শেষ চারের সম্ভাবনা দেখছেন রকিবুল, তবে…
৩০ মে ২০১৯ ১৯:৩৬
‘বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সেমি ফাইনালে খেলবে’ টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে দলের একাধিক সিনিয়র সদস্যও বৈশ্বিক আসরে লাল সবুজের এমন সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। প্রথমের সেই অভিযানেই স্টিভ রোডস শিষ্যরা প্রস্তুত। সেই ঐকতানে এবার যোগ দিলেন লাল সবুজের সাবেক অধিনায়ক ও দেশসেরা ক্রিকেট বোদ্ধা রকিবুল হাসান।
তার মতে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই সেমি ফাইনালে খেলবে। তবে এক্ষেত্রে তাদেরকে অন্তত পাঁচটি ম্যাচ জিততেই হবে। আর সেই কাজটি করতে হলে ভয়-ডরহীন ক্রিকেটের কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের সম্ভাবনার প্রশ্ন নিয়ে রকিবুল হাসানের মুখোমুখি হয়েছিল সারাবাংলা.নেট। তিনি জানালেন, ‘দেশ থেকে দল যাওয়ার আগে একটি লক্ষ্য স্থির করেছে আমি যেটার সঙ্গে সহমত পোষণ করি। এরকম একটা লক্ষ্য থাকতে হবে। সেমি ফাইনালকে টার্গেট করে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ শুরু করতে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অন্তত পাঁচটি ম্যাচ জিততেই হবে। এই কর্মযজ্ঞটাকে সম্পন্ন করতে হলে ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেককে দলগতভাবে ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে। শুধু পাঁচজন বা চারজনের ওপর নির্ভরশীল হলে হবে না। যারা পরবর্তীতে থাকবে তাদেরকেও তাদের অবস্থান থেকে নিজেদের সেরাটা মেলে ধরতে হবে।’
ভাবছেন রকিবুলের এমন মন্তব্যের ভিত্তি কী? কিংবা অতীতে বাংলাদেশ কী এমন করেছে যার প্রেক্ষিতে তিনি এমন প্রত্যাশা করতে পারেন?
তাদের জন্য রকিবুলের জবাব হলো, অতীতে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের শেষ চারে খেলেনি সত্যি, কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে তো তারা উঠেছে। শুধু কী তাই? মাত্র দুই বছর আগে এই ইংল্যান্ডেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি ফাইনালে খেলে এসেছেন মাশরাফিরা। আছে তিনটি সাম্প্রতিক টুর্নামেন্টের (নিদাহাস ট্রফি, এশিয়া কাপ, আয়ারল্যান্ড ত্রিদেশীয় সিরিজ) ফাইনালে খেলার টাটকা অভিজ্ঞতাও।
‘বাংলাদেশ যদি তাদের মেধা অনুযায়ী খেলতে পারে তাহলে অসম্ভব নয়। আমরা অতীতে দেখেছি বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমি ফাইনালে খেলেছে, এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলেছে, নিদাহাস ট্রফির ফাইনালও খেলেছে। কাজেই আমাদের প্লেয়ারদের সেই সক্ষমতা আছে। তারা যদি তাদের সেই সক্ষমতা অনুযায়ী সেরা খেলাটা ধারাবাহিকভাবে খেলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ সেমি ফাইনালে খেলবে। এটা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’ যোগ করেন দেশের সাবেক এই দলপতি।
দারুণ বলেছেন! তাহলে নিশ্চয়ই আটঘাঁট বেধেই নামতে হবে মাশরাফিদের। হ্যাঁ, মহাগুরুত্বপূর্ণ সেই বিষয়গুলোও বাতলে দিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই পথ প্রদর্শক। জানিয়ে দিলেন ব্যাটিং, বোলিং ফিল্ডিংয়ে টাইগারদের করণীয়।
প্রথমেই এলো ব্যাটিংয়ের প্রসঙ্গ। বিশ্বযুদ্ধের মঞ্চে ব্যাটসম্যানদের পরামর্শ দিতে গিয়ে তিনি জানালেন, ‘এই বিশ্বকাপে প্রচুর রান হবে। এটা মোটামুটিভাবে একটা ধারণা করাই যেতে পারে। ২০ ওভারের খেলায় আমরা দেখি হরহামেশাই ১৮০-১৯০ রান হয়ে যাচ্ছে। কাজেই ৫০ ওভারের খেলায় ৩০০’র ওপরে রান হবে। ব্যাটিং আগে করলে আমরাদেরকে ৩৫০’র কাছাকাছি করতে হবে। পরে চেজ করতে হলে ওই রান চেজ করার মতো সক্ষমতা থাকতে হবে।’
রকিবুল আরও জানিয়ে রাখলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাটিং স্ট্রেংথ আছে, আমাদের ব্যাটসম্যানদের রান করার সক্ষমতা আছে। উইকেটও ব্যাটিং বান্ধব থাকবে। তারা দেশের মাটিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে যে ধরনের উইকেটে খেলে গেছে, সেখানে প্রচুর রান করেছে। সেঞ্চুরি করেছে, ডাবল সেঞ্চুরিও করেছে। ইংল্যান্ডে অনেকেরই খেলার অভিজ্ঞতা আছে। দুই একজনের নেই। কিন্তু আমাদের যে শক্তিমত্তা আছে তারা যদি সেটুকু প্রকাশ করতে পারে, তাদের সেরা খেলাটা খেলতে পারে আমি মনে করি কোনো কিছুই অসাধ্য হবে না।’
এরপরে বলতে শুরু করলেন বোলিং নিয়ে। এটা সত্যি যে অন্যান্য দেশগুলোর মতো রিস্ট বোলার বা লেগি নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। নিশ্চয়ই সেটা অনেক বড় পশ্চাৎপদতা। কেননা ইংল্যান্ডের কন্ডিশন পেসবান্ধব হলেও স্লো ডেলিভারিতে রিস্ট বোলাররাই হয়ে উঠতে পারেন ‘এক্স ফ্যাক্টর’, যে কোনো সময় ঘুরিয়ে দিতে পারেন ম্যাচের ভাগ্য।
সাবেক অধিনায়ক রকিবুল সেটা মানছেন। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশে তেমন বোলার নেই, সেহেতু আর অযথা বাগাড়ম্বরে গেলেন না। তাই যারাই আছেন তাদের সঠিক লাইন-লেংথ বজায় রেখে বোলিংয়ের পরামর্শ দিয়ে রাখলেন, ‘দেখেন, আমাদের ফাস্ট বোলারদের যদি দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে তুলনা করি, অস্ট্রেলিয়ার সাথে তুলনা করি, ইংল্যান্ডের সাথে তুলনা করি, সেটা ঠিক হবে না। তবে লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে জোরে বল করলেই যে দল ভালো হয়ে যাবে এটা কোনো কথা না। এখানে যেটা করতে হবে লাইন অ্যান্ড লেংথ বজায় রেখে ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা আগে থেকে জেনে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বল করতে হবে।’
‘উইকেট বোলারদের জন্য কঠিন হবে। কারণ এটা ব্যাটিং বান্ধব উইকেট। তো আমাদের স্পিনারদের ওপর দায়িত্বটা বেশি থাকবে। রিস্ট স্পিনার থাকলে খুবই ভালো হত। কারণ এই ধরনের কন্ডিশনে রিস্ট বা লেগ স্পিনারদের স্লোয়ার খুব কার্যকর হয়ে থাকে। যেহেতু নেই, সেহেতু এ নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। তাছাড়া আমাদের এমন কোনো ফাস্ট বোলারও নেই যে শর্ট বাউন্সার দিয়ে নাক বরাবর ডেলিভারি দিয়ে চমকে দিতে পারবে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। আমাদের রাহি (আবু যায়েদ চৌধুরী) সুইং বোলার, রুবেল জোরে বল করে, মাশরাফি লাইন লেংথে ভালো বল করতে পারে। স্পিনার মিরাজ খেলবে। খুবই বিচক্ষণ একজন বোলার সে। সাকিব তো আছেই। পেসারদের সাথে ওরাও যদি হাল ধরে দেখবেন ভালো কিছুই হবে।’
লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে শুধু ব্যাটিং-বোলিং আপ টু দ্য মার্ক হলেই চলবে না, ফিল্ডিংটা হতে হবে উড়ন্ত। তা না হলে ৪০০ রান করেও ম্যাচ বাঁচানো যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন রকিবুল, ‘লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে ফিল্ডিং সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ধরা যাক বাংলাদেশ ৪০০ রান করলো। মোটামুটি বোলিং করলো। কিন্তু ফিল্ডিং ঠিক হলো না। যেখানে ১ রান হওয়ার কথা, ২ রান হচ্ছে। যেখানে বাউন্ডারি হওয়ার কথা না, সেখানে বাউন্ডারি হলো। যেখানে ক্যাচ নেওয়ার কথা, সেটা নিতে পারছি না। যে কোনো লিমিটেড ওভার ক্রিকেটে ফিল্ডিং একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। বাংলাদেশের ব্যাটিং ও বোলিংয়ে যদি কোনো ঘাটতি থেকে থাকে সেটা ফিল্ডিং দিয়ে পুষিয়ে নিতে হবে।’
মার মার-কাট কাট ব্যাটিং, সঠিক লাইন লেংথের বোলিং আর উচ্চমর্গীয় ফিল্ডিং। এই তিনের মিশেল থাকলে সেমি ফাইনাল তো বটেই, প্রথমবারের মতো মাশরাফিদের বিশ্বকাপের ফাইনালও দূরের বাতিঘর মনে হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সকল ম্যাচ অনলাইনে কোনো প্রকার সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপসেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপসটি এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিঙ্কে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ ) এই লিঙ্কে ক্লিক করে।
সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি