Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশের হতাশার দিনে এগিয়ে শ্রীলঙ্কাই


২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:৪৭

মোসতাকিম হোসেন, চট্টগ্রাম থেকে

 

দ্বিতীয় দিন শেষে মুমিনুল হকের কথাটা কি এখন বিভ্রমই মনে হবে?

মুমিনুল বলে গিয়েছিলেন, তৃতীয় দিনে স্পিনাররা আরেকটু বেশি সাহায্য পেতে পারেন। দিনের শুরুতে তাও একটু মিলেছিল, বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উইকেট চট্টগ্রামের উইকেট যেন ব্যাটসম্যানদের দিকে আরও বেশি বন্ধুতার হাত বাড়িয়ে দিল। শ্রীলঙ্কা ব্যাটসম্যানরা সেটার এতোটাই সদ্ব্যবহার করলেন, তৃতীয় দিন শেষে এখন বরং বাংলাদেশই ব্যাক ফুটে। সাত উইকেট হাতে রেখে মাত্র ৯ রানে পিছিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। ৩ উইকেট হারিয়ে তুলে ফেলেছে ৫০৪ রান, শ্রীলঙ্কাই এখন উলটো বাংলাদেশকে রানে চাপা দিতে যাচ্ছে!

সম্পূরক প্রশ্ন হতে পারে, চট্টগ্রাম টেস্টের পরিণতি আসলে কী?

কাগজে কলমে দুই দলের জয়ের সম্ভাবনা হয়তো এখনো বেঁচে আছে, তবে উইকেট এমন আচরণ করলে ড্র ছাড়া অন্য কিছুর সম্ভাবনা ক্ষীণই। তবে শেষ দুই দিনে রোমাঞ্চ থাকলে তা আলাদা কথা।

তৃতীয় দিনে সেটির ছিটেফোঁটাও মিলল না। অন্তত বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে তো নয়ই। সারাদিন মুস্তাফিজদের খাটিয়ে মেরেছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। শুরুতে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কুশল মেন্ডিস ছিলেন, বিদায়ের আগে তাঁরা ব্যাটন দিয়ে গেছেন রোশেন সিলভা ও দীনেশ চান্ডিমালকে।

এমন দীর্ঘ দিন বাংলাদেশের বোলারদের আগে দেখতে হয়নি তা নয়। সারা দিনে কোনো উইকেট পায়নি, টেস্টে এমন দিনও গেছে বাংলাদেশের। আজ প্রথম সেশনে সেই সম্ভাবনা যে উঁকি দিয়ে যায়নি, তাও নয়। আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, আজও সেখান থেকে শুরু করেছিলেন ধনঞ্জয়া-মেন্ডিস।

তবে এর মধ্যে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের কাছ থেকে দাক্ষিণ্যও পেয়েছেন মেন্ডিস। আগের দিন দুই বার জীবন পেয়েছিলেন ৪ ও ৫৭ রানে। আজ দিনের তৃতীয় ওভারেই আউট হতে পারতেন ৮৩ রানে। কিন্তু মুস্তাফিজের বলে খোঁচা দিয়েও বল চলে গেছে দুই স্লিপের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

মেন্ডিস সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন ভালোমতোই। দিনের শুরুতে একটু নড়বড়ে ছিলেন, পরে খোলস ছেড়ে বেরিয়েছিলেন ধীরে ধীরে। তবে শুরুতে বেশি সপ্রতিভ ছিলেন ধনঞ্জয়াই। সেঞ্চুরি পেয়ে গিয়েছিলেন কালই, আজ শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে কম ইনিংসে টেস্টে ১০০০ রানও হয়ে গেছে। মেন্ডিস সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন এর মধ্যেই, দুজনের জুটিতে ৩০০ রানও চলে এসেছে। শুন্য রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর টেস্ট ইতিহাসেই এত রান করতে পারেনি কোনো জুটি। প্রথম সেশনটা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে হতাশ করে ব্যাট করে গেছেন দুজন।

ধনঞ্জয়া যখন ১৭০ এর ঘরে পোঁছে গেছেন, লাঞ্চের পর নতুন বলেই বাজিমাত করলেন মুস্তাফিজ। খানিকটা খাটো লেংথের বলটা পুল করতে গিয়েছিলেন ধনঞ্জয়া, টাইমিংয়ের গড়বড়ে সেটি উঠে যায় আকাশে। দৌড়ে এসে ক্যাচটা ধরতে ভুল করেননি লিটন। ৩০৮ রানে শ্রীলঙ্কা হারায় দ্বিতীয় উইকেট। রোশেন আউট হয়ে যেতে পারতেন এক রানে, কিন্তু স্টাম্পিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি লিটন। এমন উইকেটে যখন সুযোগই আসে না, সেটির জন্য লিটনকে বাকি সময়টা মাশুলই দিয়ে যেতে হয়েছে।

মেন্ডিস অবশ্য এরপর হঠাৎই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। প্রথম ১০০ করেছিলেন ২০০ বলে, ২৮৬ বলে হলো ১৫০। এরপরেই যেন টি-টোয়েন্টির মতো রান তোলা শুরু করলেন, পরের ৪৬ রান এলো মাত্র ৪১ বলে। ১৯৬ রান করে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি যখন উঁকি দিচ্ছে, তখনই যেন আত্মঘাতী হলেন। তাইজুলের বলটা ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে নির্বিষ ডেলিভারি, কিন্তু মেন্ডিস সেটা এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন। মিড অন থেকে অনেকটা দৌড়েই তা হাতে জমালেন মুশফিক, দারুণ ক্যাচের জন্যই তাঁকে ঘিরে সতীর্থদের উদযাপনটা হলো আরও প্রলম্বিত।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ওই পর্যন্তই। এরপর সাফল্য আবার মরীচীকা হয়ে থেকেছে বাংলাদেশের কাছে, দিনের শেষ সেশনে আর কোনো উইকেটই পায়নি। এবার রোশেন সিলভার সঙ্গে অধিনায়ক চান্ডিমাল যোগ করে ফেলেছেন ৮৯ রান। ৮৭ রান করে সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছেন রোশেন, চান্ডিমাল অপরাজিত ৩৭ রানে। তার চেয়েও বড় কথা, বাংলাদেশকে অশনী সংকেত দিচ্ছে কাল আরও একটি লম্বা দিন।

 

সারাবাংলা/ এএম/এসএন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর