উইন্ডিজ বধে টার্গেট গেইল-হোপ, বড় অস্ত্র মিরাজ
১৭ জুন ২০১৯ ১৪:২০
শক্তির বিচারে সমান দুই দল বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই দলের কোনো একটিকে এগিয়ে রাখার সুযোগও বলতে গেলে নেই। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দল বেশ কয়েকবার মুখোমুখিও হয়েছে। তাতে পরস্পর পরস্পরের শক্তিমত্তা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। এই পরিস্থিতিতে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য যতটুকু হবে, তা মূলত পরস্পরকে ঘায়েল করার কৌশল মাঠে বাস্তবায়নের হারের ওপর। তবে বাংলাদেশকে মাথায় রাখতে হবে, টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে সমান শক্তির এই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জয়ের কোনো বিকল্প নেই তাদের সামনে।
ম্যাচটা যদি বাংলাদেশ শুরুটা ভালো করে, বিশেষ করে আমি বলব যদি ব্যাটিং করে, তবে প্রথমেই দরকার একটা ভালো শুরু। শুরুটা ভালো হলে আমি মনে করি আমাদের মিডল অর্ডারে অনেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আছে, যারা মিডল ওভারগুলোকে কাজে লাগিয়ে ইনিংস বড় করতে পারবে। অন্যান্য দলগুলোর তুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস এটাক খুব বেশি ভয়ংকর বলে আমার কাছে মনে হয় না। তারা প্রচুর বাজে বল দেয়। এই বাজে বলগুলো থেকে যদি আমরা সুবিধা নিতে পারি, তবে আমরা অনেক রান করতে পারব। সেইটাই হওয়া উচিত লক্ষ্য।
বোলিংয়ের তুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু সেখানেও গোছানো খেলা উপহার দেওয়ার মতো খেলোয়াড়ের সংখ্যা অনেক কম। তাদের ব্যাটিং ইনিংসের ধরন হতে পারে দুই রকম— হয় তারা খুব বিধ্বংসী ইনিংস খেলবে, অথবা খুব তাড়াতাড়ি অলআউট হয়ে যাবে। এর বাইরে কিছু ঘটনার সম্ভাবনা কম।
যেকোনো দলই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হলে তাদের সবার একটি কমন টার্গেট থাকে, সেটা হলো— ক্রিস গেইল। ক্রিস গেইলকে তাড়াতাড়ি আউট করে সাজঘরে ফেরত পাঠাতে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং পাওয়ারের অনেকটাই খর্ব করে দেওয়া যায়। একই লক্ষ্য থাকতে হবে বাংলাদেশেরও। আর গেইলের পরই টার্গেট করতে হবে শাই হোপকে। একপাশ ধরে রেখে লম্বা ইনিংস খেলার সক্ষমতা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান দলের এই একটি ব্যাটসম্যানের মধ্যেই আছে। তারওপর খুব ভালো ফর্মেও আছেন। তাই তার উইকেটটাও জরুরি। উইন্ডিজদের ব্যাটিং ইনিংসের শুরুর ১০ ওভারে এই দু’জনকে সাজঘরে ফেরত পাঠানো সম্ভব হলে খেলাটা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
বাংলাদেশের বোলিং অন্যান্য বিভাগের তুলনায় একটু দুর্বল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আমার ধারণা রুবেলকে খেলানো হবে। রুবেল যদি খেলে, আমাদের পেস বোলিংয়ে ভেরিয়েশন খানিকটা বাড়বে। বিশেষ করে দলে তখন আমরা দু’জন বোলার পাব, যারা দ্রুত গতিতে বোলিং করতে পারে। সেটা খুব কাজে লাগবে। কারণ মিডল ওভারে উইকেট থেকে যদি কোনো সাহায্য পাওয়া না যায়, তবে বলের পেস মাঝে মাঝে খুব সহায়ক হয়। সেই সময়ে পেস বোলারদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং প্রসঙ্গে যেটি বললাম, সেটিই বাংলাদেশের বোলিংয়ের জন্য বার্তা হওয়া উচিত। প্রথম দিকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট নেওয়াটা খুবই জরুরি। বাঁ হাতি ক্রিস গেইল থাকায় মিরাজকে দিয়ে বোলিং ওপেন করানো হতে পারে। মাঠ ছোট থাকায় কেউ কেউ মিরাজকে নিয়ে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। তবে সেই বিবেচনা আমলে না নেওয়াটাই ভালো হবে। কারণ বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে ডান হাতি মিরাজের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তাছাড়া শুধু গেইল নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপে বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান বেশ কয়েকজন। ফলে তাদের রান আটকে রাখার পাশাপাশি উইকেট নিতেও মিরাজই হয়তো সবচেয়ে কার্যকর হবে। তাছাড়াও মিরাজ এখন পর্যন্ত পুরো টুর্নামেন্টে খুবই ভালো বোলিং করেছে।
আরেকটি বিষয়, চার পেসার নিয়ে খেলার মতো বিলাসিতার সময় আমাদের এখন আর নেই। বর্তমানে দলের যে পরিস্থিতি, তাতে চার পেসার নিয়ে খেলতে গেলে ব্যাটিং লাইনআপ অনেক দুর্বল হয়ে যাবে। এ কারণেও মিরাজের দলের থাকা জরুরি। পাশাপাশি মিরাজের সঙ্গী হিসেবে মোসাদ্দেক এবং ফিট থাকলে মাহমুদুল্লাহ’র হাতেও বল তুলে দিতে পারেন মাশরাফি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা খেলতে না পারায় বাংলাদেশ দলের একটা বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে। ১১ তারিখের সেই ম্যাচ না হওয়ার কারণে বাংলাদেশের খেলার মধ্যে একটা বিশাল গ্যাপও পড়ে গেছে। ৮ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষের খেলছে ১৭ জুন। এই বিশাল গ্যাপটা মাঝে মাঝে অনেক টিমেরই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। খেলার রিদমটা অনেক সময় হারিয়ে যায়, যেটা ফিরে পেতে কষ্ট হয়। সেই রিদমটাই বাংলাদেশকে ফিরে পেতে হবে এই ম্যাচে।
বাংলাদেশ যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতে যায়, তাহলে পরবর্তী ম্যাচগুলো ভালো খেলবে। কারণ তখন নতুন মোমেন্টাম তৈরি হবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের জেতার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। সেই ম্যাচ না খেলার কারণে একটা পয়েন্টও যেমন হারিয়েছি, ঠিক দলের যারা এখনো ফর্মে আসেনি, তাদেরও পারফর্ম করার সুযোগ নষ্ট হয়েছে। তারপরও আশা করি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভালো খেলে পরবর্তী ম্যাচগুলোর মোমেন্টাম সেট করে নিতে পারবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে যারা রানে নেই, তারা রানে ফিরতে পারলে সেটা পরের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের জন্য হবে বড় সুখবর।
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
আরও পড়ুন: যেখানে কপালে ভাঁজ টাইগারদের!
সারাবাংলা/এসবি/টিআর/এসএস
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ বাংলাদেশ-উইন্ডিজ বিশ্বকাপ স্পেশাল মোহাম্মদ সালাউদ্দিন