তিন টাইগারসহ টানা চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন যারা
২৭ মে ২০১৯ ১৯:৫৫
বিশ্বকাপে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা কতটা বড় ব্যাপার তা তাসকিন-মাশরাফির চোখের পানি আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে। বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকেই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চান অনেক খেলোয়াড়। যেখানে দেশের জার্সি গায়ে একটা বিশ্বকাপে খেলতে পারাই থাকে সব তরুণ ক্রিকেটারের স্বপ্ন, সেখানে টানা চার বিশ্বকাপ খেলার গৌরবটা কতখানি হতে পারে চিন্তা করে দেখেছেন!
এবারের বিশ্বকাপে ১০ দলের ১৫০ ক্রিকেটার খেলবেন। তার মধ্যে মাত্র আটজন আছেন যারা টানা চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। আর এই তালিকায় বাংলাদেশ থেকে আছে তিনজন। অন্য কোনো দেশের একাধিক খেলোয়াড় নেই এই তালিকায়।
২০০৭, ২০১১, ২০১৫ এবং ২০১৯ টানা এই চার বিশ্বকাপে নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা আট খেলোয়াড়কে নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের গল্প।
রস টেইলর: ২০০৬ সালে অভিষেক হওয়ার পর থেকে নিউজিল্যান্ড দলের নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন টেইলর। ২০০৭ থেকে এখন পর্যন্ত সব কয়টি বিশ্বকাপেই নিজিল্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। তার ক্যারিয়ার সেরা ১৩১ রানে নটআউট থাকার ইনিংসটিও আসে ২০১১ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২০টি শতক এবং ৪৭টি অর্ধশতকে ভর করে আট হাজার রান করা টেইলর নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
ক্রিস গেইল: বিশ্বকাপের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান ক্রিস গেইল। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকটা ১৯৯৯ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে। ফলে ২০০৩ বিশ্বকাপে লারা, হুপারদের দলে ছিলেন তিনিও। ২০০৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টানা পাঁচটি বিশ্বকাপ তিনি খেলতে যাচ্ছেন। তবে ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছেন এই বিশ্বকাপই হতে যাচ্ছে তার শেষ বিশ্বকাপ।
মোহাম্মদ হাফিজ: পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার হাফিজ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আছেন জাতীয় দলের সাথে। দুঃসময়ে পাকিস্তানের অধিনায়কত্বও করেছেন এবং তিনিই পাকিস্তানের একামত্র অধিনায়ক যিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন ২০১৬ সালে। ২০০৭ থেকে এবারের আসর পর্যন্ত টানা চার বিশ্বকাপেই পাকিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন ‘দ্য প্রফেসর’ খ্যাত হাফিজ।
লাসিথ মালিঙ্গা: ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চার বলে চার উইকেট নেয়ার রেকর্ডের মালিক মালিঙ্গা। বিশ্বকাপ তো বটেই ওডিআই ইতিহাসে আর কারো এমন কীর্তি নেই। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ভিন্নধর্মী বোলিং অ্যাকশন, গতি এবং অনায়াসে ইয়োর্কার দেয়ার ক্ষমতার জন্য ব্যাটসম্যানদের কাছে ভীতির আরেক নাম মালিঙ্গা। ২০১৬ তে খারাপ সময় পার করলেও তা কাটিয়ে আবার মাঠে ফিরে আসেন মালিঙ্গা। ২০১৯ বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে তিনিও টানা চার বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন দেশের হয়ে।
মহেন্দ সিং ধোনি: এই দশকের অন্যতম বড় তারকা ধোনি। নেতৃত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ভারতকে বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ দেন ধোনি। আইসিসির সব কয়টি ইভেন্টেই ভারত জিতেছে তার অধীনে থেকে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক হওয়ার পর ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন ধোনি। সেবার অবশ্য তিনি অধিনায়ক ছিলেন না, তবে পরবর্তী দুই বিশ্বকাপে ভারতকে অসাধারণ নেতৃত্ব দেন ধোনি। ২০১৫ এর সেমি ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের আগে টানা ১১ ম্যাচ বিশ্বকাপে ধোনির ভারত ছিল অপরাজিত। এবার বিশ্বকাপ তার জন্যও হতে যাচ্ছে চতুর্থ বিশ্বকাপ। তবে কানাঘুষো চলছে এটিই নাকি শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে ৩৭ বছর বয়সী এই উইকেটরক্ষকের।
সাকিব আল হাসান: বিশ্বসেরা সাকিবকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সাকিব জাতীয় দলে ২০০৬ সালে ডাক পাওয়ার পর ২০০৭ বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পান। সেই থেকে এখন পর্যন্ত দলকে কেবল দিয়েই যাচ্ছেন। মাঝে ২০১১ বিশ্বকাপে মাশরাফির অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্বের ভারটাও সামলাতে হয় তাকে। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং উইকেট শিকারি উভয়ই সাকিব। ২০১৯ বিশ্বকাপ তার জন্যও হতে যাচ্ছে টানা চতুর্থ বিশ্বকাপ।
মুশফিকুর রহিম: অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সাকিব-তামিমদের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিক। সাকিবের সাথে একই দিনে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। এরপর থেকে উইকেটের পেছনে দায়িত্ব সামলানোর জন্য অদ্বিতীয়তে পরিণত হয়েছেন লিটল মুশি। সাকিবের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বমঞ্চে ৫০০ রান অতিক্রম করেন মুশফিক। এবারের বিশ্বকাপ তার জন্যেও চতুর্থ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে।
তামিম ইকবাল: ২০০৭ বিশ্বকাপের ঠিক আগে অন্য দুই সতীর্থদের মতো জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হন তামিম। নির্ভীক মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য অল্প দিনের মাথায় ড্যাশিং ওপেনারের খেতাব পান তামিম। গত এক যুগে অর্ধ্ব ডজন ওপেনারের পরিবর্তন হলেও নিজ জায়গায় অটল তামিম। বিশ্বকাপে ৪৮৩ রান নিয়ে সাকিব, মুশফিকের পর বাংলাদেশের হয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এই বাঁহাতি ওপেনার। সতীর্থদের মতো তিনিও খেলতে যাচ্ছেন টানা চতুর্থ বিশ্বকাপ।
টানা চতুর্থবারের জন্য না হলেও আরেক টাইগারের কথা না বললেই নয় তিনি হলেন মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। ২০১৯ বিশ্বকাপ তার জন্যও হতে যাচ্ছে চতুর্থ বিশ্বকাপ। ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন পরপর। এরপর ২০১১ তে ইনজুরির কবলে পড়ার পর ফিট হয়ে দলে ফিরতে না পারায় নিজ দেশে সেবারে বিশ্বকাপ আর খেলা হয়নি ম্যাশের। এরপর দলে ফিরে এসে ২০১৫ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশকে এবং এবারের ২০১৯ বিশ্বকপের দলপতির ভূমিকায় থাকবেন তিনি।
তিন টাইগার বাদে আটজনের বাকি পাঁচ জনেরই সম্ভাব্য এটি শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। তবে মাত্র ৩০ এর ঘরে পা রাখা তিন টাইগারকে নিয়ে ভক্তরা আরও এক-দুইটি বিশ্বকাপ খেলার আশা করতেই পারেন।
সারাবাংলা/টিএম৬/এমআরপি