লড়াই করে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় নিউজিল্যান্ডের
৬ জুন ২০১৯ ০২:০০
জয়ের জন্য ২৪৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ২৪৮ রান করে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২ উইকেটের জয় তুলে নিল নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে মিচেল স্যান্টনারের বাউন্ডারিতে জয় নিশ্চিত করে কিউইরা।
২৪৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে মনরো-গাপটিল-টেইলরদের ভালো শুরুর পরেও ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান, মিরাজদের সঙ্গে স্পিন অ্যাটাকে যোগ দিয়ে জোড়া উইকেট তুলে নেন মোসাদ্দেক হোসেনও। সাইফুদ্দিনও শেষ দিকে দ্রুত গ্রান্ডহোম এবং হেনরিকে সাজঘরে ফেরালে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন ফার্গুসন এবং মিচেল স্যান্টনার।
জয়ের জন্য ২৪৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ডের ভালো সূচনার পরে প্রথমে আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। নিউজিল্যান্ড ইনিংসের ষষ্ঠ এবং নিজের প্রথম ওভারেই কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে আউট করেন তিনি। লং অনে ক্যাচ নেন তামিম ইকবাল। নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৫ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৫ রান।
নিউজিল্যান্ডের ২য় উইকেটও নেন সাকিব আল হাসান। নিজের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে মেহেদী হাসান মিরাজ দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচে ২৪ রান করা কলিন মুনরোকে সাজঘরে ফেরান।
দুই ওপেনারকে সাজঘরে পাঠানোর পরে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক উইলিয়ামসন এবং টেইলরের জুটির উপরে ভালোই এগুচ্ছিলো নিউজিল্যান্ড। এই দুইজনের ১০৫ রানের জুটিতে যখন ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে পড়ছিল বাংলাদেশ তখনই মেহেদী হাসান মিরাজের এক ওভারে জোড়া উইকেট আশার আলো দেখায় টাইগার সমর্থকদের।
নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ৩২তম এবং নিজের সপ্তম ওভারে বোলিং এসে মিরাজ প্রথমে আউট করেন কিউই দলপতি উইলিয়ামসনকে। ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ নেন মোসাদ্দেক হোসেন। আউট হওয়ার আগে উইলিয়ামসন করেন ৭২ বলে ৪০ রান।
একই ওভারের শেষ বলে ডিপ মিডউইকেটেই ক্যাচ তুলে দেন লাথাম। সাইফুদ্দিন দুর্দান্ত একটি ক্যাচ ধরেন। ৪ বলে কোনো রান সংগ্রহ করার আগেই আউট হন লাথাম।
এর পরে টেইলরকে সাজঘরে ফেরান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ৩৯ তম ওভারের তৃতীয় বল টেইলরের ব্যাটে লাগলে স্ট্যাম্পের পেছনে ক্যাচ নেন মুশফিক। ৯১ বলে ৮২ রান করেন টেইলর।
নিউজিল্যান্ডের ষষ্ঠ উইকেট হিসেবে গ্রান্ডহোমকে সাজঘরে পাঠান সাইফুদ্দিন। ৪৩তম ওভারের পঞ্চম বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন গ্রান্ডহোম।
ঠিক তার পরের ওভারেই কিউই অলরাউন্ডার নিশমকে আউট করেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এটি ম্যাচে তার দ্বিতীয় উইকেট। ইনিংসের ৪৪তম ওভারের ৩য় বলে লং অফে ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। আউট হওয়ার আগে নিশম সংগ্রহ করেন ৩৩ বলে ২৫ রান।
ইনিংসের ৪৭ ওভারের তৃতীয় বলে ফুলটসে হেনরিকে বোল্ড আউট করে সাজঘরে যখন ফেরত পাঠান সাইফুদ্দিন। গ্যালারিতে টাইগার ভক্তদের মনে জেগে উঠে নতুন আশা। আর ২টা উইকেট নিলেই ম্যাচ জিতে যাবে বাংলাদেশ।
কিন্তু সেই আশাকে হতাশ করে দেয় উইকেটে থাকা দুই ব্যাটসম্যান। নবম উইকেট জুটিতে ফার্গুসন এবং মিচেল স্যান্টনার কোনো ভুল না করেই দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে কিউইরা।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল টাইগাররা। লন্ডনের দ্য ওভাল স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড দলপতি কেন উইলিয়ামসন। দুই দলই একাদশে কোনো পরিবর্তন আনেনি। ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯.২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলেছে ২৪৪ রান।
আরও পড়ুন: কিউইদের ২৪৫ রানের টার্গেট দিল টাইগাররা
এর আগে বুধবার (৫ জুন) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হয় ম্যাচটি। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করছে গাজী টিভি। ওপেনিংয়ে নামেন তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। দলীয় ৪৫ রানের মাথায় বিদায় নেন সৌম্য সরকার। ম্যাট হেনরির বলে বোল্ড হওয়ার আগে সৌম্য ২৫ বলে তিনটি চারে করেন ২৫ রান। দলীয় ৬০ রানের মাথায় লুকি ফার্গুসনের বল পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে ধরা পড়েন তামিম। বিদায়ের আগে এই বাঁহাতি ওপেনার ৩৮ বলে তিন বাউন্ডারিতে করেন ২৪ রান।
এরপর জুটি গড়েন সাকিব-মুশফিক। দলীয় স্কোরবোর্ডে ৫০ রান যোগ করে সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন মুশফিক। বিদায়ের আগে মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। তার ৩৫ বলের ইনিংসে ছিল দুটি বাউন্ডারির মার। দলীয় ১১০ রানে বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারায়।
তিন নম্বর পজিশনে সাকিব যেন নিজেকে দুর্দান্তরূপেই মেলে ধরেছেন। টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে টানা দুই ফিফটি হাঁকান সাকিব। শেষ ৭ ম্যাচের ৫টিতেই ফিফটি পেয়েছেন সাকিব। একটি ম্যাচে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি তাকে। দলীয় ১৫১ রানের মাথায় সাকিব বিদায় নেন। কলিন ডি গ্রান্ডহোমের বলে টম লাথামের হাতে ধরা পড়ার আগে ৬৮ বলে সাতটি চারের সাহায্যে সাকিব করেন ৬৪ রান। ক্যারিয়ারের ৪৪তম ফিফটি পান সাকিব।
মেলে ধরার সুযোগ পেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন। ইনিংসের ৩৮তম ওভারে ম্যাট হেনরির বলে গ্রান্ডহোমের তালুবন্দি হওয়ার আগে তিনি করেন ২৬ রান। তার ৩৩ বলের ইনিংসে ছিল তিনটি বাউন্ডারির মার। ৪১ বলে ২০ রান করে ইনিংসের ৪৩তম ওভারে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৪৭তম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের বল তুলে মারতে গিয়ে মার্টিন গাপটিলের তালুবন্দি হন মোসাদ্দেক হোসেন। বিদায়ের আগে ২২ বলে ১১ রান করেন মোসাদ্দেক। ৪৯তম ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। তার আগে মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৮ রান। শেষ ওভারে মাশরাফিকে (১) ফেরানোর পরের বলেই ২৯ রান করা সাইফউদ্দিনকে বোল্ড করেন ম্যাট হেনরি। এর আগে ২৩ বলে তিনটি চার আর একটি ছক্কায় ইনিংসটি সাজান সাইফউদ্দিন।
ম্যাট হেনরি ৯.২ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে নেন চারটি উইকেট। দুটি উইকেট পান ট্রেন্ট বোল্ট। একটি করে উইকেট লাভ করেন লুকি ফার্গুসন, মিচেল স্যান্টনার এবং কলিন ডি গ্রান্ডহোম।
আইসিসির প্রকাশিত সবশেষ র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। টাইগারদের থেকে তিন ধাপ এগিয়ে কিউইদের অবস্থান চতুর্থ স্থানে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অবস্থান সাত নম্বরে। কিউইদের রেটিং পয়েন্ট ১১৩ আর বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট ৯০।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৯.২ ওভারে ২৪৪ রান ( তামিম ২৪, সৌম্য ২৫, সাকিব ৬৪, মুশফিক ১৯, মিঠুন ২৬, মাহমুদউল্লাহ ২০, মোসাদ্দেক ১১, সাইফ ২৯, মিরাজ ৭, মাশরাফি ১, মুস্তাফিজ ০*; হেনরি ৯.২-০-৪৭-৪, বোল্ট ১০-০-৪৪-২, ফার্গুসন ১০-০-৪০-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ৮-০-৩৯-১, নিশাম ২-০-২৪-০, স্যান্টনার ১০-১-৪১-১)
নিউ জিল্যান্ড: ৪৭.১ ওভারে ২৪৮/৮ ( গাপটিল ২৫, মানরো ২৪, উইলিয়ামসন ৪০, টেইলর ৮২, ল্যাথাম ০, নিশাম ২৫, ডি গ্র্যান্ডহোম ১৫, স্যান্টনার ১৭*, হেনরি ৬, ফার্গুসন ৪*; মাশরাফি ৫-০-৩২-০, মিরাজ ১০-০-৪৭-২, মুস্তাফিজ ৭.১-০-৪৮-০, সাকিব ১০-০-৪৭-২, সাইফ ৭-০-৪১-২, মোসাদ্দেক ৮-০-৩৩-২)
* অপরাজিত
ফলাফল: নিউজিল্যান্ড দুই উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রস টেইলর
বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, সৌম্য সরকার, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মোহাম্মদ মিঠুন।
নিউজিল্যান্ড একাদশ: কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), মার্টিন গাপটিল, রস টেইলর, টম লাথাম (উইকেটরক্ষক), কলিন মুনরো, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, মিচেল স্যান্টনার, জিমি নিশাম, ম্যাট হেনরি, লুকি ফার্গুসন ও ট্রেন্ট বোল্ট।
ম্যাচটির ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে
https://www.rabbitholebd.com/details/21/72#
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com–এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
সারাবাংলা/এসবি
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ গাজী টিভি টাইগার নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশ র্যাবিটহোল