নাটকীয়ভাবে ভারত চ্যাম্পিয়নদের হারালো আবাহনী
১৫ মে ২০১৯ ২২:০০
ঢাকা: এএফসি কাপের চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখতে জয়ের বিকল্প ছিলো না ঢাকা আবাহনীর। এদিকে দলের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা ইনজুরি। দলে গুরুত্বপূর্ণ চার ফুটবলার ছাড়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নদের জন্য জয়টা কঠিন ছিল। এমন অসম্ভব ম্যাচটা নাটকীয়ভাবে পকেটে পুড়েছে আকাশি-নীল জার্সিধারীরা।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বুধবার এএফসি কাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ঢাকা আবাহনী ও চেন্নাইয়িন এফসি। প্রথমার্ধে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে তিন গোল করে ৩-২ ব্যবধানের রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে মারিও লেমসের শীষ্যরা।
অ্যাওয়ে ম্যাচে চেন্নাইয়িনের কাছে ভারতের আহমেবাদে আত্মঘাতী গোলে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিল আবাহনী।
তাই হোম ম্যাচে জয়ের কোনও বিকল্প ছিল বিপিএল চ্যাম্পিয়নদের। এটাতো গেল ম্যাচের হিসেব। কিন্তু বাস্তবতা হলো ইনজুরিতে দলের রক্ষণে নেই গুরুত্বপূর্ণ তিন ফুটবলার তপু বর্মন, টুটুল বাদশা ও ওয়েলিংটন। মাঝমাঠে নেই আতিকুর রহমান ফাহাদও। তাই দলের স্কোয়াড সাজানো নিয়েই দিশেহারা কোচ মারিও লেমস।
ম্যাচের গ্যাম্বিলিংটা তাই স্কোয়াড পরিবর্তন করেই করলেন এই পর্তুগিজ কোচ। দলে যুক্ত হলো ইনজুরি কাটিয়ে ওঠা সাদ উদ্দীন, জুয়েল রানা ও মামুনুল ইসলাম মামুন। একাদশেও সুযোগ পেলেন তিনজন। এই সুযোগটাই যেন কড়ায়গন্ডায় কাজে লাগিয়েছেন মামুন। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে তার গোলেই জয় ভাগিয়ে নিয়েছে আবাহনী।
তবে, স্বাগতিকদের জন্য ম্যাচটা মোটেও সহজ ছিল না। ৬ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে ভিনিথের গোলে এগিয়ে যায় চেন্নাইয়িন এফসি। প্রথমার্ধে ওই গোল ছাড়া আর কোনও আক্রমণ আসেনি ভারত চ্যাম্পিয়নদের কাছ থেকে।
এর মাঝে আক্রমনের পর আক্রমন করে গেছে আবাহনী। ২০ মিনিটের মাথায় ডি বক্সের বাইরে থেকে নেয়া বেলফোর্টের মাটি কাঁপানো শট আটকে দেন চেন্নাইয়িনের গোলরক্ষক কিরনজিত দুর্দান্তভাবে। ২৭ মিনিটে ওয়ালির ক্রস থেকে সানডে সিজোবার হেড রুখে যায় ওই কিরনজিতের কাছেই। ৩৩ মিনিটে সানডে-বেলফোর্টের ওয়ান টু ওয়ানের দুর্দান্ত পাস দেখা গেলেও সিক্স ইয়ার্ডের একটু বাইরে থেকে বারের উপর দিয়ে বল মেরে দেন সানডে। হতাশ হোন সমর্থকরা। তার তিন মিনিট পর ওয়ালি ক্রস থেকে জীবনের হেড গিয়ে পড়ে সিক্স ইয়ার্ডের সামনে জুয়েলের পায়ে। সেখান থেকে এতো সহজ সুযোগ নষ্ট করে আবাহনী।
প্রথমার্ধে পিছিয়ে থাকা আবাহনী পরের অর্ধের শুরুতেই আরও পিছিয়ে যেতে পারতো। নেমেই গোল খেতে বসেছিল আবাহনী। ৪৭ মিনিটের মাথায় ডি বক্সের বাইরে থেকে চেন্নাইয়িনের মিডফিল্ডার ইসাকের শট বারে লেগে ফিরে না আসলে ব্যবধান বাড়াতে পারতো সফরকারিরা।
৬০ মিনিটে ম্যাচে ফেরার সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে আবাহনী। তবে ম্যাচে সমতা আনতেও দেরি করেনি আকাশি-নীলরা। মাশিহ সাইঘানির লম্বা থ্রো থেকে থেকে ৬৪ মিনিটে বুদ্ধিদীপ্ত চিপ থেকে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। তার পাঁচ মিনিট পরে এবার ব্যবধান দ্বিগুণ করে আবাহনী। ডি বক্সের বাইরে থেকে মাশিহ সাইঘানির ফ্রিকিক বারের একেবারে কোনা বরাবর জায়গা করে নেয় জালে। লিড পায় স্বাগতিকরা।
আকাশি-নীল শিবিরে উদযাপনের রেশটা কাটেনি তখনও। সেই রক্ষণভাগের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ৭৩ মিনিটে সমতায় ফেরে চেন্নাইয়িন এফসি। এবার রক্ষণভাগের অগাছোলো অবস্থার সুবিধা নিয়ে গোল করে বসেন ইসাক। ব্যবধান হয়ে পড়ে ২-২।
ম্যাচটা মনে হচ্ছিল ড্রই হবে হয়তো। কিন্তু দর্শকদের চমকে দেন মামুনুল ইসলাম মামুন। জীবনের কর্নার কিক চেন্নাইয়ের রক্ষণ থেকে ফিরে ডি বক্সের ভেতরে পড়ে শূন্যে ভাসা বলটাকে দারুণ ভলিতে ঠিকানায় ফেলেন বাঁ পায়ের মামুন। তাতেই লেখা হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্যও। ৩-২ ব্যবধানে জয়সহ পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে ঢাকা আবাহনী।
তাতে করে এএফসির চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার আশা জিইয়ে রইলো ‘ঘরের বাঘদের’। দুই জয় এক ড্র আর এক হারে সাত পয়েন্ট নিয়ে চেন্নাইয়ের সঙ্গে ই গ্রপের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে আবাহনী। চূড়ান্ত পর্বে পা রাখতে পরের দুই ম্যাচ মানাংয়ের মার্শিয়াংদি ও মিনার্ভা পাঞ্জাবের সঙ্গে জিততেই হবে আবাহনীকে।
সারাবাংলা/জেএইচ