কিউইদের বিপক্ষে সব বিভাগে ভালো সূচনার আশা কোচ সালাউদ্দিনের
৫ জুন ২০১৯ ০৩:২২
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলেছে। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে উন্নতি চোখে পড়ার মতন। এমন ম্যাচিউর ব্যাটিং প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে সাকিব এবং মুশফিক যেভাবে ইনিংসটাকে কোনো রিস্ক নেওয়া ছাড়াই বড় করেছে সেটা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকেই খেলা ইনিংস বলবো। শেষ দিকে রিয়াদ এবং মোসাদ্দেক যেভাবে শেষ করেছে সেটা খুবই ভালো ছিল।
গত কিছু ম্যাচে মোসাদ্দেক যেভাবে ফিনিশিং করছে সেটা চোখে পড়ার মতন। মাহমুদুল্লাহ আমরা জানি খুবই ভালো ব্যাটিং করে। সেই সঙ্গে যদি মোসাদ্দেক ও ভালো করে তবে আমরা বলবো এটা আমাদের ব্যাটিং কে শক্তিশালী করে তুলে। বড় শট খেলার ব্যাটসম্যান আমাদের খুবই কম। রিয়াদের পরে আগে মোসাদ্দেককে সেভাবে কাউন্টে রাখা না হলেও শেষ দুই ম্যাচে সে প্রমাণ করেছে যে তার বড় শট খেলা সামর্থ্য আছে এবং ভালো ফিনিশিংও দিতে পারে। একই সঙ্গে সে প্রচুর ইনোভেটিভ শট ও খেলছে। আগে তার শর্ট বলে কিছুটা সমস্যা ছিল। প্রথমদিকে তার ক্যারিয়ারে যেটা কিছুটা সমস্যা করে। কিন্তু এবার দেখলাম যে শর্ট বলেও সে কাট করছে, পুল করছে। হয়তোবা পুরোপুরি নিখুঁত হয় নি কিন্তু উন্নতি অনেক করেছে সে। একটা ব্যাটসম্যান যদি তার দুর্বলতা বুঝে উন্নতির চেষ্টা করে যায় তবে বলতে হয় তার উন্নতি হচ্ছে। মোসাদ্দেকের ক্ষেত্রে সেটাই বলবো। শেষ দিকে যদি সাইফুদ্দিন এবং মাশরাফি কিছুটা সহযোগিতা করে যায় তবে লোয়ার অর্ডারে বাংলাদেশের ব্যাটিং এর গভীরতা বাড়ে।
আমি বলবো বাংলাদেশের ওয়ানডে ম্যাচের জন্য এটা একটা ভালো দিক। সৌম্যের কথা না বললেই না। সে যেভাবে উড়ন্ত সূচনা এনে ভালো একটা শুরুর ভীত গড়ে দিয়েছে দিল সেটা খুবই দরকার ছিল। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং এটাককে কাউন্টার দিয়ে বড় একটি স্কোর গড়ার জন্য এমন ইনিংস খুবই দরকার ছিল শুরুতে।
সেদিন ম্যাচের আগেই বলছিলাম আমাদের ব্যাটিং অনেক শক্তিশালী। কারণ আমাদের খেলোয়াড়েরা ওয়ানডে ক্রিকেটের ফরম্যাটে অনেক অভিজ্ঞ। এই ফরম্যাটটা আমরা খুব ভালো বুঝি এবং তাই আমরা ম্যাচও জিতি। বোলিংয়ের কথা যদি বলি তবে বলতে হয় দুই স্পিনার পুরো খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। পেসবোলাররা উইকেট নিলেও সাকিব এবং মিরাজ যেভাবে খেলাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে তাতেই দক্ষিণ আফ্রিকার পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলের বিপক্ষে জয়টাকে আমরা হয়তো অনেক বড় করে দেখছি কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে অভিজ্ঞতার দিকে আমরা তাদের চাইতে অনেক এগিয়ে। কিভাবে ইনিংস বড় করতে হয় তারা সেটাক করতে পারে নি। শেষ দিকে সাইফুদ্দিন কামব্যাক করে দুইটি উইকেট নিয়েছে যেটা খুবই দরকার ছিল। প্রথম দুই ওভারে অনেক রান দিলেও শেষ দিকে সে ডেথ ওভারে ভালো বল করেছেন। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে সে বাংলাদেশের জন্য ডেথ ওভারে ভালো একটা খেলোয়াড় হয়ে উঠবে। মুস্তাফিজের বোলিং আমার কাছে মনে হয়েছে আগের চাইতে অনেক বেশী রিদমে এসেছে এবং জোরেও বল করছে।
মাশরাফির ক্ষেত্রে আমি বলবো সে যদি আরও আগে বোলিং করে তবে দলের জন্য ও ওর নিজের জন্য খুব ভালো হবে। নতুন বল দিয়ে সে যখন উইকেট নেয় তখন আমরা অনেক ম্যাচ জিতে যাই। মাশরাফি যখন পরে বোলিং করে তখন আসলে বলের সেই এফেকটিভনেস থাকে না। কারণ তার স্যুইং টা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। পরের ম্যাচগুলোতেও হয়তো আমরা দেখবো শেষ ৫ ওভার মুস্তাফিজ এবং সাইফুদ্দিনই করবে। অবস্থা যেমনই থাকুক এই দুইজনই বোলিং করবে। লাস্ট ১০ ওভারে আসলে একটা অ্যাডভান্টেজ থাকে। সেই সময়ে প্রথম ৫ ওভারে একটা ফিল্ডার বেশী পাওয়া যায় আর ঐ ৫ ওভারেই ব্যাটসম্যানরা হিটিং করে খেলার চেষ্টা করে। সেই সময়টাতে সাইফুদ্দিন, মুস্তাফিজরা যদি ভালো বল করে তবে ডেথে আমাদের খুব একটা সমস্যা হবে না।
ফিল্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। সৌম্য আমাদের খুবই একজন কফিল্ডার। হয়তোবার এডজাস্ট করতে না পাড়ার কারণে একটা ক্যাচ ড্রপ হয়েছে কিন্তু আমি বলবো সেটা দুর্ঘটনা মাত্র। কিছু ল্যাকিংস থাকলেও এখানে উন্নতির সুযোগ সবসময়েই থাকে। আমাদের খেলোয়াড়দের শারীরিক গঠন ও আমাদের আবহাওয়াগত কারণে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার মতন ফিল্ডিং সাইড হতে পারবো না। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ক্লাস হতে না পারলেও আমরা খুব ভালো মানের ফিল্ডিং দল হতে পারবো যেটা হচ্ছিও।
মাশরাফির অধিনায়কত্ব ভালো হয়েছে। যেভাবে বোলারদের দিয়ে চেষ্টা করে গেছে সেটা সে সবসময়েই করে থাকে। ওভারঅল বাংলাদেশের পারফরম্যান্স খুবই ভালো।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপের মতন আসরে নিউজিল্যান্ড বরাবরই ভালো দল। এই টুর্নামেন্টেও তারা খুবই ভালো দল সব দিক দিয়েই। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আছে দলে, আছে ভালো বোলিং এটাক এবং কার্যকরী কিছু অলরাউন্ডার যারা দলটিকে আরও শক্তিশালী করেছে। তাদের ব্যাটিং ডেপথও অনেক লম্বা। ৮ নাম্বার পর্যন্ত ব্যাটসম্যান আছে। পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টে ট্রেন্ট বোল্টরা শ্রীলংকার বিপক্ষে যেভাবে খেলেছে তা চোখে পড়ার মতন। তাদের লম্বা শারীরিক গঠনের কারণে তারা উইকেট থেকেও কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। সব দিক দিয়েই তারা ব্যালেন্স একটা দল আর তাই খেলাটা খুবই হাড্ডাহাড্ডি হবে।
তবে এমন না যে তাদের হারানো যাবে না। ওদের আমরা আগেও হারিয়েছি। ওদের পেস বোলিং টা আমার কাছে মনে হয় আমাদের দলের জন্য খুব একটা সমস্যা হবে। তবে প্রথম ১০ ওভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বোলিং এই সময়ে যদি আমরা তাদের উইকেট ফেলতে না পারি তবে আমাদের জন্য বিপদ হতে পারে। আবার ব্যাটিং এ প্রথম ১০ ওভারে যদি আমরা কোনো উইকেট না হারিয়ে ইনিংস বিল্ডআপ করতে পারি তবে তা আমাদের জন্য ভালো সূচনা হবে। আগের ম্যাচে সৌম্য যেভাবে সূচনা করেছে তেমন একটা কিছু দরকার এই ম্যাচেও। আর সেই সময়ে আমরা গেইমেও থাকবো ভালো ভাবে।
পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে যদি ভালো করতে হয় তবে প্রথম ১০ ওভারে আমাদের কেমন বোলিং হচ্ছে এবং এর পরে স্পিনাররা কিভাবে বোলিং করবে তার উপরে নির্ভর করতে হবে। আমাদের তেমন পেস বোলার নাই যে আমরা প্রতিপক্ষকে সবসময়েই থ্রেডে রাখতে পারবো। মোস্তাফিজ ছাড়া এখানে আমাদের তেমন কেউ নাই যে উইকেট থেকে কিছু সাহায্য নিয়ে বোলিং করতে পারবে। আমাদের যদি কিছু করতে হয় তবে স্পিনারদের উপরেই নির্ভর করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সাকিবের জন্য আলাদা কোনো কিছু দরকার হয় না। উইকেটের সাহায্য ছাড়াও যেকোনো ধরণের উইকেটে সে খেলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বোলিং করতে পারে এবং উইকেটও নিতে পারে। লাইন এবং লেংথ তার সবসময়েই ঠিক থাকে। মেহেদীও বলবো ভালো করছে। গত ম্যাচে সে প্রতিটা বল স্ট্যাম্পে রেখে করে গেছে এবং বাতাস থাকার কারণে কিছু ড্রিফ সে পেয়েছে যে কারণে বাতাসে বল ঘুরে স্ট্যামে এসেছে। বাংলাদেশের এই স্পিনারের উপরে অবশ্যই তাই ভরসা করতে হবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও এই দুইজনই ভরসা হয়ে উঠতে পারেন।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ওদের উইকেট নিতে হবে আমাদের খুব দ্রুত। মার্টিন গাপটিল এবং কলিন মুনরো দুইজনই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে যেকোনো সময়ে। দুইজনই এই বিশ্বকাপের দুই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। তাদের পরবর্তী ব্যাটসম্যানরাও অনেক ভালো ফর্মে আছে এবং অভিজ্ঞও। এরা খুব দ্রুত রান তুলতে পারে। এই দুইজনকে আউট করা গেলে ওয়ান ডাউনে আসা অ্যান্ডারসন এবং টেইলরদের উপরে নিয়ন্ত্রণ রেখে বোলিং করা যাবে। যদিও তারা স্পিনারদের খুব ভালো খেলে। মনরো যেহেতু বাঁহাতি তাই মিরাজ বোলিং ওপেন করলেও সমস্যা হওয়ার কথা না। মুস্তাফিজের যত ওভার রাখা যায় শেষের দিকের জন্য ততই আমাদের জন্য ভালো হবে।
তাই আবার বাংলাদেশের বোলিং এ শুরুতেই ব্রেক থ্রু পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এবং বাংলাদেশের ব্যাটিং এর সময়েও খুব ভালো একটা সূচনা পেতে হবে কোনো উইকেট না হারিয়ে। ওরাও কিন্তু একই চিন্তাই করবে। ট্রেন্ট বোল্ট জোরে বল করবে স্ট্যাম্পের উপরেই। সেটা ট্যাকল করে খেললে হেনরিকে খেলতে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা না। সেই ক্ষেত্রে একটা বড় রানের স্কোর পাওয়া যেতে পারে। আমাদের মিডল অর্ডার খুবই ভালো। যদি ওপেনিং জুটিতে ভালো কিছু করে যাওয়া যায় তবে আমি বলবো মিডল অর্ডার বড় রানের স্কোর গড়ে তুলবেই। ওয়ানডে ম্যাচ জিততে হলে প্রথম ১০ ওভারে কি হলো সেটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। মূল বিষয় হলো ১১-৪০ ওভারে কি করা হচ্ছে তা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই সময়েই আমরা খুব ভালো ব্যাটিং করেছি। উইকেট না হারিয়ে পার্টনারশিপ গড়ে তোলা এই সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তামিম, মুশফিক, রিয়াদরা অনেক ম্যাচ একসঙ্গে খেলেছে আর তাই তাদের উপরেই নির্ভর করবে বাংলাদেশ আবারও। সব মিলিয়ে আবার বলবো ম্যাচের একটা ভালো শুরু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের ম্যাচ নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় ভারত এই ম্যাচে অনায়াসেই জিতবে। ডেল স্টেইন, এনগিডি ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইন আপ এখন অনেক দুর্বল হয়ে গেছে আর সেটা দিয়ে ভারতের বিশ্বমানের ব্যাটিং এর বিপক্ষে ভালো কিছু করা কষ্টসাধ্য বিষয়। এই ক্ষেত্রে ভারতের একটা সহজ জয় আমরা দেখতে পাবো এই ম্যাচে।
সারাবাংলা/এসবি
কোচ গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ বাংলাদেশ মাশরাফি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন র্যাবিটহোল