Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেষ দিনে বাংলাদেশের সামনে দুস্তর পারাবার


৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৭:২৩

মোসতাকিম হোসেন, চট্টগ্রাম থেকে

তাহলে কি বাংলাদেশ নিজেদের পাতা ফাঁদেই পড়ল? চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে সেই অশনী সংকেতই তো দেখা যাচ্ছে। যে উইকেটটা মনে হচ্ছিল স্পিন-মৃগয়া, সেই উইকেটে চতুর্থ দিনের শেষে এসে ‘কিছু’ টার্নের দেখা পাওয়া গেল। আর সেটার শিকার হলো বাংলাদেশই। বা বলা ভালো, বাংলাদেশ নিজে থেকেই শিকারে পরিণত হলো।

৮১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ এখন কাঁপছে। ইনিংস পরাজয় এড়াতেও এখন করতে হবে আরও ১১৯ রান, হাতে আছে ৭ উইকেট। বাংলাদেশকে হার বাঁচাতে এখন শেষ দিনে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়াতে হবে ব্যাটসম্যানদের ব্যাট হাতে!

নিজেদেরকেই বাংলাদেশ আসলে দুষতে পারে। উইকেটে টার্ন মিলছিল বটে, কিন্তু তা তো এমন কিছু জুজু হয়ে যায়নি। অথচ বাংলাদেশ শুরু থেকেই যেন স্নায়ুচাপে আক্রান্ত। প্রথম থেকেই ইমরুল কায়েস করতে গেলেন রিভার্স সুইপ, একদমই স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। কিন্তু পেরেরাকে সুইপ করতে গিয়ে যেভাবে ক্যাচ তুলে দিলেন, তাতে তার কাছ থেকে আলাদা জবাবদিহিতা চাইতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। অথচ দুই ওপেনারের তখন হয়ে গিয়েছিল ৫২ রান। কিন্তু ইমরুল আরও একবার ব্যর্থ দলে নিজের দাবিটা জোর গলায় জানাতে, ৪৮ বলে ১৭ রান করে ফিরে গেছেন।

তামিম ইকবাল অবশ্য অন্য প্রান্তে স্বচ্ছন্দই ছিলেন। স্পিন খেলছিলেন দারুণ, রান আউট ও এলবিডব্লু থেকে অবশ্য অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। কিন্তু যেভাবে আউট হলেন, তাতে তার হতাশাটা প্রথম ইনিংসের চেয়েও বেশি বেড়ে যাওয়ার কথা। সান্দাকানের বলটা বেশ টার্ন নিয়েছিল বটে, কিন্তু অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়েই বের হয়ে যাচ্ছিল। তামিম ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে দিলেন খোঁচা, সহজ ক্যাচ দিলেন স্লিপে। ৪১ রানে আউট হয়ে গেলেন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু কে জানত, কফিনের গায়ে দিনের শেষ পেরেকটা এমন অন্তিম মুহূর্তে আসবে? মুশফিক ও মুমিনুল যখন দিনের বাকি অংশটা দাঁতে দাঁত কামড়ে পার করে দেবেন বলে মনে হচ্ছিল, তখনই সর্বনাশ। হেরাথের বলটা সামনে গিয়ে ডিফেন্স করেছিলেন মুশফিক, সামনের দিকে এগিয়ে দারুণ এক ক্যাচ ধরলেন মেন্ডিস। কিন্তু আম্পায়ার সফট সিগন্যাল দিলেন নট আউট, শুরুতে মনে হচ্ছিল বল মাটিতেই লেগেছে। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেল, বল বুটে লেগেই ক্যাচ উঠেছে। শেষ বিকেলে মুশফিক মাঠ ছাড়লেন মাথা নাড়তে নাড়তে। বাংলাদেশের জন্যও কি কাজটা অসম্ভবের কাছাকাছি করে দিয়ে গেলেন না?

তার আগে যা হয়েছে, তাতেও মনে হচ্ছিল না এই উইকেটে ব্যাট করা খুব একটা কঠিন কিছু। সকালে আগের দিনের চেয়ে কিছু টার্ন আর বাউন্স বেশি মিলেছে বটে, কিন্তু বাংলাদেশি বোলাররা এক প্রান্ত থেকে কেউই টানা চাপ দিয়ে যেতে পারেননি। সকালে প্রথম উইকেটটা অবশ্য শ্রীলঙ্কা উপহারই দিয়ে এসেছে। আগের দিন সুবাস পাচ্ছিলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির, আজ তা পেয়ে গেছেন রোশেন সিলভা। এর পরেই ১০৯ রান করে ক্যাচ দিয়েছেন লিটনকে।

তবে নিরোশান ডিকভেলা নামার পরেই যেন বেড়ে যায় রানের গতি। চান্ডিমালকে নিয়ে পরের ১৩ ওভারেই তুলেছেন ৬৩ রান। চান্ডিমালও যখন সেঞ্চুরিটা পাবেন বলেই মনে হচ্ছিল, তাইজুলের বলে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে হয়ে গেলেন বোল্ড। ৮৭ রানেই আউট হয়ে গেলেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক, তখন ৫ উইকেট হারিয়ে ঠিক ১০০ রানের লিড নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

এরপর অপেক্ষা ছিল শ্রীলঙ্কা কত রানে ইনিংস ঘোষণা করবে। এর মধ্যেই অবশ্য মিরাজ-তাইজুল মোটামুটি নিয়মিত বিরতিতেই আঘাত হেনেছেন। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ৬২ রানে ক্যাচ দিয়েছেন ডিকভেলা। পেরেরাকে এলবিডব্লু করে টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম উইকেট পেয়েছেন সানজামুল। লাকমল তাইজুলকে মারতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড। খানিক পরেই হেরাথের এলবিডব্লুর সাথে সাথে শেষ হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার ইনিংস। ততক্ষণে প্রায় ২০০ ওভার খেলে শ্রীলঙ্কার লিড হয়ে গেছে ঠিক ২০০ রানের। এই ম্যাচে বাংলাদেশের হার আর ড্র, এই দুই সম্ভাবনাও তাতে নিশ্চিত হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু শেষ বিকেলে যা হলো, তাতে দ্বিতীয় সম্ভাবনাটা কি আদৌ সত্যি হবে?

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫১৩/১০ (১২৯.৫ ওভার)
শ্রীলঙ্কা: ৭১৩/৯ (১৯৯.৩ ওভার)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৮১/৩ (২৬.৫ ওভার)

সারাবাংলা/এএম/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর