শুভ’র একাকি পথ চলা
১৪ মে ২০১৯ ২১:০১
জৈষ্ঠ্যের পড়ন্ত দুপুরে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি মাঠে এলিট ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ক্রিকেটারদের অনুশীলন চলছে। ঘণ্টা খানেক কী তার কিছু বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে, একাডেমিতে এলেন জাতীয় দলের হয়ে এক সময়ে নিয়মিত ওপেন করা শামসুর রহমান শুভ। উদ্দেশ্য, ফিটনেস নিয়ে কাজ করবেন। একাডেমি মাঠে রানিং করে এরপরে জিম। কিন্তু রানিংয়ের উদ্দেশ্যে যেই মাঠে যেতে উদ্যত হলেন অমনি একাডেমির যেখানে শেষ এবং মাঠের শুরু সেখানে এসে থমকে দাঁড়ালেন।
মলিন মুখ, কাতর চোখে একাডেমির ক্লবসিবল গেইটে মুখ ঠেকিয়ে এনামুল বিজয়, শফিউল ইসলামদের নিবিড় অনুশীলন দেখলেন। সেই অনুশীলন যতটা না নিবিড় তার চাইতেও বেশি নিবিড় তার দৃষ্টি। যেন অস্ফুট বাক্যে বলছেন, ‘আহা আমি যদি এখানে থাকতাম!’ হকচকিয়ে সম্বিৎ ফিরে পান। না, আমি এখানে নেই। এরপর মাথা নিচু করে আসতে আসতে একাডেমির পাশ ঘেঁসে হেঁটে যান ক্রীড়া পল্লীর প্রান্তে। এ জায়গাটিকেই বেছে নেন রানিংয়ের জন্য। মাঠের এপাশ থেকে ওপাশ লম্বলম্বি মার্ক করে দূরত্ব ঠিক করে নেন।
রানিং শুরু করবেন ঠিক সেই মুহুর্তে কাছে গিয়ে জানতে চাই, মন খারাপ? প্রশ্নটি হয়তো বাতুলতা বৈ আর কিছুই না। কেননা ঘরোয়া ক্রিকেটে তার ব্যাট যথেষ্টই ধারাবাহিক ছিল। গত মাসে শেষ হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ১১ ম্যাচ খেলে ৩৭৪ রান করেছেন। ম্যাচ প্রতি গড় ৩৭.৪০। আর বিপিএলে ১০ ম্যাচ থেকে সংগ্রহ করেছেন ২১০ রান। তবে টি টোয়েন্টি এই টুর্নামেন্টটিতে রানের চাইতে তার যে বিষয়টি লক্ষণীয় ছিল সেটি হল, তার ম্যাচ জয়ের সামর্থ। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের শিরোপা জয়ে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
এমন পারফরম্যান্সে জাতীয় দল না হোক ‘এ’ দলে তো তাকে রাখাই যায়। এমন কতজনকেই তো এই ক্যাম্পে রাখা হয়েছে যাদের পারফরম্যান্স তার চাইতে আহামরি কিছু নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো তিনি নেই। আর সেখানে নেই বলেই তার যত কষ্ট। ‘অবশ্যই এটা খুব কষ্টদায়ক। সবাই সুযোগ পায়, আমি পাই না। অনেক সময় খুব কাছের মানুষ যেমন, মা-বাবা জিজ্ঞেস করে কী হল? তুমি কেন নেই। আসলে এর উত্তর দেওয়াটা খুব কঠিন হয়। কিন্তু কিছু করার নেই। মেনে নিতে হবে কিছু সময় আসবে আপনি যেভাবে চাইবেন, হবে না।’
এখন যে অনুশীল করছেন সেটা নিশ্চয়ই ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য। কিন্তু সে তো বহুদূরে। এমন প্রশ্নে তার উত্তর হল, ‘আমার কাজটা যেহেতু ক্রিকেট সেহেতু কিছুই করার নেই। এই যে আমি রানিং করছি, কষ্ট করছি সেটা কিন্তু আমার জন্যই। এবং এটা আমার অনেক বড় পাওয়া। আমার কাজই পারফর্ম করা। সেজন্য আমি নিজেকে ফিট রাখতে চেষ্টা করছি। আমার তো আসলে ঘরোয়া ক্রিকেট ছাড়া বড় কোন জায়গা নেই। তাই সাত আট মাস আগে থেকেই জাতীয় ক্রিকেট লিগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।’
কথা শেষে ফিরে আসি। আর শুভ ব্যস্ত হয়ে পড়েন রানিংয়ে। কোচ নেই, নেই কোন রানিং মেটও। একা একাই প্রশস্ত করছেন এগিয়ে চলার পথ।
সাদা পোষাকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে অভিষিক্ত শুভ ৬ টেস্ট থেকে সংগ্রহ করেছেন ৩০৫ রান। একটি সেঞ্চুরিও আছে তার। কিন্তু এরপর আর সুযোগ মেলেনি।
তার এক বছর আগে ওয়ানডে ক্রিকেটে পা রাখা এই ওপেনার ১০ ম্যাচ থেকে সংগ্রহ করেছেন ২৬৬ রান। কোন সেঞ্চুরি না থাকলেও ২টি ফিফটি আছে।একই বছর টি টোয়েন্টির ক্যাপ পড়ে ৯ ম্যাচ থেকে তুলে নিয়েছেন ৮৬ রান।
সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস