বৃষ্টিতে ভেসেছে বিশ্বকাপের ১২ ম্যাচ
১১ জুন ২০১৯ ২১:৫৯
ইংল্যান্ড-ওয়েলসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বাদশ বিশ্বকাপের আসর। ১১ জুন ব্রিস্টলে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচের মাধ্যমে মাঠে গড়ানোর কথা ছিল বিশ্বকাপ আসরের ৪২২তম এবং দ্বাদশ বিশ্বকাপের ১৬তম ম্যাচের। কিন্তু বৃষ্টির কারণে মাঠে খেলা শুরু করা আর সম্ভব হয়নি।
বিশ্বকাপের ৪২২টি ম্যাচে ফলাফল হয়েছে ৪০৬টি, টাই হয়েছে ৪টি ম্যাচ। বৃষ্টির কারণে মাঠে কোনো বল গড়ানো ছাড়াই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে ৪টি ম্যাচ। খেলা শুরু হওয়ার পরে বৃষ্টির কারণে ফলাফল আসেনি ৮টি ম্যাচে। আসুন দেখে নেই সেই পরিসংখ্যান গুলো।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম আসর বসে ১৯৭৫ সালে সেই ইংল্যান্ডে। প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপ নামে পরিচিত সেই বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচ ছিল ৬০ ওভারের এবং প্রতিটি ম্যাচেই ছিল রিজার্ভ ডে। সেই বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচই বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়নি।
১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বিতীয় আসরও আয়োজন করে ইংল্যান্ড। সেই বিশ্বকাপও পরিচিত হয় প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপ নামেই। আগের বিশ্বকাপের মতো এই বিশ্বকাপেও প্রতিটি ম্যাচ ছিল ৬০ ওভারের এবং প্রতিটি ম্যাচেই ছিল রিজার্ভ ডে। এই বিশ্বকাপের পঞ্চম ম্যাচে মুখোমুখি হয় ১৯৭৫ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং সহযোগী দেশ হিসেবে খেলতে আসা শ্রীলঙ্কা। ১৯৭৯ সালের ১৩ জুন ওভালে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে রিজার্ভ ডেতেও টস করা যায়নি। ফলাফল হিসেবে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এটিই ছিল বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার প্রথম ঘটনা।
১৯৮৩ সালে প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় সেই ইংল্যান্ডেই এবং ১৯৮৭ সালে রিলায়েন্স বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় যৌথভাবে ভারত ও পাকিস্তানে। এই দুই বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচই বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়নি।
১৯৯২ বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়াতে। ১৯৯২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এই বিশ্বকাপের নবম ম্যাচে মুখোমুখি হয় ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাটিংয়ে নেমে ২ বল খেলার পরেই বৃষ্টি নামে মাঠে। বৃষ্টির কারণে দুই দলের জন্যে ম্যাচ নির্ধারণ করা হয় ২০ ওভার করে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে খেলা আর মাঠে গড়ায়নি।
১৯৯২ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১৩তম ম্যাচটিও কোনো ফলাফল হয়নি। ১ মার্চ অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত ম্যাচে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান। ম্যাচে টস জিতে ইংল্যান্ড বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তান ৪০.২ ওভারে ৭৪ রানে অল আউট হয়। ব্যাটিংয়ে নেমে ইংল্যান্ড ৮ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ২৪ রান সংগ্রহ করে। ম্যাচের এই সময়ে বৃষ্টি শুরু হলে আর একটি বলও মাঠে গড়াতে পারেনি। কোনো ফলাফল ছাড়াই সেই ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৬ ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় যৌথভাবে ভারত-পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাতে। এই বিশ্বকাপের ১৬তম ম্যাচে ২৬ ফেব্রুয়ারি পাটনার মঈন-উল-হক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় কেনিয়া বনাম জিম্বাবুয়ে। টস জিতে জিম্বাবুয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৫.৫ ওভারে ৩ উইকেটে ৪৫ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। এই সময়ে বৃষ্টি শুরু হলে ম্যাচ রিশিডিউল করা হয় পরের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি। পরের দিন সম্পূর্ণ নতুন করে ম্যাচটি শুরু হয়। সেই ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ৫ উইকেটে হারায় কেনিয়াকে।
১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডে। ১৯৯৯ সালের ৬ জুন হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত হয় নিউজিল্যান্ড বনাম জিম্বাবুয়ে ম্যাচ। টস জিতে জিম্বাবুয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ৪৯.৩ ওভারে ১৭৫ রানে অল আউট হয় জিম্বাবুয়ে। ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫ ওভারে ৩ উইকেটে ৭০ রান করে নিউজিল্যান্ড। এই সময়ে বৃষ্টি শুরু হয়। ম্যাচের জন্য রিজার্ভ ডে থাকলেও বৃষ্টির কারণে এই ম্যাচে আর একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় যৌথভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা-কেনিয়া এবং জিম্বাবুয়েতে। এই বিশ্বকাপের ১৬তম ম্যাচে বেনোনির মাঠে মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রান সংগ্রহ করে। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে ৮.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩২ রান সংগ্রহ করলে বৃষ্টি শুরু হয়। এর পরে আর খেলা মাঠে গড়ানো সম্ভব না হলে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ৪২তম ম্যাচে জিম্বাবুয়ে বনাম পাকিস্তান ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় জিম্বাবুয়ের বুলাওয়েতে। টস জিতে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৭৩ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। বৃষ্টি শুরু হয় এর পরেই। আর এক বলও মাঠে না গড়ালে সেই ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
২০০৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজে। এই বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়নি বৃষ্টির কারণে।
২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয় যৌথভাবে বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলঙ্কায়। এই বিশ্বকাপের ২০তম ম্যাচে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা বনাম অস্ট্রেলিয়া। টস জিতে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। শ্রীলঙ্কা ৩২.৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪৬ রান সংগ্রহ করার পরে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির কারণে খেলা আর মাঠে না গড়ালে খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে। ২১ ফেব্রুয়ারি এই বিশ্বকাপের ১১তম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া বনাম বাংলাদেশ ম্যাচটির ভেন্যু ছিল ব্রিসবেনে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এই ম্যাচের টস করা সম্ভব হয়নি এবং পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় ম্যাচটি।
২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইংল্যান্ড ও ওয়ালসে। দ্বাদশ এই বিশ্বকাপের ১১তম ম্যাচে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা। ব্রিস্টলে ৭ জুন অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বৃষ্টির কারণে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। সম্ভব হয়নি টস করাও। ফলাফল হিসেবে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
চলতি বিশ্বকাপের ১৫তম ম্যাচে ১০ জুন দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় সাউদাম্পটনের দ্য রোজ বোল স্টেডিয়ামে। টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ৭.৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২৯ রান সংগ্রহ করে। এই সময়ে মাঠে বৃষ্টি শুরু হলে খেলা আর মাঠে গড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলাফল হিসেবে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
এই বিশ্বকাপের ১৬তম ম্যাচে ১১ জুন ব্রিস্টলে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচটিও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সম্ভব হয়নি টস করা। চলতি বিশ্বকাপের ১৬ ম্যাচের তিনটিই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলো। তার দুটিই ব্রিস্টলের ভেন্যুতে। আর বিশ্বকাপের ইতিহাসে মোট ২২টি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে ভেস্তে গেল।
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
সারাবাংলা/এসবি/এমআরপি
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ পরিত্যক্ত বিশ্বকাপ বিশ্বকাপ স্পেশাল র্যাবিটহোল