হোম অব ক্রিকেটে মাশরাফির সঙ্গে সারাবাংলা’র ৩ মিনিট
৩০ এপ্রিল ২০১৯ ২২:৫৩
বিশ্বকাপ-২০১৯ সামনে রেখে জাতীয় ক্রিকেট দলের দেশের মাটিতে শেষে দিনের অনুশীলন ছিল সোমবার (২৯ এপ্রিল)। সকাল থেকেই মাঠে বেশ খাটতে দেখা যাচ্ছিলো দলপতি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকে। সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হওয়া হাড়ভাঙা প্রস্তুতি চললো দুপুর ১২টা অবধি। এর আধা ঘণ্টা পরে ঠিক সাড়ে ১২টায় এলেন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে। সেটা চললো সোয়া একটা পর্যন্ত। সংবাদ সম্মেলন শেষে না হতেই বিসিবি সভাপতি ও সতীর্থদের নিয়ে বসলেন দুপুর খাবার খেতে। খাবার শেষ করে জার্সি উন্মোচন ও আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে অংশ নিলেন। সে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে হতে ঘড়ির কাঁটায় বেলা সোয়া তিনটা।
বৈশাখের তপ্ত রোদের নীচে এত কিছু করার পর সতীর্থরা যেভাবে বাসায় ফিরে গেলেন তারও ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু গেলেন না। আরও কিছুক্ষণ থেকে গেলেন হোম অব ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। সেটা অবশ্য অন্য কোন কারণে নয়। সংবাদ কর্মীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতেই। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে অনেকেই তার সাক্ষাৎকার চেয়েছিলেন। নানাবিধ ব্যস্ততায় যা এতদিন সম্ভব হয়ে উঠেনি।
সামনে আর সময়ও নেই। বুধবার (১ মে) সকালেই ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে আয়ারল্যান্ডের উদ্দেশে উড়াল দিতে হবে। সেদিন না দিলে আর সম্ভব হবে না। তাই মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সম্মেলন কক্ষ ও তার আশপাশে চললো ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার। একে একে সাক্ষাৎকার দিয়ে চলেছেন বিভিন্ন মিডিয়াকে। ততক্ষণে সূর্য পশ্চিমাকাশে আরও অনেকটা ঢলে পড়েছে। শরীর থেকে দরদর করে ঝড়ছে ঘাম। তবুও যেন ক্লান্তি নেই! সারাবাংলা.নেট’র পালা যখন এলো ততক্ষণে বিকেল সাড়ে ৫টা।
প্রশ্নপত্র হাতে অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম অপেক্ষায়। চোখ কিছুটা বাঁকিয়ে দেখে নিলেন। বললেন,‘আসেন ভাই এবার আপনার পালা।’
এগিয়ে যেতেই বললেন, ‘চলেন হাঁটি। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি। সময় তিন মিনিট।’
এতক্ষণ ছিলেন মাঠের প্রেসবক্স জোনে। চললেন, ড্রেসিং রুমের দিকে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুযোগ কেমন দেখছেন? সারাবাংলার প্রথম প্রশ্নটি ছিলো সরাসরি।
স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় পাশ ঘুরে জড়িয়ে ধরে রসিকতাভরা কণ্ঠে বললেন, ‘অনেক সুযোগ ভাই। যাব, খেলব আর দেশে আসব।’
‘ভাই, রেকর্ডিং চলছে’- বলাতেই সতর্ক হয়ে বললেন, ‘সুযোগতো অবশ্যই আছে। গুরুত্বপুর্ণ হল, সুযোগটা কোন লেভেল পর্যন্ত।’
‘সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ যে নেই তা নয়। সেটা আছে। তার জন্য আসলে আমাদের ওপর অনেক ধাক্কা আসবে। সেটা সামলাতে হবে।’
কিছুটা ধীর লয়ে হাঁটছি। পাশেই আরো কয়েকজন সংবাদকর্মী ও তার শুভানুধ্যায়ীরা এসে যোগ দিলেন। সেদিকে তাকানোর সময় নেই। সরাসির দ্বিতীয় প্রশ্ন… বাংলাদেশের এখনকার বোলিং আক্রমন (পেস ও স্পিন) বিশ্বকাপের আসরে কতটা কার্যকর হবে?
লাল সবুজের ক্রিকেটের দিন বদলের দলপতির ঝটপট উত্তর, ‘পারফেক্ট না আইডিয়েলও না… তবে ব্যালান্সড নয় এটাও বলব না।’ বোলারদের সবাই সবার সেরাটা দিলে… আমাদের বোলিং আক্রমন দেশের কন্ডিশনে সেরা বলতে হবে, তবে ইংল্যান্ডের কন্ডিশনের জন্য তা হয়ত টপ অব দ্য টেবিল নয়।’
ভাবনার কথা বটে। ফলে দ্রুতই চলে এলো বোলিং-ব্যাটিংয়ে অন্যতম ভরসা সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গ। আঙ্গুলে চোট পেয়ে কিছুদিন বিশ্রামে ছিলেন তিনি।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে সাকিবের অনুপস্থিতি বাংলাদেশকে কতটা ভুগিয়েছে? প্রশ্নটি ছুড়তেই গলাটা সামান্য চড়িয়ে বললেন, ‘আপনি যে ক্রিকেটেই যান না কেন, সাকিবের অনুপস্থিতি দলকে কিছুটা ভোগাবেই। কোন সন্দেহ নেই।’
সম্পুরক প্রশ্ন- বিশ্বকাপে সাকিবকে দলে পাচ্ছেন এটা কতটা আনন্দের? বোধ হয় প্রশ্নটির জন্য প্রস্তুত ছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত টাইগার অধিনায়ক।
‘সাকিবকে বিশ্বকাপ দলে পাব এটা নিশ্চিত ছিলাম। সাকিব সুস্থ থাকলে দলে থাকবেই। ওকে পাওয়ার জন্য সবাই মরিয়া হয়েই ছিল। স্বস্তি বা আনন্দ বড় বিষয় নয়। তবে ওকে পাওয়া না গেলে সেটা হত বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সবচাইতে বড় খবর।’
এলো লিটন দাসের প্রসঙ্গ। কারণটি পরিষ্কার। ওপেনিং অর্ডারে তার সামর্থ্য অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ। হাতে গোনা দু একটি সাফল্য থাকলেও তার ধারাবাহিক ব্যর্থতার অনেকেই ভাবছেন বিশ্বকাপে তাকে তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামানো কতটা কার্যকর হবে?
প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফির সরাসরি প্রতিবাদ। বললেন, ‘না, ওকে তো টপ অর্ডারের জন্যই রাখা হয়েছে। খেললে ওপেনার হিসেবেই খেলবে।’
ততক্ষণে মাঠের প্রায় শেষ প্রান্তে। সারাবাংলার এবারের প্রশ্ন ছিলো বাংলাদেশের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে।
‘আপনারা সাধারণত ২৭৫-২৮০’র লক্ষ্যেই ব্যাটিং করেন। কখনো কখনো ৩০০ রান করেন কিংবা ছাড়িয়ে যান। বিশ্বকাপের জন্যও কি একই অ্যাপ্রোচ তুলে রেখেছেন? নাকি আরও বেশি কিছু? ৩২০-৩৩০ রানের জন্য ব্যাটিং করতে চাইলে সাব্বির রহমান কতটা কার্যকর হতে পারবেন?
ঠিক যেন এই প্রশ্নটির অপেক্ষাতেই ছিলেন ম্যাশ। বললেন, ‘আমি এটা আগেও বলেছি যে এই ক্ষেত্রে সাব্বির হবে আমাদের ‘এক্স ফ্যাক্টর’। শুধু সাব্বিরই নয় রিয়াদের (মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ) ব্যাটিং আমাদের বড় ইনিংস তৈরিতে এক্স ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে।’
মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিরদের মত এক্স ফ্যাক্টরের আলোচনা শেষ হতেই উঠলো আরেক ‘এক্স ফ্যাক্টর’ কাটার মাস্টার খ্যাত মোস্তাফিজুর রহমানের আলোচনা। বলে রাখা ভাল মোস্তাফিজকে সবসময়ই এই মুহুর্তে দেশের সেরা পেসার বলেই উল্লেখ করতে পছন্দ করেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
প্রশ্নটি ছিলো- বিশ্বকাপের জন্য মোস্তাফিজকে আপনারা নিশ্চয়ই ফ্রেশ রাখতে চাইবেন? মানে আয়ারল্যান্ড সিরিজে হয়তো সবগুলো ম্যাচে খেলাবেন না?
ঠিক যেন অধিনায়কের মনের কথা। তাই বাড়তি কথার প্রয়োজনই মনে করলেন না। ‘অবশ্যই। এটা সবাই চাইবে। যেহেতু সে আমাদের দলের সেরা বোলার সেহেতু ওকে আমরা বিশ্বকাপের জন্য ফ্রেশ রাখতে চাইবোই।’
টানা তিন মিনিট হেঁটে ড্রেসিংরুমের একেবারে সামনে চলে এসেছি। প্রশ্ন ভান্ডার থেকে আরও একটি প্রশ্ন সারাবাংলার। এটিই শেষ। তবে প্রসঙ্গ ভিন্ন। রাজনীতি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে রাজনীতির মাঠে এরইমধ্যে চার মাস কাটিয়ে দিয়েছেন। কেমন কাটছে সে সময়?
উত্তরে বললেন, ‘এখন না। ফোনে এই প্রশ্নের উত্তর দিব।’ বলেই দ্রুত এগিয়ে গেলেন ড্রেসিং রুমের দিকে। কাটায় কাটায় তিন মিনিট শেষ হল ঠিক তখনই।
পরে রাতে মোবাইল ফোনে কল করলে রিসিভ করে বললেন, ‘সেই প্রশ্নের জন্য ফোন দিয়েছেন?’ হ্যাঁ বলতেই বললেন, চার মাসের অভিজ্ঞতায় আমি বলব, আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি। তবে খেলার ভেতরে থেকে বৃহত্তর পরিসরে দায়িত্ব পালন করা ঠিক সম্ভব হয় না। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছি এখানে ভাল করার অনেক সুযোগ রয়েছে। একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করতে হবে। যারা গরীব মানুষ তারা যেন তাদের হকটা পায় সেই চেষ্টাই করতে হবে।’
সারাবাংলা/এমআরএফ/এমএম