুধা ও দারিদ্রের সঙ্গে যুঝতে হয়েছে তার পরিবারকে। বাবার আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশোনার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালালেও সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। পেট বাঁচাতে পড়াশোনা ছেড়ে আয়ের উৎস হিসেবে ক্রিকেটকেই বেছে নিতে হয়। এরপর ভাগ্যদেবী দৃষ্টি ফেরালে ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পান আবেশ।
২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারত দলে জায়গা করে নেন। নিজ রাজ্য মধ্যপ্রদেশের হয়েও খেলেন। অতঃপর আইপিএল দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পাওয়ার আগে ইনদওরে ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান অময় খুরেশিয়ার অ্যাকাডেমি থেকে অনূর্ধ্ব-১৬ দলে ডাক পান আবেশ। ১৭ দিনের ক্যাম্প থেকে ১৭০০ টাকা পেয়ে ১৫ বছর বয়সেই সংসারে সাহায্য করা শুরু করেছিলেন।
রাজ্য দল, অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের হয়েও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছিল তাঁর। ২০১৮-১৯ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে ৭ ম্যাচে ৩৫ উইকেট শিকারি তিনি।
সারাবাংলা/এমআরএফ