বিশ্বকাপের ডাবল সেঞ্চুরি
২৬ মে ২০১৯ ১৪:৩২
একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাস বেশি পুরনো নয়, ৫০ বছরেরও কম। ১৯৭১ সালের ৫ মার্চ মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার খেলার মধ্য দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বকাপের প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয় তার চার বছর পর, ১৯৭৫ সালে। অথচ মাত্র এই ৫০ বছরের ব্যবধানে ওয়ানডে ক্রিকেটে এসেছে আমূল পরিবর্তন।
শুরুর দিকে ওয়ানডে ম্যাচগুলো ছিল ৬০ ওভারের। সে সময় কোনো দল ৬০ ওভার খেলে ২০০ এর ওপর রান করতে পারলেই সেটা হতো প্রতিযোগিতাপূর্ণ। ব্যাট-বলে সমান লড়াই হওয়ার সুযোগ ছিল সেই সাদা জার্সির আমলে। জার্সি রঙিন হতেই ব্যাটসম্যানদের আধিপত্য বেড়েছে। তবুও ব্যাটসম্যান-বোলারের যুদ্ধটা একটা সময় পর্যন্ত কাছাকাছি ছিল। কিন্তু টি-টোয়েন্টি আমল শুরু হওয়ার পর থেকে ওয়ানডে ক্রিকেট যেন একেবারেই ব্যাটসম্যান অধ্যুষিত হয়ে পড়েছে। এক সময় ২০০ করতে পারলে একটা দল হাঁফ ছেড়ে বাঁচত, অথচ এখন ৫০ ওভারের খেলায় একজন খেলোয়াড়ই ২০০ রান করে বসে।
ভাবতেই অবাক লাগে ওয়ানডে ক্রিকেটে একক সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটি ২৬৪ রানের। এই রেকর্ডের মালিক রোহিত শর্মা। যিনি কেবল একবার নন, তিন-তিনবার ডাবল সেঞ্চুরির চিহ্ন অতিক্রম করেছেন। আর বিশ্বকাপে এই মাত্রা স্পর্শ করেছেন কেবল দুই জন। আজ তাদের নিয়েই বলব।
২০১১ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে বিরেন্দর শেবাগের করা ১৭৫ রানের ইনিংসটি ২০১৫ বিশকাপের আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপে করা সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল। তবে ব্যাটসম্যানরা যেভাবে বড় ইনিংস খেলা শুরু করে দিয়েছিল তাতে খুব ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছিল এই রেকর্ড বেশিদিন টিকবে না। পরের বিশ্বকাপে ঠিক তাই হলো। ২০১৫ বিশ্বকাপের আসরে আসে দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি।
ক্রিস গেইল: বিশ্বকাপের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটি হাঁকান ‘ইউনিভার্স বস’ খ্যত ক্যারিবীয় ওপেনার ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল বা ক্রিস গেইল। বিশ্বের সব নামি দামি টি-টোয়েন্টি লিগেই ততদিনে সেঞ্চুরি করার অভ্যাস করে নিয়েছিলেন তিনি। সবাই তাই নিশ্চিত ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটেও খুব তাড়াতাড়িই দুইশ রান স্পর্শ করে ফেলবেন গেইল। ঠিক তাই হয়।
গ্রুপ পর্বের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে গেইল ২১৫ রান করেন করেন মাত্র ১৪৭ বলে। ১৬টি ছয় এবং ১০টি চারের মাধ্যমে সাজানো এই ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪৬.২৫। পুরো পঞ্চাশ ওভার খেলে ইনিংসের শেষ বলে এলটন চিগুম্বুরার হাতে ধরা না পরলে তিনি অপরাজিতই থাকতেন। এ দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল দুই উইকেটে ৩৭২ রান। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে তার আরেক সতীর্থ মারলন স্যামুয়েলস ১৫৬ বলে ১৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। জবারে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে ২৮৯ রানেই গুটিয়ে যায়। ২১৫ রানের ইনিংসটির মধ্যদিয়ে গেইল প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে ডাবল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
মার্টিন গাপটিল: ক্রিস গেইল হয়তো ভাবতেও পারেননি একই আসরে তার রেকর্ডটি ভেঙে দেবে কেউ একজন, তাও আবার নিজ দলের বিপক্ষেই। চতুর্থ কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৬৩ বলে ২৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন নিউজিল্যান্ড ওপেনার মার্টিন গাপটিল। পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করে তিনি ১১টি ছয় এবং ২৪টি চার হাঁকান। ইনিংস শেষে তার স্ট্রাইক রেট দাঁড়ায় ১৪৫.৩৯। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাট করতে নামলে মাত্র ২৫০ রানেই থেমে যায় তাদের ইনিংস এবং বিদায় নিতে হয় টুর্নামেন্ট থেকে। গত আসরে ৫৪৬ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন মার্টিন গাপটিল।
ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন এই বিশ্বকাপে রানের বন্যা বইবে। এখন দেখার পালা এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা গাপটিলের দখলেই থাকবে, নাকি অন্য কেউ ভেঙে নতুন কোনো রেকর্ড গড়বে।
সারাবাংলা/টিএম৬/এমআরপি
** স্মিথের সেঞ্চুরির ম্যাচে হারলো ইংল্যান্ড
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ ক্রিস গেইল ডাবল সেঞ্চুরি মার্টিন গাপটিল