বিশ্বকাপ মঞ্চে অভিজ্ঞ ৮ টাইগার
১৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:০১
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ঘনিয়ে আসছে সেই সাথে বাড়ছে আলোচনা-সমালোচনা আর বিশ্লেষণ। কিছুদিন আগেই ঘোষণা হলো টাইগারদের বিশ্বকাপ স্কোয়াড। তা নিয়ে চলছে ব্যবচ্ছেদ। কার পারফর্ম্যান্স কেমন, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে ক্রিকেট পাড়ায়। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভবনা নিয়েও কম কথা হচ্ছে না।
২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্কোয়াডের মধ্যে আট জনেরই আছে এর আগে কমপক্ষে একটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক চার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন মাশরাফি মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিম। দু’টি করে বিশ্বকাপ খেলেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর রুবেল হোসেন। আর একটি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান।
২০০৩ সালে প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে বসেই দেখতে হয় বিশ্বকাপ। তা না হলে পাঁচ বিশ্বকাপ খেলার বিরল অভিজ্ঞতা থাকত তার ঝুলিতে।
সাকিব,মুশফিক আর তামিমের বিশ্বকাপে অভিষেক হয় ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ দিয়ে। আর সেই থেকেই দলের ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠে এই ত্রয়ী। এর ভেতরে সাকিব ঘরের মাঠে ২০১১ এর বিশ্বকাপে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। আর অভিষেকের পর থেকে তামিম ইকবালকে ছাড়া বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি তো কল্পনাতীত। ভরসার প্রতীক মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিম উইকেটের পেছনের অতন্দ্র প্রহরী।
২০১১তে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক ছিলেন প্রথম বিশ্বকাপ খেলা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সেবার দলে ছিলেন রুবেল হোসেনও। আর গেল বিশ্বকাপে উঠে আসেন সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান।
দলনেতা মাশরাফি মর্তুজা
এখন জাতীয় দলের সব থেকে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। চার বিশ্বকাপের সব মিলিয়ে মিলেছে ১৬ ম্যাচ খেলার সুযোগ। তাতে মাশরাফির ঝুলিতে আছে ১৮ উইকেট, যা কিনা সাকিব আল হাসানের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সে জয়ে মাশরাফির অসাধারণ বোলিংয়েই মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিলো ভারতের ইনিংস। ম্যাচ সেরা পুরস্কারও নিজের করে নিয়েছিলেন মাশরাফি।
আর ২০১৫ বিশ্বকাপে তো তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ খেলেছিল প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। সেবার আর ২০০৭-এর মতো ভারতের ব্যাটিং লাইন আপকে লণ্ডভণ্ড করতে পারেননি ম্যাশ। তবে দলকে নিয়ে দিয়েছিলেন প্রথমবারের মতো কোয়ার্টারে খেলার স্বাদ।
ম্যাচ রান উইকেট সর্বোচ্চ রান সর্বোচ্চ উইকেট
১৬ ১৬৫ ১৮ ৩৭ ৪/৩৮
সাকিব আল হাসান
সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ২০১১ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। তবে তার অভিষেক বিশ্বকাপ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে ২০০৭ সালে। বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানই বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার। তিন বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে খেলেছেন ২১ ম্যাচ। আর জয়ের সব অর্জনে ভূমিকা রেখেছেন সামনে থেকেই। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চসংখ্যক উইকেট শিকারিই শুধু নন, ৫৪০ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীও সাকিবই।
ম্যাচ রান উইকেট সর্বোচ্চ রান সর্বোচ্চ উইকেট শতক/অর্ধশতক
২১ ৫৪০ ২৩ ৬৩ ৪/৫৫ ০/৫
তামিম ইকবাল
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী তামিম ইকবাল। আর বলা চলে এখন পর্যন্ত টাইগারদের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানও তিনি। বিশ্বকাপে অভিষেক সেই ২০০৭ সালে। ভারতের বিপক্ষে জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে উড়িয়ে মারা ছয় এখনো ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে জ্বলজ্বল করে। সাকিব আর মুশফিকের পরে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের সর্বোচ্চ রান ২০১৫তে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫।
ম্যাচ রান সর্বোচ্চ রান শতক/অর্ধশতক
২১ ৪৮৩ ৯৫ ০/৩
মুশফিকুর রহিম
মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিমেরও এটি হতে যাচ্ছে চতুর্থ বিশ্বকাপ। আগে খেলা তিন বিশ্বকাপে সাকিবের পরে তিনিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ২১ ম্যাচ খেলেছেন তিন বিশ্বকাপ মিলিয়ে। তিন বিশ্বকাপে উইকেটের পেছনে থেকে ১৩টি ক্যাচ ধরেছেন, আর স্ট্যাম্পিং করেছেন ৫টি।
ম্যাচ রান সর্বোচ্চ রান শতক/অর্ধশতক ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং
২১ ৫১০ ৮৯ ০/৪ ১৩/৫
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র শতক হাঁকানো ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শুধু শতক নয়, টানা দুই শতক হাঁকিয়েছিলেন ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। ‘দ্য সাইলেন্ট কিলার’ নাম দিয়েছেন তাকে টাইগার সমর্থকেরা। সবসময় থাকেন একটু আড়ালে, তার অর্জনগুলো ঢাকা পড়ে যায় অন্য কারও কীর্তিতে। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডকে হারানো ম্যাচে যখন আশা ছেড়ে দিয়েছিল সবাই, তখনও মাঠে মাহমুদুল্লাহ। হাল ছাড়েননি এক মুহুর্তের জন্যও। শফিউলকে সঙ্গে নিয়ে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে বধ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। আর ২০১৫-এর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অকল্পনীয় কীর্তি গড়তে মাহমুদুল্লাহ রেখেছিলেন প্রত্যক্ষ ভূমিকা। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে পরপর দুই ম্যাচে করেছিলেন সেঞ্চুরি। ১০৩ রান করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, পরের ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ছিলেন ১২৮ রানে।
ম্যাচ রান উইকেট সর্বোচ্চ রান শতক/অর্ধশতক
১০ ৩৯৭ ৪ ১২৮* ২/১
রুবেল হোসেন
ম্যাচ রান উইকেট সর্বোচ্চ রান সর্বোচ্চ উইকেট
১২ ১১ ১৩ ৮ ৪/৫৩
সৌম্য সরকার
সে সময় তামিমের উদ্বোধনী সঙ্গী হিসেবে নিয়মিত ছিলেন আনামুল হক বিজয়। তবে ওই যে কথায় বলে, কারও পৌষ মাস আর কারও সর্বনাশ! ২০১৫ বিশ্বকাপে এমনটিই ঘটেছিল। ফিল্ডিং করার সময় কাঁধে চোট পেয়ে বিজয়ের বিশ্বকাপ সেখানেই শেষ। আর ভাগ্য খুলে যায় সৌম্যের। মিডিয়াম পেসার অলরাউন্ডার হিসেবে দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন সে বিশ্বকাপে। সেখান থেকে পথচলা শুরু। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথম বিশ্বকাপে জানান দিয়েছিলেন, তিনি হারিয়ে যেতে আসেননি। তবে প্রত্যাশার ভারও খুব একটা মেটাতে পরেননি। ৬ ম্যাচ খেলে অর্ধশতক পেয়েছেন একটি, রান করেছিলেন ১৭৫।
ম্যাচ রান সর্বোচ্চ রান শতক/অর্ধশতক
৬ ১৭৫ ৫১ ০/১
সাব্বির রহমান
২০১৫ সালে বিশ্বকাপ দিয়ে পথচলা শুরু বিশ্বকাপে। সেখান থেকেই দলের নিয়মিত মুখ সাব্বির। অস্ট্রেলিয়ার সিমিং কন্ডিশনে দারুণ খেলেছিলেন সাব্বির। এবারও ইংল্যান্ডের পেস, সুইংয়ের কথা মাথায় রেখে দলে ডাক পেয়েছেন সাব্বির। সম্ভবত ব্যাটিং অর্ডারের শেষভাগে ঝড় তোলার দায়িত্ব থাকবে তার কাঁধেই।
ম্যাচ রান উইকেট সর্বোচ্চ রান শতক/অর্ধশতক
৬ ১৮২ ১ ৫৩ ০/১
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করা স্কোয়াডের ৮ জনই খেলেছেন এর আগে কমপক্ষে একটি বিশ্বকাপ। এবার তাই টাইগার ক্রিকেট ভক্তরা স্বপ্ন দেখছেন দল কমপক্ষে সেমিফাইনালে খেলবে। তবে ফলাফল কী হবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ মে বিশ্বকাপ শুরু হওয়া পর্যন্ত।
সারাবাংলা/এসএস
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ তামিম বাংলাদেশ ক্রিকেট মাশরাফি মাহমুদুল্লাহ মুশফিক রুবেল সাকিব সাব্বির সৌম্য