বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ বাংলাদেশের
২ জুন ২০১৯ ১৯:০০
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে টাইগারদের যাত্রা শুরু হলো। টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন প্রোটিয়া দলপতি ফাফ ডু প্লেসিস। সৌম্য, তামিমের উড়ন্ত ওপেনিং জুটির পর মুশফিক-সাকিবের দুর্দান্ত পার্টনারশিপে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলেছে ৩৩০ রান। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক দ্রুতগতিতে রান তুলেছেন। তাতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ দাঁড় করায় টাইগাররা। বিশ্বকাপে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ। এর আগে গত বিশ্বকাপে নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগাররা তুলেছিল ৩২২ রান।
রোববার (২ জুন) লন্ডনের দ্য ওভাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটায় শুরু হয় ম্যাচটি। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করছে গাজী টিভি। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ হলেও এটি দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ম্যাচ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে প্রোটিয়ারা।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দারুণ শুরু করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। ইনিংসের নবম ওভারে বিদায় নেন তামিম। দলীয় ৬০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আন্দ্রেইল ফেলুকাওয়োর বলে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটের পেছনে কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসবন্দি হন তামিম। তার আগে ২৯ বলে দুটি চারের সাহায্যে করেন ১৬ রান। দলীয় ৭৫ রানের মাথায় বিদায় নেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার। ক্রিস মরিসের ডেলিভারি সৌম্যর গ্লাভসে লেগে উইকেটের পেছনে চলে যায়। কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসবন্দি হওয়ার আগে সৌম্য করেন ৪২ রান। ৩০ বলে সাজানো তার দারুণ ইনিংসে ছিল ৯টি বাউন্ডারি।
এরপর জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম। ব্যক্তিগত ৫ রান করে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে ১১ হাজার রান স্পর্শ করেন সাকিব। ৭ ওভারে দলীয় ফিফটি আসলেও ১৬ ওভারে টাইগারদের দলীয় শতক আসে। সাকিব ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৩তম ফিফটি তুলে নেন, মুশফিক তুলে নেন ৩৪তম ফিফটি। এই দুই টাইগার পঞ্চমবারের মতো শত রানের জুটি গড়েন।
ইনিংসের ৩৬তম ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন সাকিব। ইমরান তাহিরের বলে বোল্ড হওয়ার আগে সাকিব করেন ৭৫ রান। সাকিব তার ৮৪ বলের ইনিংসে ৮টি চারের পাশাপাশি একটি ছক্কা হাঁকান। দলীয় ২১৭ রানের মাথায় বিদায় নেন সাকিব। সাকিব-মুশফিক জুটিতে আসে ১৪২ রান। যা বাংলাদেশের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ গড়েছিলেন ১৪১ রানের জুটি।
ব্যাটিংয়ে নেমে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান টানছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। ইনিংসের ৪০তম ওভারে ইমরান তাহিরের বলে বোল্ড হন তিনি। তার আগে ২১ বলে দুই চার আর একটি ছক্কায় ২১ রান করেন মিঠুন। দলীয় ২৪২ রানের মাথায় বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়। পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন রানমেশিন মুশফিকুর রহিম। ফেলুকাওয়োর বলে ডিপ পয়েন্টে ডুসেনের হাতে ধরা পড়ার আগে মুশফিক করেন ৭৮ রান। মিডলঅর্ডারের এই ব্যাটিং স্তম্ভ ৮০ বলে আটটি চার হাঁকান।
এরপর মোসাদ্দেককে সঙ্গে নিয়ে এগুতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের ৪৯তম ওভারে বিদায় নেন মোসাদ্দেক। ফেলুকাওয়োর বলে ক্রিস মরিসের হাতে ধরা পড়ার আগে তিনি করেন ২০ বলে ২৬ রান। যেখানে ছিল চারটি চারের মার। ৩৩ বলে ৪৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩ বলে ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
আইসিসির প্রকাশিত সবশেষ র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের থেকে চার ধাপ এগিয়ে প্রোটিয়াদের অবস্থান তৃতীয় স্থানে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অবস্থান সাত নম্বরে। প্রোটিয়াদের রেটিং পয়েন্ট ১১৫, টাইগারদের রেটিং পয়েন্ট ৯০।
তবে র্যাংকিং কিংবা অতীত দিয়ে বিশ্বকাপে কোনো দলকে বিচার করা হয় না। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। মহারণের মাঠে ব্যাট-বলে পারফর্ম করে ম্যাচ জিততে হয় সব দলকেই। মাঠের লড়াইয়ে এখন আর পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দৃঢ়। বিশ্ব ক্রিকেটের পরশক্তিদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করে টাইগাররা। লড়াইয়ে যে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই তা পরিষ্কার আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজেই।
বিশ্বকাপে হেড টু হেড মোট ম্যাচ: ৩টি, বাংলাদেশ জয়ী: ১টি। দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ী: ২টি। মুখোমুখি দুই দল মোট ম্যাচ: ২০টি। বাংলাদেশ জয়ী: ৩টি। দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ী: ১৭টি। ড্র: ০টি ম্যাচ পরিত্যক্ত: ০টি।
বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, সৌম্য সরকার, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিঠুন।
দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশ: ফাফ ডু প্লেসিস (অধিনায়ক), জেপি ডুমিনি, ডেভিড মিলার, আন্দেইল ফেলুকাওয়ো, ইমরান তাহির, কেগিসো রাবাদা, কুইন্টন ডি কক, লুঙ্গি এনগিধি, আইডেন মার্কারাম, রাসি ভ্যান ডুসেন, ক্রিস মরিস।
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সকল ম্যাচ অনলাইনে কোনো প্রকার সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপসেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপসটি এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিঙ্কে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ ) এই লিঙ্কে ক্লিক করে।
সারাবাংলা/এমআরপি