Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ব্যাটিংয়ে প্রথম ১০ ওভার, বোলিংয়ে পেস বিভাগকে ভালো করতে হবে’


৮ জুন ২০১৯ ১৫:১৩

বাংলাদেশকে যদি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনালে খেলতে হয়, তবে কিছু বড় দলকে হারিয়ে পয়েন্ট নিতেই হবে। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতে যাওয়া আর দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের আজকের ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে মনে হয়, আফগানিস্তান, শ্রীলংকার মতো দলগুলোর বিপক্ষে ভালোভাবেই জিতবে বাংলাদেশ। কিন্তু অন্য ম্যাচগুলো থেকেও পয়েন্ট নিতে হবে, যদি সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে হয়।

বিজ্ঞাপন

গত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ আমরা নিতে পারিনি। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই সুযোগ নিতেই হবে। অন্যদিকে ইংল্যান্ড গত কয়েকবছর ওয়ানডে ফরম্যাটের ম্যাচে খুবই ভালো করছে, ভালো ডমিনেট করে ক্রিকেট খেলছে। কিন্তু তাদেরকে হারানো আমাদের পক্ষে সম্ভব। এর জন্য বিশেষ করে দুইটি দিকে আমাদের দক্ষতা আর সামর্থ্য উজাড় করে দিয়ে নিখুঁত খেলতে হবে— ব্যাটিংয়ে প্রথম ১০ ওভার, আর আমাদের পেস ডিপার্টমেন্টের বোলিং।

বিজ্ঞাপন

ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমাদের পেস বোলিং অনেক দুর্বল হচ্ছে। বিশেষ করে মাশরাফি ও সাইফুদ্দিন তাদের ১০ ওভার পূরণ করতে পারছে না। এতে টিমের জন্য ক্ষতিই হচ্ছে। কারণ তারা দলে মূল বোলার হিসেবেই কিন্তু খেলছে। শুরুতেই তাদের ভালো বোলিং করতে হবে। ডেথে সাইফুদ্দিন কিছুটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও আমার কাছে মনে হচ্ছে, শুরুতেই উইকেট নিতে না পারলে দলের ওপর প্রেশার পড়ে যায়।

এদিকে, আমাদের টিম অনেকটাই স্পিননির্ভর। ইংল্যান্ডের মাটিতেও আমাদের স্পিনাররা প্রতিদান দিচ্ছে। সাকিব ও মিরাজ খুবই ভালো বোলিং করছে। সেই সঙ্গে মোসাদ্দেকও ভালো বোলিং করেছে গত ম্যাচে। উইকেট থেকে সাহায্য না পেলেও স্পিন ডিপার্টমেন্ট ভালো করছে। তারা ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখছেন। কিন্তু পেস বোলাররা শুরুতেই প্রতিপক্ষের উইকেট না নিতে পারলে প্রতিপক্ষকে আটকে রাখা আমাদের টিমের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাবে। আর সেক্ষেত্রে ম্যাচ জেতাটাও কঠিন হয়ে যাবে। কারণ আগেই বলেছি, ইংল্যান্ডের এই দলটা একসঙ্গে অনেক দিন ধরেই ক্রিকেট খেলছে এবং দলটিতে অনেক ওয়ানডে স্পেশালিষ্ট আছেন। তাদের ওপেনিং জুটি কিন্তু বেশ হাত খুলেই খেলতে পারে। ইংল্যান্ড দলে যেহেতু দু’জন ডানহাতি ওপেনার, তাই হয়তো আজ সাকিবকে দিয়ে বোলিং ওপেন করানো যেতে পারে। কিন্তু কোনো কারণে সাকিব ব্যর্থ হলে ম্যাচে ফিরে আসা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। এ কারণেই আমি বলব, আজ আমাদের পেস বোলিংকে ক্লিক করতে হবে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেহেতু রুবেলের রেকর্ড খুবই ভালো, তাই তাকে আজ খেলানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কিছুটা বৈচিত্র্যও আসতে পারে আমাদের বোলিংয়ে। কারণ মাশরাফি ও সাইফুদ্দিনের পেস একই গতির হয়ে যাওয়ায় বৈচিত্র্য  খুব বেশি থাকছে না। সোজা বাংলায় বলতে গেলে তারা প্রতিপক্ষকে সেভাবে ভোগাতে পারছেন না, ব্যাটসম্যানকে কঠিন পরীক্ষার মুখেও ফেলতে পারছে না। হয়তো প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা মারতে গেলে কিছু সময় সম্ভাবনা থাকে উইকেট পাওয়ার, কিন্তু বৈচিত্র্য না থাকার কারণে সেটা এখন পর্যন্ত হয়নি। মুস্তাফিজ কিছু সময় হয়তো ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেই ভীতিটা আনতে পারে, কিন্তু অন্য কেউ এখনো পারছে না। রুবেল দলে থাকলে হয়তো সেই জায়গাতে কিছুটা সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ। এ কারণে আমি বলব, বোলিংয়ে আরেকটু মনোযোগ দিয়ে পরিকল্পনা করা দরকার।

ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে আমি বলব, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিং আরও ভালো হওয়া দরকার ছিল। ব্যাটসম্যানদের আরও লম্বা ইনিংস খেলা দরকার ছিল। বিশেষ করে সৌম্য যেহেতু শুরুটা পাচ্ছে, তাই প্রথম ১০ ওভারে ভালো রান করে তারপরে সে আউট হয়ে গেলে সেটা দলের জন্য একটা বিশাল ক্ষতি। ইনিংস লম্বা করাটা অনেক বেশি জরুরি। সৌম্যের বোঝা উচিত, ১০ ওভার পরে রান করাটা অনেক সহজ কাজ হয়ে যায়। সেই সময়ে ফিল্ডার থাকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, থাকে অনেক গ্যাপও। সেক্ষেত্রে লম্বা ইনিংস খেলাটাও সহজ হয়ে যায়। সবসময়েই মেরে মেরে আপনি ইনিংস লম্বা করতে পারবেন না। এ কারণে বলব, সৌম্যের আরও ম্যাচুরিটি আসা দরকার, বিশেষ করে ইনিংস বড় করা নিয়ে। তামিম যেহেতু গত দুই ম্যাচে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করে খেলতে পারেনি, বড় ম্যাচে তারও রানে ফেরাটা জরুরি, দলের সেই প্রত্যাশা নিশ্চয় থাকবে। পাশাপাশি তামিমকেও দায়িত্ব নিতে হবে, সৌম্য যেন ভালো শুরুর পর ইনিংস টেনে নিয়ে যেতে পারে, ক্রিজে সিনিয়র পার্টনার হিসেবে সেই গাইডটুকু করতে হবে। তামিম আশা করি রানে ফিরবে এবং আশা করব আরেকটু আক্রমণাত্মক হয়ে খেলবে সে। একটু ফ্রি হয়ে খেলতে পারলে আশা করছি সেও ভালো খেলবে।

গত ম্যাচে নিউজিল্যান্ড অনেক বেশি ভালো বোলিং করেছে। তারা আমাদের প্রতিটি  ব্যাটসম্যানের বিষয়ে হোমওয়ার্ক করে এসেছিল। বাংলাদেশ আসলে কোথায় ভালো আর কোথায় খারাপ খেলে, এই সবকিছু মিলিয়ে তারা খুব ভালো হোমওয়ার্ক করে আসাতে দেখা গেছে আমাদের ব্যাটসম্যানরা তাদের স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেনি। যে কারণে ১৪৫টি ডট বল তারা করতে পেরেছে। তবে এমন না যে ওরা হোমওয়ার্ক করে আসলেই ভালো করবে। বরং বলতে হবে সেটা মোকাবিলা করার পরিকল্পনাও থাকা দরকার। প্রতিপক্ষ শর্ট বল করলেই তা ছাড়তে হবে বা ডিফেন্ড করব, এমনটা কিন্তু হবে না। আপনাকে রানের অপশন বের করতেই হবে। এতগুলা ডট বল মানাটাও কষ্টকর।

নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বোলিং লাইনআপকে আমি বলবো প্রায় একই রকম। তাদের বোলিংয়ের ধাঁচও একই রকম। পেস বোলিং আসলে আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য খুব একটা বিশাল কোনো সমস্যা নয়। উইকেট থেকে বোলাররা কেমন বেশি বাউন্স পাচ্ছে, সেটি একটি ফ্যাক্ট। আর্চার যে উচ্চতার খেলোয়াড়, সে উইকেট থেকে কিছুটা অতিরিক্ত বাউন্স এমনিতেই পায়। প্রথম ১০ ওভারে তাকে দেখে শুনে খেলাটাই তাই ভালো হবে। আবার দুই দিন ধরে কার্ডিফে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই উইকেট ঢাকা ছিল। যদি টসভাগ্য আমাদের পক্ষে না থাকে, সেক্ষেত্রে আমাদের হয়তো আগে ব্যাটিং করতে হবে। আর যদি বাংলাদেশ টসে জিতে যায়, তবে আমরা আগে বোলিং করলে ভালো করব। কারণ উইকেট দুই দিন ঢাকা থাকায় পেস বোলাররা কিছুটা সুবিধা পেতে পারে।

গত ম্যাচে মাশরাফির লেংথটা একটু বেশি শর্ট মনে হয়েছিল। আরেকটু ওপরে বল করলে মাশরাফি হয়তো উইকেট থেকে স্যুইং পেতে পারে। আর যদি আগে ব্যাটিং করতে হয়, তবে সেক্ষেত্রে আমি বলব, প্রথম ১০ ওভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপের এখন পর্যন্ত যতগুলো ম্যাচ দেখলাম তাতে দেখেছি প্রথম ১০ ওভারেই আসলে বোলাররা উইকেট থেকে যা সুবিধা নেওয়ার তা নিয়েছে। এরপর কিন্তু আর তেমন কোনো সুবিধা ছিল না। এ কারণেই বলব, প্রথম ১০ ওভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এবার আসি মুশফিক প্রসঙ্গে। মিথুন যেহেতু অনেক দিন ধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচে গ্লাভস পড়ে কিপিং করছে না, আর দলে লিটনের খেলার সম্ভাবনা কম তাই আমি বলব, মুশফিকই আমাদের প্রধান চয়েস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব আবেগ দেখতে পাচ্ছি, আমি মুশফিককে বলব এসব পাত্তা না দিতে। প্রফেশনাল লেভেল আসলে এসব আবেগ না দেখানোই ভালো। দীর্ঘসময় তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। অনেক বাজে সময় তারা ফেস করেছে। এইসব নিয়ে মাথাব্যাথা থাকা উচিত না। শেষ ম্যাচ কী হয়েছে, তা নিয়ে আর ভেবে লাভও নেই। এমন মিসটেক জীবনে সব খেলোয়াড়েরই থাকে। মুশফিকের আরও অনেক বেশি ম্যাচিউরড হওয়া উচিত এসব ব্যাপারে। মুশফিকের রেকর্ড ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বরাবরই ভালো। তামিমেরও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো রেকর্ড আছে। মুশফিক যেহেতু রানের মধ্যে আছে, তাই তার আর অন্য কিছু নিয়ে না ভাবাই উচিত।

সোফিয়া গার্ডেনসে বাংলাদেশ আগে হারেনি। এটা সাইকোলজিক্যালি হয়তো কিছুটা বুস্ট আপ করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জিততে হলে মাঠের খেলা দিয়েই জিততে হবে। আজকে তাই বলব, ম্যাচের প্রথম ১০ ওভার খুব ক্রুশিয়াল। যদি আগে ব্যাটিং করি, তবে রান কম হলেও উইকেট পড়তে দেওয়া যাবে না। আবার বোলিং যদি আগে করি, সেক্ষেত্রে প্রথমেই প্রতিপক্ষের উইকেট নিতে হবে।

লেখক: কোচ, গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ বাংলাদেশ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ স্পেশাল র‌্যাবিটহোল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর