Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আয়াক্স যেন এ মৌসুমে ফিনিক্স পাখি


১৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:৩৫

ফুটবল প্যাশনের কাছে হারতে হয় সবকিছুকেই। কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের দলে যোগ করলেও প্যাশনের সাথে পেরে ওঠা মুশকিল। এটি আবারও প্রমাণ করে চলেছে ডাচ ফুটবল ক্লাব আয়াক্স।

শেষবার ১৯৯৪-৯৫ সালে আয়াক্স ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল। আর ডি ক্রুইফ যখন আয়াক্সের জার্সি জড়িয়ে মাঠ মাতাতেন তখন জিতেছিলেন টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ। ৯০’র দশকে আয়াক্স ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষের দিকের ক্লাব গুলোর একটি। তবে বিশ্বায়নের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারায় একবিংশ শতাব্দীতে এসে কিছুটা ম্লান আয়াক্সের ইতিহাস।
তবে আয়াক্স তাদের অতীতের জৌলুস হারালেও হারায়নি তাদের ঐতিহ্য। এখনো ইউরোপীয় সেরা ক্লাবের তালিকা করলে সেরা দশে নাম আসবে ডি ক্রুইফের আয়াক্সের।

বিজ্ঞাপন


ডি ক্রুইফ যার ফুটবল দর্শনে বদলে গিয়েছিল পুরো ফুটবল বিশ্ব। আয়াক্সের জৌলুস ভরা ইতিহাস কিংবা বার্সেলোনার ইউরোপ শাসনের নতুন অধ্যায়। সবকিছু তার হাতেই রচিত।

অনেকে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার ফুটবল একাডেমিকে বলে থাকেন ইতিহাসের সেরা ফুটবল একাডেমি। তবে যারা নিয়মিত ফুটবল পাড়ার খোঁজ রাখেন তারা জানেন ফুটবল ইতিহাসের সেরা ফুটবল একাডেমি ডাচ ক্লাব আয়াক্সের। যে একাডেমি থেকে উঠে এসেছেন সর্বকালের সেরাদের কাতারে থাকা ডি ক্রুইফ। কিংবা মার্কো ভ্যান বাস্তিন, ডেনিশ বার্কেম্প কিংবা প্যাট্রিক ক্লুভার্টের মত কিংবদন্তিরা।

আর বর্তমানে ফুটবল মাতানো ক্রিস্টিয়ান এরিকসন কিংবা লুইস সুয়ারেজের মত তারাকারাও উঠে এসেছিল আয়াক্সের যুব একাডেমি থেকেই। নিঃসন্দেহে তাই বলা যায় যদি কোন ফুটবল একাডেমিকে সেরার খেতাব দিতে হয় তা দিতে হবে আয়াক্সকে।
এতো গেল আয়াক্স একাডেমি কিংবা তাদের জৌলুসে ভরা অতীতের কথা। বর্তমান সময়ে ইউরোপীয় ফুটবল জগৎ শাসন করা রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা একজন ফুটবলারের নাম বলতে গেলে বলতে হবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কথাও। চ্যাম্পিয়নস লিগে অপ্রতিরোধ্য এই দুই।  ক্লাব হিসেবে সর্বোচ্চ ১৩টি চ্যাম্পিয়নস লিগ রিয়াল মাদ্রিদের ঘরে। আর বর্তমানে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পাঁচ বার ইউসিএল শিরোপা উঁচু করে ধরেছেন রোনালদো।

বিজ্ঞাপন

আয়াক্সের রূপকথায় এই দুই নাম আসাছে তার পেছনের কারণটা নেহাৎ ফেলে দেওয়ার মত নয় বলেই। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলর লড়াইয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে তাদেরই ডেরাতে ৪-১ গোলে পরাজিত করে টিকিট পায় কোয়ার্টার ফাইনালের। আর সদ্য রিয়াল থেকে জুভেন্টাসে পাড়ি জমানো রোনালদোর তুরিনের অ্যালিয়েঞ্জ স্টেডিয়ামে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েই নিশ্চিত হয় সেমি ফাইনেলের টিকিট।
এই দুইকে হারানো চাট্টিখানি কথা ছিল না। নাম ডাক কিংবা সম্মানে কোন অংশে কম ছিল না দু’দলের কেউই। তবে আয়াক্সের কাছে হয়তো অর্থ ছিল না। তবে যা ছিল তা হল ফুটবলের প্রতি প্যাশন আর নিজেদের প্রমাণের তীব্র আকাঙ্খা।

এ মৌসুমের আগে টানা তিন মৌসুমই চ্যাম্পিয়ান্স লিগে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয় তারা। তবে ২০১৬-১৭ মৌসুমে খেলেছিল ইউরোপা লিগের ফাইনাল। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে সেবার হেরে ভঙ্গ হয় ১৯৯৪-৯৫ সালের পর প্রথম ইউরোপের কোন শিরোপা জয়ের আশা।

এত দিন আয়াক্স একাডেমি বাকি ফুটবল বিশ্বে শুধু বিশ্বমানের ফুটবলার দিয়েই গেছেন। এর পেছনে কারণ ছিল ক্লাবটির আর্থিক অস্বচ্ছলতা। তবে এবার ক্লাবটি এ তকমা থেকে নিজেদের বের করে আনার প্রয়াসে বেশ উন্মুখ হয়ে আছে। পরিবর্তন এনেছে নিজেদের আর্থিক কাঠামোয়, সেই সাথে ক্লাবের ফুটবলার বিক্রির বিষয়েও এনেছে আমূল পরিবর্তন।

এখন তারা আগের থেকে আর্থিক ভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। ফুটবলারদের বিক্রি করে লাভবান হওয়া ছাড়াও নিজেদের আরও বেশি শক্তিশালী করতে ধরে রাখতে পারে একাধিক ফুটবলারকেও। আর নিজেদের প্রয়োজনে দরকার পড়লে নতুন ফুটবলারকে কিনে আনতে প্রস্তুত আয়াক্স।


তাদের দলের অধিকাংশ ফুটবলারই তরুণ। এর ভেতরে ম্যাথিস ডি লিট মাত্র ১৯ বছর বয়সেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলকে। ২১ বছর বয়সী ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং ইতিমধ্যে নাম লিখিয়েছেন বার্সেলোনায়। তবে এ মৌসুমে এখনো খেলছেন আয়াক্সের হয়ে।

ক্রুইফ দর্শনের পর আবারও দারুণ ফুটবল খেলছে আয়াক্স। বড় দল গুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলেই উতরে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা জুভেন্টাসের মত বাঁধাও।

এবার তাদের নতুন রূপকথা গড়ার পালা। ঠিক রিয়াল বা জুভেন্টাসকে যেভাবে পাত্তা না দিয়ে হারিয়ে সেমির টিকিট পেয়েছে, ঠিক সেভাবেই পঞ্চম ইউসিএল জিতে ফিনিক্সের উত্থান হবে বলে আশা আয়াক্স সমর্থকদের।

সারাবাংলা/এসএস

আয়াক্স উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ডি ইয়ং ডি ক্রুইফ ডি লিট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর