রাজ্জাকের হাত ধরে অন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ
২৮ মে ২০১৯ ২০:১১
ক্লাইভ লয়েড, অ্যালান বোর্ডার, জ্যাক ক্যালিসদের মতো কিংবদন্তিদের পাশে একই কাতারে যুক্ত হয়েছে আব্দুর রাজ্জাকের নাম। ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে আব্দুর রাজ্জাককে নির্বাচিত করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। এছাড়াও মহেলা জয়াবর্ধনে, স্টিভ ওয়াহ, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ও গ্রায়েম সোয়ানদের মতো রথী-মহারথীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে।
এর আগে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার এই মর্যাদার ভাগীদার হতে পারেননি। রাজ্জাকের হাত ধরে বিশ্ব ক্রিকেটের মঞ্চে অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২৮ তারিখ ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে সারাবাংলা.নেটের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তার অনুভূতি, ব্যক্ত করেছেন বিশ্বকাপ নিয়ে তার ভাবনা।
সারাবাংলা: বিশ্বের সব কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের সাথে আপনি বিশ্বকাপের শুভেচ্ছা দূত মনোনীত হয়েছেন। ব্যাপারটা কেমন লাগছে?
রাজ্জাক: আমি বলব এটা অনেক বড় সম্মান আমার জন্য। আর এরকম কিংবদন্তিদের সাথে প্রোগ্রামগুলো শেয়ার করা আমার জন্য এবং দেশের জন্য অনেক বড় ব্যাপার আসলে।
সারাবাংলা: মাঠের বাইরে থেকেও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ওখানে গিয়ে আপনার ভূমিকা কী হবে?
রাজ্জাক: ওখানে গিয়ে বাংলাদেশের ম্যাচগুলোর বিশ্লেষণাত্মক কলাম লিখতে হবে। এছাড়া আইসিসির বিভিন্ন প্রোগ্রামগুলোয় যেতে হবে। আর কিছু ইন্টারভিউও আছে আমার।
সারাবাংলা: আপনি বাংলাদেশের হয়ে ২০০৭ ও ২০১১ সালে দুইটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। কোনো উল্লেখযোগ্য স্মৃতি কি আমাদের বলবেন?
রাজ্জাক: আমি মনে করি বিশ্বকাপ আসলে খেলোয়াড়দের জন্য সবথেকে বড় আসর। সেখানে যা হয়, যা ঘটে প্রত্যেকটা জিনিসই আসলে মনে রাখার মতো। এটা নিয়ে আসলে আলাদা করে কিছু বলার নেই, প্রত্যেকটা মুহূর্তেই অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।
সারাবাংলা: একজন খেলোয়াড়ের কাছে বিশ্বকাপে খেলা কতটা গুরুত্ব রাখে বলে আপনি মনে করেন?
রাজ্জাক: ওই যে বললাম, বিশ্বকাপ সবথেকে বড় আসর। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়েরই আসলে স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপে খেলার। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের প্রথম লক্ষ্য থাকে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়া, এরপর টার্গেট থাকে সেখানে ভালো করার। যেই খেলোয়াড়ই হোক না কেন, সে চেষ্টা করে যেন ভালো খেলতে পারে। এখানে খেলার থেকে বড় কিছু একজন খেলোয়াড়ের জন্য হতে পারে না।
সারাবাংলা: শিরোপার লড়াইয়ে আপনি কোন দলকে এগিয়ে রাখছেন?
রাজ্জাক: এবার বিশ্বকাপে প্রত্যেকটা দলই শক্তিশালী। এসব টুর্নামেন্টে আসলে কাউকেই ওভাবে এগিয়ে রাখা যায় না। প্রত্যেকটা দলই নিজেদের উজাড় করে দিয়ে খেলে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত ফেভারিট হিসেবেই বিশ্বকাপ খেলতে যায় অথচ ওরা আমাদের কাছে হেরে প্রথম রাউন্ডের পরই বিদায় নেয়। তাই ওরকম ভাবে আমি বলতে চাইনা।
সারাবাংলা: এই বিশ্বকাপ কি অন্যবারের থেকে কঠিন হবে?
রাজ্জাক: ডেফিনিটলি। ফরম্যাটের কারণে সব দল একে অপরের বিপক্ষে খেলবে। যারা আসলেই ভালো ক্রিকেট খেলবে তারাই ভালো ফলাফল করবে, বাকিদের ভালো ফলাফল করার সম্ভাবনা কম।
সারাবাংলা: বলা হচ্ছে অন্য যেকোন বিশ্বকাপের থেকে এবারের বাংলাদেশ দল নাকি বেশি শক্তিশালী। আপনি কী মনে করেন?
রাজ্জাক: হ্যাঁ, আমার কাছেও তাই মনে হয়েছে। কারণ এত বেশি অপশন নিয়ে এর আগে আমরা কখনো বিশ্বকাপ খেলতে যাইনি।
সারাবাংলা: এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোন পর্যন্ত যেতে পারবে বলে মনে করছেন?
রাজ্জাক: এটা আসলে বলা মুশকিল। তবে এই দল নিয়ে অনেক দূর যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের, আমি বলব বিশ্বকাপ জেতার মতো সক্ষমতাও আছে বাংলাদেশের। খুশিতো হব বিশ্বকাপ জিতলেই।
সারাবাংলা: ইংল্যান্ডে বাংলাদেশ দলের সাথে দেখা হলে কি পরামর্শ দেবেন?
রাজ্জাক: এটা আসলে অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। এখন কোনোকিছু পরিকল্পনা করে রাখিনি, হয়তো দেখা হবে, কথা হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী যেটা করলে ভালো হবে, দেখা হলে সেটাই বলার চেষ্টা করব।
সারাবাংলা: বাংলাদেশের কোনো বিশেষ খেলোয়াড়ের থেকে আপনি বেশি আশা করছেন কি না?
রাজ্জাক: একটা, দুইটা খেলোয়াড় না, আমি বাংলাদেশ দলকে যেভাবে দেখলাম তাতে প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের প্রতিই আমার সমান আস্থা আছে। যখন যাকে যেই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন সে সেখানে ভালো করলেই দল ভালো করবে। হতে পারে কেউ ১০ রান করেছে, কিন্তু সেই ১০ রানই যদি বিশেষ সময়ে প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে, তাহলে সেই খেলোয়াড়টার গুরুত্ব বেশি। আবার কেউ সেঞ্চুরি করল কিন্তু দলের কোনো কাজে আসল না, তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত অর্জনে যোগ হতে পারে কিন্তু দলের জন্য প্রয়োজনীয় না। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি বলব যে, দল হিসেবে ভালো করতে চাইলে প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।
সারাবাংলা: লাল-সবুজের জার্সিতে আপনি আবার কখনো ফেরার চিন্তা করেন কি?
রাজ্জাক: আসলে আমি এটা বলতে পারব না। এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণই নির্ভর করে ম্যানেজমেন্টের ওপর। এটা বলা কঠিন যে আমি ফিরবই। এটা ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব, উনারাই দেখুক।
সারাবাংলা: এবারের বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আপনি শুভেচ্ছা দূত হয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে কি কমেন্টেটর বা কোচ হওয়ার কোনো ইচ্ছা আছে?
রাজ্জাক: বিশ্বকপের আসরে আমিই প্রথম যাচ্ছি। তবে এর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুমন ভাই (হাবিবুল বাশার) একবার দূত হয়ে গিয়েছিলেন। আমার আসলে ক্রিকেটের মধ্যে থাকার ইচ্ছা আছে। আমি জানি না কি হবে, তবে ক্রিকেট নিয়েই থাকার চেষ্টা করব।
বিশ্বকাপে আইসিসির কলামিস্ট তালিকা:
মিরওয়াইজ আশরাফ (আফগানিস্তান), অ্যালান বোর্ডার ও স্টিভ ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া), আব্দুর রাজ্জাক রাজ (বাংলাদেশ), গ্রায়েম সোয়ান ও হিদার নাইট (ইংল্যান্ড), কৃঞ্চমাচারি শ্রীকান্ত (ভারত), ডেনিয়েল ভেট্টোরি (নিউজিল্যান্ড), ওয়াকার ইউনুস (পাকিস্তান), জ্যাক ক্যালিস (দ.আফ্রিকা), মাহেলা জয়বর্ধনে (শ্রীলঙ্কা), ক্লাইভ লয়েড ও ভিভ রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
বিশ্বকাপ চলাকালে লন্ডনেই থাকবেন রাজ্জাক। অংশ নেবেন বিভিন্ন প্রচারণামূলক কাজে। প্রথমশ্রেণির ক্রিকেটে ৬০০ ছুঁই ছুঁই এবং লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪০০ উইকেট শিকারি এই টাইগার স্পিনার কলাম লিখবেন মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকদের নিয়ে।
সারাবাংলা/টিএম৬/এমআরপি