প্রোটিয়াদের জয়ে গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় স্থানে অস্ট্রেলিয়া
৭ জুলাই ২০১৯ ০৩:৫২
চলতি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা। সবার আগে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় প্রোটিয়ারা। নিয়ম রক্ষার ম্যাচ হলেও এই ম্যাচে বর্তমান বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ১০ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
অস্ট্রেলিয়ার এই পরাজয়ে নিশ্চিত হয়ে গেলো বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল লাইনআপ। এই পরাজয়ে গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় স্থানে থেকে শেষ করতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াকে। তারা সেমি ফাইনালে খেলবে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে গ্রুপ পর্বে শীর্ষস্থানে থাকা ভারত সেমি ফাইনাল খেলবে চতুর্থ স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
শনিবার (৬ জুলাই) ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলে ৩২৫ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সেঞ্চুরি করেন দলটির অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস, অর্ধশতক করেন ভ্যান ডার ডুসেন-কুইন্টন ডি কক। মাত্র ৫ রানের জন্য ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন ভ্যান ডার ডুসেন।
ওপেনিংয়ে নেমে এইডেন মার্কারাম ৩৪ রান করে বিদায় নেন। আরেক ওপেনার কুইন্টন ডি কক করেন ৫১ বলে সাতটি চারে ৫২ রান। তিন নম্বরে নেমে ৯৪ বলে সাতটি চার আর দুটি ছক্কায় ডু প্লেসিস করেন ১০০ রান। প্রোটিয়া অধিনায়ক ডু প্লেসিসের একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটা ১২তম সেঞ্চুরি।
ইনিংসের শেষ ওভারের শেষ বলে বিদায় নেওয়ার আগে ভ্যান ডার ডুসেন করেন ৯৫ রান। তার ৯৭ বলের ইনিংসে ছিল চারটি করে চার আর ছয়ের মার। জেপি ডুমিনি ১৪, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ২, আন্দেইল ফেলুকাওয়ো ৪ রান করেন।
অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক দুটি, নাথান লিয়ন দুটি, বেহেরনড্রফ একটি আর প্যাট কামিন্স একটি করে উইকেট পান।
৩২৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ভুল বোঝাবুঝির পরেও রান আউট হওয়া থেকে বেঁচে যায় অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং ব্যাটসম্যানরা। ইমরান তাহিরের করা সেই ওভারের তৃতীয় বলে ওয়ার্নার স্কয়ার লেগ অঞ্চলে বল পাঠালে সেখান থেকে ভুল এন্ডে বল থ্রো করে রাবাদা।
যদিও এই সুযোগ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের ৩য় ওভার এবং ইমরান তাহিরের ব্যক্তিগত ২য় ওভারের প্রথম বলেই ব্যক্তিগত ৩ রান করে সাজঘরে ফিরে যান অজি দলপত অ্যারন ফিঞ্চ। শর্ট কভার অঞ্চলে ফিঞ্চের ক্যাচ ধরেন মার্করাম। অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ তখন ১ উইকেট ৫ রান।
ইনিংসের ৫ম ওভার এবং ইমরান তাহিরের ব্যক্তিগত ৩য় ওভারের চতুর্থ বল শেষে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান উসমান খাজা সাজঘরে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে গেলে ক্রিজে আসেন স্মিথ। পরের ওভারেই আরেকটি রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাবাদা। ডিপ স্কয়ার লেগ অঞ্চল থেকে ইমরান তাহিরের বল ঠিকমতো হাতে না নিতে পারায় রান আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান স্টিভ স্মিথ। যদিও তিনিও বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি ওয়ার্নারকে। ইনিংসের সপ্তম ওভারের ৩য় বলে ডোয়েন প্রিটোরিয়াসের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরে যান স্মিথ। আউট হওয়ার আগে স্মিথের সংগ্রহ ছিল ৭ রান।
মাঠে এসে স্টয়নিস জুটি বাঁধেন ওয়ার্নারের সঙ্গে। দুইজনে মিলে গড়ে তুলেন ৬২ রানের জুটি। আর এরপরেই ইনিংসের ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ২২ রান সংগ্রহ করে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান স্টয়নিস।
এরপরে উইকেটে এসে ম্যাক্সওয়েলও বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি ওয়ার্নারকে। ব্যক্তিগত ১২ রান সংগ্রহ করে ইনিংসের ২৫ তম ও রাবাদার করা ৭তম ওভারের প্রথম বলেই উইকেটে পেছনে ডি ককের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান ম্যাক্সওয়েল।
একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করে যাওয়া ওয়ার্নারের সঙ্গে জুটি বাঁধেন কেরি। ইনিংসের ৩৪তম এবং ক্রিস মরিসের পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের ১৭তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ওয়ার্নার।
এই দুইজনের ব্যাটে যখন জয়ের স্বপ্ন দেখছিল অস্ট্রেলিয়া ঠিক তখনই ১০৮ রানের জুটি ভাঙেন ডোয়েন প্রিটোরিয়াস। ইনিংসের ৪০তম এবং প্রিটোরিয়াসের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই ওয়ার্নারের হাকানো শটে লং অনে চমৎকার ক্যাচ তালুবন্দি করেন ক্রিস মরিস। আউট হওয়ার আগে ওয়ার্নারের সংগ্রহ ছিল ১২২ রান।
এরপরের লড়াইটা শুধুই ক্যারির। দলের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান প্যাট কামিন্সকে নিয়ে গড়ে তুলেন ৪৫ রানের জুটি। ইনিংসের ৪৫ ও আন্দেইল ফেলুকাওয়োর করা দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে লং অফে ডুমিনির হাতে তালুবন্দি হয়ে ব্যক্তিগত ৯ রান সংগ্রহ করে সাজঘরে ফিরে যান কামিন্স।
ঠিক তার পরের ওভারেই ক্রিস মরিসের ২য় বলে ৮৫ রান সংগ্রহ করে আউট হয়ে যান কেরি। ৬৯ বলে ৮৫ রান সংগ্রহ করা কেরি আউট হওয়ার পরেই মাঠে আসেন ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়া ওসমান খাজা। স্টার্কের সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেন ২৬ রানের জুটি।
ইনিংসের ৪৯ এবং রাবাদার ১০ম ওভারের প্রথম বলে বোল্ড আউট হয়ে ব্যক্তিগত ১৮ রান করে সাজঘরে ফিরে যান খাজা। একই ওভারের পঞ্চম বলে মিশেল স্টার্ককে বোল্ড আউট করে সাজঘরে ফেরত পাঠান রাবাদা। স্টার্কের সংগ্রহ ছিল ১৬ রান।
ইনিংসের শেষ ওভার ও আন্দেইল ফেলুকাওয়োর ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে নাথান লায়ন ডিপ মিড উইকেটে মারক্রামের হাতে তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরত গেলে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে পায় ১০ রানের জয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে রাবাদা ১০ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। আন্দেইল ফেলুকাওয়ো ২.৫ ওভারে ২২ রানের বিনিময়ে নেন ২ উইকেট। প্রিটোরিয়াস ৬ ওভার বল করে ২৭ রানের বিনিময়ে নেন ২ উইকেট। ইমরান তাহির ৯ ওভার বোলিং করে ৫৯ রানের বিনিময়ে নেন ১ উইকেট। ক্রিস মরিস ৯ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। শামসি ৯ ওভারে ৬২ এবং ডুমিনি ৪ ওভারে ২২ রান দিলেও কোনো উইকেট পাননি।
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com–এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
সারাবাংলা/এসবি/ওএম
অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ প্রোটিয়াদের জয়