ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান জেতেনি কখনোই
১৬ জুন ২০১৯ ১১:১২
ফাইনালের আগে এ যেন আরও এক ফাইনাল। উপমাহদেশ তো বটেই পুরো ক্রিকেট দুনিয়ার সব থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ। দুই দেশের মধ্যকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এই ম্যাচের উত্তেজনা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
ম্যাচে মাঠে খেলে ২২ জন তবে মাঠের বাইরে খেলে প্রায় ১৭০ কোটি মানুষ। ভারতের ১৫০ কোটি মানুষ যেমন চেয়ে থাকে ধোনি কিংবা কোহলির দিকে, ঠিক তেমনই পাকিস্তানের ২০ কোটি মানুষও চেয়ে থাকে হাফিজ-আমিরদের দিকে।
রোববার (১৬ জুন) ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে মুখোমুখি হবে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। এই ম্যাচের আগে বিশ্বকাপের মহারণের মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে আরও ছয় বিশ্বকাপে ছয়টি ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তান। তবে আশ্চর্যের বিষয়টি হলো এই ছয় ম্যাচের একটিতেও পাকিস্তানের বিপক্ষে হারেনি ভারত। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সাত বিশ্বকাপের ছয়টিতে একে অপরের মুখোমুখি হয় এই দুই দেশ। কেবল ২০০৭ সালে ক্যারিবীয়দের মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপে দেখা মেলেনি ক্রিকেটের এই ধ্রুপদী লড়াইয়ের।
ক্রিকেটের ধ্রুপদী লড়াইয়ে সবার আগেই থাকবে উপমহাদেশের দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত পাকিস্তানের লড়াই। নানান রাজনৈতিক কলহ, দুই দেশের চিরবৈরী। ময়দানে ক্রিকেটের লড়াইয়েও কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। উভয় দলের ম্যাচ মানে বারুদে ঠাঁসা উত্তেজনা অপেক্ষা করা ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য। যে ম্যাচ নিয়ে আলোচনা হয় চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মাঝেও!
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত এই দুই দল একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে ১৩১ বার। ভারতের ৫৪ জয়ের বিপরীতে যেখানে পাকিস্তান এগিয়ে। তাদের জয়ের সংখ্যাটা ৭৩ এ গিয়ে ঠেকেছে।
এই দুই দল এখন পর্যন্ত মোট ১৮টি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে। যার মধ্যে ভারত জিতেছে মাত্র ৫টি, সেখানে পাকিস্তান জিতেছে ১১টি। আর বাকি তিনটি সিরিজ ড্র। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ভারত থেকে সফল পাকিস্তান তালগোল পাকিয়ে ফেলে বিশ্বমঞ্চে এসে।
ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার আসর ওয়ানডে বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে জয়শূন্য পাকিস্তান। ছয়বার মুখোমুখি হয়ে প্রত্যেকবার পাকিস্তান ফিরেছে খালি হাতে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথমবার ভারত পাকিস্তান মুখোমুখি হয় পঞ্চম ক্রিকেট বিশ্বকাপে। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের ১৬তম ম্যাচে সিডনিতে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলতে নামে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।
টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন। শচীন টেন্ডুলকারের অপরাজিত ৫৪ আর অজয় জাদেজার ৪৬ রানে ভর করে নির্ধারিত ৪৯ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ভারত সংগ্রহ করে ২১৬ রান।
এ ম্যাচে পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল বোলার মুশতাক আহমেদ নেন তিনটি উইকেট। জবাব দিতে নেমে আমির সোহেলের ৬২ ও জাভেদ মিয়াঁদাদের ৪০ রান ছাড়া বাকীদের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় পাকিস্তান গুটিয়ে যায় মাত্র ১৭৩ রানে। ভারতের হয়ে কপিল দেব, মনোজ প্রভাকর, জাভাগাল শ্রীনাথ নেন দুটি করে উইকেট। ভারত ম্যাচ জিতে ৪৩ রানের ব্যবধানে।
ভারতের বিপক্ষে পরাজয়ের ক্ষতে পাকিস্তান প্রলেপ লাগায় প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে। অন্যদিকে ভারত ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ শেষ করে সপ্তম হয়ে!
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে আবার মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান। এবার মঞ্চটা আরেকটু বড়, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। ভারতের মাটিতে পাকিস্তান খেলতে এসেছে প্রায় সাত বছর পর। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং নেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন। নবজ্যোত সিং সিধু ও শচীন টেন্ডুলকারের ওপেনিং জুটিতে আসে ৯০ রান। শচীন ৩১ রানে ফিরলেও ব্যাট হাতে রানের চাকা সচল রাখেন সিধু। সিধুর ৯৩ আর শেষদিকে অজয় জাদেজার ২৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংসে ভর দিয়ে ৫০ ওভারে ভারত সংগ্রহ করে ২৮৭/৮ রান। পাকিস্তানের পক্ষে ওয়াকার ইউনুস ও মুশতাক আহমেদ নেন দুটি করে উইকেট।
২৮৭ রানের জবাব দিতে নেমে দুই ওপেনার আমির সোহেল ও সাঈদ আনোয়ার ভালো শুরু এনে দিলেও বাকীদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় পাকিস্তান থামে ২৪৮/৯ রানে। আমির সোহেল ৫৫, সাঈদ আনোয়ার ৪৮ রান করেন। ভারতের ভেঙ্কটেশ প্রসাদ, অনিল কুম্বলে উভয়ে নেন তিনটি করে উইকেট।
উল্লেখ্য চিন্নাস্বামীর এই ম্যাচে ঘটে সে বিখ্যাত ভেঙ্কটেশ-আমির লড়াই! ১৫তম ওভারে ভেঙ্কটেশ প্রসাদকে কাভারে চার মেরে আমির সোহেল ব্যাট দিয়ে প্রসাদের দিকে ব্যাট দিয়ে যেন বুঝিয়েছেন, ‘বলটা বাউন্ডারি থেকে নিয়ে আয়!’ পরের বলেই অবশ্য আমির সোহেলকে বোল্ড করে মোক্ষম জবাব দেন ভেঙ্কটেশ প্রসাদ।
৪৩ রানের জয়ে ভারত সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে আর আগের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া পাকিস্তানের বিদায় ঘণ্টা বাজে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে তৃতীয়বার ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয় ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের ৩৬তম ম্যাচে। ম্যাচটা ছিল পাকিস্তানি পেস বোলিং ইউনিট বনাম ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের লড়াই! পাকিস্তান দলে ছিল ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আকতার, আব্দুল রাজ্জাকদের মতো পেসার। সেঞ্চুরিয়ানে পাকিস্তানি অধিনায়ক ওয়াকার ইউনুস টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওপেনার সাঈদ আনোয়ারের ১২৬ বলে ৭ চারে সাজানো ১০১ রানের ইনিংসে ভর দিয়ে পাকিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে তোলে ২৭৩ রান।
জবাবে শুরু থেকে পাকিস্তানি পেসারদের ওপর চওড়া হওয়া শচীন টেন্ডুলকারের ৭৫ বলে ১২ চার, এক ছয়ে ৯৮ রানের ইনিংসে জয়ের পথ সুগম হয় ভারতের। শেষদিকে রাহুল দ্রাবিড়ের অপরাজিত ৪৪ ও যুবরাজ সিংয়ের অপরাজিত অর্ধশতকে ভারত ছয় উইকেট আর ২৬ বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে। পাকিস্তানের পক্ষে ৮.৪ ওভারে ৭১ রান দেওয়া খরুচে ওয়াকার ইউনুস নেন দুটি উইকেট।
২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তান গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয় আর ভারত ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রানার্সআপ হয়।
বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তান লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় মঞ্চটা ছিল ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে।
মোহালির সেমিফাইনালে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষা করেছিল সব ক্রিকেটপ্রেমী। অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনী ঘরের মাঠে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওপেনার বীরেন্দর শেওয়াগ ঝড়ো সূচনা এনে দেয় ভারতকে।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের লড়াইয়ে ৯৮ রান করা শচীন টেন্ডুলকার এবার করেন ৮৫ রান। শেষদিকে সুরেশ রায়নার অপরাজিত ৩৬ রানে ভারত নির্ধারিত ৫০ ওভারে থামে ২৬০/৯ রানে। ওহাব রিয়াজ করেন ক্যারিয়ার সেরা ওয়ানডে বোলিং, ৪৬ রান খরচায় নেন পাঁচ উইকেট।
জবাবে ৪৪ রানের ওপেনিং জুটির পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো পাকিস্তান গুটিয়ে যায় ২৩১ রান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৪ রান আসে মিসবাহ-উল-হকের ব্যাট থেকে, ওপেনার হাফিজ করেন ৪৩ রান। ভারতের পাঁচ বোলার জহির খান, আশিস নেহরা, মুনাফ প্যাটেল, হরভজন সিং এবং যুবরাজ সিং প্রত্যকে দুটো করে উইকেট শিকার করে। ২৯ রানের জয়ে মুম্বাইয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে ফাইনাল নিশ্চিত করে ভারত এবং শেষে সে ঐতিহাসিক ফাইনাল জিতে ২৮ বছর পরে নিশ্চিত করে নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে সর্বশেষ এবং ষষ্ঠবারের মতো ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হয় ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বিশ্বকাপে। একই গ্রুপে থাকায় ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের চতুর্থ ম্যাচটা হয় ভারত পাকিস্তানের।
বিশ্বকাপে আগের পাঁচ লড়াইয়ে সবকয়টি জেতা ভারত এবার টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিরাট কোহলির ৮ চারে ১২৬ বলে ১০৭ রানের ইনিংসের পাশাপাশি সুরেশ রায়নার ৭৪ এবং শিখর ধাওয়ানের ৭৩ রানের ভর দিয়ে ভারত সংগ্রহ করে ৩০০/৭ রান। পাকিস্তানের সোহাইল খান ৫৫ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হকের ৭৬, আহমেদ শেহজাদের ৪৭, হারিস সোহেলের ৩৬ ছাড়া বাকীরা ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দিলে পাকিস্তান গুটিয়ে যায় মাত্র ২২৪ রানে। ভারত ম্যাচ জিতে নেয় ৭৬ রানে।
২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারত সেমিফাইনাল খেলে এবং পাকিস্তানের বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয় কোয়ার্টার ফাইনালেই।
বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে সপ্তমবারের মতো মুখোমুখি হবে ভারত পাকিস্তান। আজ ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত হবে পাক-ভারত মহারণ। বিশ্বকাপের মঞ্চে কখনো ভারতকে না হারাতে পারা পাকিস্তান কী পারবে এবার পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙ্গতে? নাকি ভারত আবারো অপরাজিত থেকে যাবে পাকিস্তানের কাছে? দুটো প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে আজকের বহুল প্রতীক্ষিত ম্যাচে।
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
আরও পড়ুন: আমিরকে নিয়ে দুই ভারতীয় ক্রিকেটারের ভিন্ন মত
সারাবাংলা/এসএস