নীরবতার শহর কার্ডিফ
১০ জুন ২০১৯ ১৫:৩৫
চারদিকে শুনশান নীরবতা। যেন কোথাও কেউ নেই। এক মাইল হেঁটে গেল হয়ত দু-একজনের দেখা মিলবে, কিন্তু কেউ কথা বলবে না। হাঁটতে হাঁটতে আপনার দিকে একটি লুক দিয়ে চুপচাপ দ্রুত পায়ে পাশ কেটে চলে যাবে। যত্রতত্র গাড়িও নেই। সিগন্যালে দাঁড়িয়ে গোটা কয়েকের দেখা মিললেও সংকেত সবুজ হলেই সাঁই করে দ্রুতগতিতে ছুঁটে যাবে।
রাস্তার দুই ধারেই সারি সারি পুরনো দালান মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। তবে সেখান থেকে কোন জনমানবের কণ্ঠ ভেসে আসে না। স্বচ্ছ কাঁচ ভেদ করে কেবল বারান্দা কিংবা ঘরের ভেতরে জ্বালিয়ে রাখা লাইট হঠাৎ দৃষ্টিসীমা ছুঁয়ে যায়। প্রথম দর্শনে তাই অনেকেই কার্ডিফকে ভূতুড়ে শহর ভেবে ধাক্কা খেতে পারেন।
বিষ্ময়ের শেষ এখানেই নয়। শহরের জাঁকজমকপূর্ণ এলাকা সিটি সেন্টারেও সেই একই নীরবতা। শপিং মল, পানশালা এবং খাবারের দোকানগুলোতে অগণিত মানুষের ভীড় অথচ উচ্চস্বরে বা বাড়তি কথার বালাই সেখানে নেই। শপিং ও খাওয়া দাওয়া শেষ তো- দে ছুট। আর পানশালায় গভীর রাতেও চলে নীরবে, নিভৃতে অবিরত ধোঁয়া ওঠানো উন্মাদনা।
কার্ডিফের নীরবতার পেছনে একটি সুস্পষ্ট কারণ আছে। ৫৪.২ বর্গমাইলের এই শহরে মাত্র ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮০০ মানুষের বাস। তাছাড়া এখানকার মানুষগুলোও ভীষণ স্বপ্লভাষী। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের সংবাদ সংগ্রহের সুবাদে দুই দফায় এখানে আটদিন বসবাসের সুযোগ হয়েছে। কিন্তু একটি দিনের জন্যও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে একটি কথাও হয়নি।
লন্ডনে সাধারণত অপরিচিতজনের সঙ্গে দেখা হলে হাই, হ্যালো বলে সম্ভাষণ দিয়ে থাকেন অনেকে। কেউ কেউ ভদ্রতা দেখিয়ে জানতেও চান, কেমন আছ? পক্ষান্তরে এখানকার বাসিন্দারা চুপচাপ তাকিয়ে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। মোদ্দা কথা হল, এখানকার মানুষগুলো অপ্রয়োজনে কথা বলা কিংবা উচ্চস্বরে কথা বলাটা নিগুঢ় মর্ম থেকে পরিহার করে থাকে।
কার্ডিফের আবহাওয়া ইংল্যান্ডের শহরগুলোর মতোই। গ্রীষ্মে যেখানে চলে অবিরত মেঘ রোদ্দুরের খেলা। আকাশে কোন রকম মেঘ জমলেই অঝোর ধারায় নেমে আসে বৃষ্টি। সাথে গা হিম করা বাতাস। আর শীতে রাশি রাশি বরফের স্তুপ। ঋতু বলতে এখানে এই দুটিই।
কার্ডিফে দর্শণীয় স্থানের সংখ্যাও খুব কম। সিটি সেন্টার সংলগ্ন কার্ডিফ ক্যাসল, ওয়েলস ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি লাগোয়া কার্ডিফ বে, মিলেনিয়াম স্টেডিয়াম ও কার্ডিফ ন্যাশনাল মিউজিয়াম। সাধারণত এই চারটি স্থানেই আগন্তুকদের ভীড় লক্ষ্য করা যায়।
গ্রেট বৃটেনের দেশ হলেও কার্ডিফের ভাষা ভিন্ন। ওয়েলস ভাষায় এরা এক অপরের সঙ্গে কথা আদান প্রদান করে থাকে। তবে অভিবাসীদের সঙ্গে অবলীলায় ইংরেজি বলে যান। আছে ল্যাটিন, নার্স ও নরম্যান ভাষাভাষিরাও।
নদী বিধৌত কার্ডিফের বুক চিড়ে বয়ে চলেছে টাফ নদী। তার কূলেই গড়ে তোলা হয়েছে গ্ল্যামারগন ক্রিকেট ক্লাব ক্রিকেটের মহোৎসবস্থল সোফিয়া গার্ডেনস। ৮ জুন এই ভেন্যুতেই ইংল্যান্ডের সঙ্গে ২২ গজের বিশ্বযুদ্ধে লড়েছিল মাশরাফিরা। কিন্তু ফলাফলটি হয়েছে নিদারুণ বেদনার। ১০৬ রানের বড় হারে চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেছে টিম বাংলাদেশ।
সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে টাইগাররা এখন ব্রিস্টলে। আমরাও তাই। রোববার (৯ জুন) দুপুরে ঝুম বৃষ্টি মাথায় দলের পরপরই আমরা এসে পৌঁছেছি। মঙ্গলবার (১১ জুন) ব্রিস্টলের কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে মাশরাফি ও তার দল।
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
আরও পড়ুন: আমার বিশ্বাস লিটন-মোসাদ্দেক ভাল করবে: ম্যাকেঞ্জি
সারাবাংলা/এমআরএফ/ওএম