ব্যাট-বলে দুই পেসারের তাণ্ডবে জিতলো অস্ট্রেলিয়া
৬ জুন ২০১৯ ২২:২৫
বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে উইন্ডিজের মুখোমুখি হয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ২৮৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে উইন্ডিজরা ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৭৩ রান। তাতে, আফগানিস্তানকে হারানোর পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও জয় তুলে নিল অজিরা। অ্যারন ফিঞ্চের দলটি ১৫ রানে হারিয়েছে উইন্ডিজকে। ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন পেসার কোল্টার নাইল আর বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন পেসার মিচেল স্টার্ক। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন নাথান কোল্টার নাইল।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে শুরু করে দু’দলই। নিজেদের প্রথম ম্যাচে দু’দলই পেয়েছিল সাত উইকেটের বড় জয়। নটিংহ্যামেই পাকিস্তানকে হারিয়েছিল উইন্ডিজ। আর আফগানদের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার জয় এসেছিল ব্রিস্টলের কাউন্টি গ্রাউন্ডে।
বিশ্বকাপের দশম ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডিজ দলপতি জেসন হোল্ডার। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ইংল্যান্ডের নটিংহ্যাম ট্রেন্ট ব্রিজ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটায় শুরু হয় ম্যাচটি। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করে গাজী টিভি।
অজিরা শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ৪৯ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে তোলে ২৮৮ রান। দলীয় ৩৮ রানে চারটি আর ৭৯ রানে টপঅর্ডারের পাঁচটি উইকেট হারানোর পর ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। দারুণ ইনিংস খেলেন স্টিভ স্মিথ। আর ৮ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ক্যারিয়ার সেরা ৯২ রান করেন নাথান কোল্টার নাইল।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে অজি দলপতি অ্যারন ফিঞ্চকে বিদায় করেন উইন্ডিজ পেসার ওশানে থমাস। উইকেটের পেছনে শাই হোপের গ্লাভসবন্দি হওয়ার আগে ফিঞ্চ করেন ৬ রান। দলীয় ১৫ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ২২ রানের মাথায় অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় উইকেট হারায়। শেলডন কটরেলের বলে হেটমায়ারের হাতে ধরা পড়েন ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার (৩)। দলীয় ৩৬ রানের মাথায় বিদায় নেন তিন নম্বরে নামা উসমান খাজা। আন্দ্রে রাসেলের বলে উইকেটের পেছনে শাই হোপের দারুণ এক ক্যাচে খাজাকে সাজঘরে পাঠায় উইন্ডিজরা। বিদায়ের আগে ১৯ বলে দুই বাউন্ডারিতে ১৩ রান করেন খাজা।
স্কোরবোর্ডে ২ রান যোগ হতেই বিদায় নেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (০)। কটরেলের বাউন্সার পুল করতে গিয়ে তুলে দেন উইকেটরক্ষক শাই হোপের গ্লাভসে। এরপর জুটি গড়েন স্টিভ স্মিথ এবং মার্কাস স্টইনিস। ইনিংসের ১৭তম ওভারে স্টইনিসকে ফিরিয়ে দেন উইন্ডিজ দলপতি জেসন হোল্ডার। নিকোলাস পুরানের তালুবন্দি হওয়ার আগে স্টইনিস ২৩ বলে চারটি চারের সাহায্যে করেন ১৯ রান। দলীয় ৭৯ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
বিপাকে পড়া অজিদের টেনে তোলার দায়িত্ব নেন সাবেক দলপতি স্টিভ স্মিথ এবং অ্যালেক্স ক্যারি। ৬৮ রানের জুটিও গড়েন তারা। ইনিংসের ৩১তম ওভারে আন্দ্রে রাসেল আবারো আঘাত হানেন অজি শিবিরে, ফিরিয়ে দেন ক্যারিকে। এবারো উইন্ডিজদের উইকেটের সাথে নাম লেখান শাই হোপ। ক্যারিবীয়ান এই উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে ধরা পড়ার আগে ক্যারি ৫৫ বলে সাতটি বাউন্ডারিতে ৪৫ রান করেন ক্যারি। দলীয় ১৪৭ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
এরপর স্মিথ-কোল্টার নাইল দলকে নিয়ে এগুতে থাকেন। স্কোরবোর্ডে ১০২ রান যোগ করেন তারা। ওশানে থমাসের করা ৪৫তম ওভারে বাউন্ডারি সীমানায় ধরা পড়েন স্মিথ। কটরেলের দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফেরার আগে স্মিথ করেন ৭৩ রান। তার ১০৩ বলে সাজানো ইনিংসে ছিল সাতটি চারের মার। ২৪৯ রানের মাথায় অস্ট্রেলিয়া সপ্তম উইকেট হারায়। ৪৭তম ওভারে ব্রাথওয়েট ফিরিয়ে দেন ২ রান করা প্যাট কামিন্সকে।
আট নম্বরে নামা কোল্টার নাইল করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৯২ রান। অজি এই পেসারের আগের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিল ৩৪ রান। আজ ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরিবঞ্চিত হন। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে কোল্টার নাইল ইনিংসের ৪৯তম ওভারে বিদায় নেন। ব্রাথওয়েটের বলে হোল্ডারের হাতে ধরা পড়ার আগে ৬০ বলে আটটি চার আর চারটি ছক্কা হাঁকান রেকর্ড গড়া কোল্টার নাইল। একই ওভারে ব্রাথওয়েট ফিরিয়ে দেন মিচেল স্টার্ককে (৮)। অ্যাডাম জাম্পা ব্যাট করার সুযোগ পাননি। আট নম্বর বা তার নিচে নেমে কোনো অস্ট্রেলিয়ানের এটাই সর্বোচ্চ স্কোর। ২০১৬ সালে ইংলিশ পেসার ক্রিস ওকস আট নম্বরে নেমে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত থাকেন ৯৫ রানে। আর চারটি রান হলে বিশ্ব রেকর্ডই গড়ে ফেলতেন কোল্টার নাইল।
কার্লোস ব্রাথওয়েট ১০ ওভারে ৬৭ রান দিয়ে পান তিনটি উইকেট। দুটি করে উইকেট পান শেলডন কটরেল, আন্দ্রে রাসেল এবং ওশানে থমাস। একটি উইকেট নেন জেসন হোল্ডার।
২৮৯ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে প্যাট কামিন্সের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়েন ওপেনার এভিন লুইস। দলীয় ৭ রানে উইন্ডিজরা প্রথম উইকেট হারায়। তৃতীয় ওভারে মিচেল স্টার্কের বল স্টাম্প ছুঁয়ে গেলে আম্পায়ার ক্যাচের সিদ্ধান্ত দেন। ক্রিস গেইল রিভিউ নিলে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় গেইলের ব্যাটে বল লাগেনি। স্টাম্পে বল লেগে শব্দ হলেও বেইল উঠেনি বা পড়েনি। বেঁচে যান গেইল। একই ওভারে গেইলকে এলবির সিদ্ধান্ত জানিয়ে আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার। এবারো রিভিউ নেন গেইল। রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত জানানো হয় ইউনিভার্স বস নটআউট। পঞ্চম ওভারে মিচেল স্টার্কের বলে আরেকবার এলবির ফাঁদে পড়েন গেইল। এবারো রিভিউ চেয়ে আবেদন করেন উইন্ডিজ ওপেনার। তবে, এ যাত্রায় বাঁচতে পারেননি ১৭ বলে চারটি চারের সাহায্যে ২১ রান করা গেইল। দলীয় ৩১ রানের মাথায় দুই ওপেনারকে হারায় ক্যারিবীয়ানরা।
২০তম ওভারে অজি স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা ফিরিয়ে দেন নিকোলাস পুরানকে। অ্যারন ফিঞ্চের তালুবন্দি হওয়ার আগে তিনি করেন ৩৬ বল পাঁচটি চার আর একটি ছক্কার সাহায্যে ৪০ রান। দলীয় ৯৯ রানে উইন্ডিজ হারায় তৃতীয় উইকেট। ১৪৯ রানের মাথায় রানআউট হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন শিমরন হেটমায়ার (২৮ বলে ২১)। তার আগে শাই হোপের সঙ্গে ৫০ রানের জুটি গড়েন তিনি।
৩৫তম ওভারের শাই হোপকে ফেরান প্যাট কামিন্স। উসমান খাজার হাতে ধরা পড়ার আগে হোপ করেন ১০৫ বলে ৬৮ রান। তার ইনিংসে ছিল সাতটি বাউন্ডারি। ১৯০ রানের মাথায় উইন্ডিজরা হারায় পঞ্চম উইকেট। আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তে আউট হতে বসেছিলেন জেসন হোল্ডারও। একাধিক বাজে ডিসিশনের বিপক্ষে গিয়ে এবারো রিভিউ নেয় উইন্ডিজ। এবারো আম্পায়ারকে সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিতে হয়। ৩৯তম ওভারে স্টার্ক ফিরিয়ে দেন আন্দ্রে রাসেলকে। ঝড় তোলার আগেই বিদায় নেন রাসেল। ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগে ১১ বলে দুই চার, এক ছয়ে রাসেল করেন ১৫ রান। দলীয় ২১৬ রানের মাথায় উইন্ডিজ হারায় ষষ্ঠ উইকেট।
দলীয় ২৫২ রানের মাথায় বিদায় নেন কার্লোস ব্রাথওয়েট। মিচেল স্টার্কের স্লোয়ারে ফিঞ্চের হাতে ধরা পড়ার আগে ১৭ বলে এক চার আর এক ছক্কায় তিনি করেন ১৬ রান। একই ওভারে স্টার্ক ফেরান উইন্ডিজ দলপতি জেসন হোল্ডারকে। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে টানতে থাকা হোল্ডার এক্সট্রা বাউন্সে শর্ট ফাইনলেগে অ্যাডাম জাম্পার হাতে ধরা পড়েন। তার আগে উইন্ডিজ দলপতি ৫৭ বলে সাতটি চার আর একটি ছক্কায় করেন ৫১ রান। ৪৮তম ওভারে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে শেলডন কটরেলকে (১) বোল্ড করেন মিচেল স্টার্ক। ইনিংসের শেষ চার বলে চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে অপরাজিত থাকেন ১৮ বলে ১৯ রান করা অ্যাশলে নার্শ।
১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে ৫টি উইকেট তুলে নেন অজি পেসার মিচেল স্টার্ক। আরেক পেসার প্যাট কামিন্স ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে নেন দুটি উইকেট। স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা ১০ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। কোল্টার নাইল ১০ ওভারে ৭০ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।
আইসিসির প্রকাশিত সবশেষ র্যাংকিংয়ে উইন্ডিজ থেকে তিন ধাপ এগিয়ে আছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ১০৯ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ৫ম স্থানে আছে অজিরা আর ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে ৮ম স্থানে উইন্ডিজ। দুই দলই মুখোমুখি হয় নিজেদের সেরা পারফমারদের নিয়ে।
উইন্ডিজ একাদশ: জেসন হোল্ডার (অধিনায়ক), ক্রিস গেইল (সহ-অধিনায়ক), শিমরন হেটমায়ার, শাই হোপ, আন্দ্রে রাসেল, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, নিকোলাস পুরান, অ্যাশলে নার্শ, ওশান থমাস, এভিন লুইস, শেল্ডন কটরেল।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ: অ্যারণ ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজা, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটরক্ষক), নাথান কোল্টার-নাইল, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও অ্যাডাম জাম্পা।
ম্যাচটির হাইলাইটস দেখতে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে
https://www.rabbitholebd.com/details/21/74#
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
সারাবাংলা/এমআরপি
অস্ট্রেলিয়া উইন্ডিজ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ জিটিভি র্যাবিটহোল