লাল কার্ড বিতর্কের ম্যাচে চিলিকে হারিয়ে কোপায় তৃতীয় আর্জেন্টিনা
৭ জুলাই ২০১৯ ০৫:১৭
কোপা আমেরিকার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল চিলি বনাম আর্জেন্টিনা। কোপা আমেরিকার গত আসরের ফাইনালে চিলির কাছেই টাইব্রেকারে হেরে শিরোপা স্বপ্ন ভেঙ্গেছিল আর্জেন্টিনার। আর তাই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ হলেও এই ম্যাচ নিয়ে কিছুটা আলোচনা তো ছিলই। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটিতে চিলিকে ২-১ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্টে ১৪ বারের শিরোপা জয়ী আর্জেন্টিনাকে এবার কোপা আমেরিকায় তৃতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। কিন্তু ম্যাচ শেষে এই জয়কে ছাড়িয়ে আলোচনা হচ্ছে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসির লাল কার্ড পাওয়া।
শনিবার (৬ জুলাই) ব্রাজিলের সাও পাওলোর করিন্থিয়াস এরেনায় অনুষ্ঠিত ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে লা আলবিসেলেস্তেরা। আর তাই এগিয়ে যেতেও খুব বেশি সময় নেয়নি তারা। ম্যাচের ১২ মিনিট সময়ে মেসির পাসে আগুয়েরো গোলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। দারুণ এক ড্রিবলে মিডফিল্ডে ফাউলের শিকার হয়ে ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। রেফারির বাঁশি বাজানোর মুহুর্তে চিলির খেলোয়াড়দের অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে বল বাড়িয়ে দেন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা আগুয়েরোর উদ্দেশ্যে। আগুয়েরোও যেন এই বলের অপেক্ষাতেই ছিলেন। আর তাই বল পায়ে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে চিলি গোলরক্ষক আরিয়াসকে বোকা বানিয়ে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়ান।
বল দখলের লড়াইয়ে আর্জেন্টিনার চাইতে এগিয়ে থাকা চিলি ম্যাচে ফিরে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু এদিন তেমন প্রভাব বিস্তার করে খেলতে পারেননি চিলির কোনো খেলোয়াড়ই। দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় অ্যালেক্সিজ সানচেজকেও মাঠ ছাড়তে হয় ইনজুরি নিয়ে।
এই ম্যাচে শুরু থেকেই মাঠে নামেন জুভেন্টাসের আক্রমণভাগের তারকা খেলোয়াড় দিবালা। মেসির সঙ্গে পঞ্চম বারের মতো জাতীয় দলের জার্সি পড়ে নামা এই খেলোয়াড়ের গোলেই আর্জেন্টিনা ম্যাচে পেয়ে যায় দ্বিতীয় গোলটি।
২২ মিনিট সময়ে পাল্টা আক্রমণে উঠে আসা আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার লো সেলসো দারুণ এক পাস দেন ডি-বক্সের বাইরে থাকা দিবালাকে। সামনে থাকা চিলির দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে দিবালা ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন। বল কেড়ে নিতে এগিয়ে আসা চিলি গোলরক্ষক আরিয়াসের পাশ দিয়ে চিপ করে দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলের লিড এনে দেন দিবালা।
ম্যাচের ৩১তম মিনিটের সময় গোল বাড়ানোর একটি সুযোগ মিস করে দিবালা। মেসির বাড়িয়ে দেওয়া বলে ডি-বক্সে দিবালা পেলেও লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে বল আর জালে জড়াতে পারেননি তিনি।
অবশ্য এর আগেই একবার আলোচনায় চলে আসে রেফারি। ভিদালকে হলুদ কার্ড দেখান সেই সময় রেফারি। কিন্তু ম্যাচের ৩৭তম মিনিটে দুইদলের খেলোয়াড়দের মাঝেই দেখা যায় উত্তেজনা রেফারির এক সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে।
এই সময় মেসির দিকে পাস বাড়িয়েছিলেন দিবালা। বল দখলের লড়াইয়ে থাকা চিলি ডিফেন্ডার গ্যারি মেডেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে মেসির। বল বাইলাইন অতিক্রম করে মাঠের বাইরে চলে গেলেও মেডেল আক্রমণাত্মক ভাবেই এগিয়ে আসেন মেসির দিকে, ধাক্কাও দেন। মেসি প্রথম চেষ্টায় মুখ সরিয়ে নিজের গা বাঁচান। এরপরেও মেডেল মেসিকে লক্ষ্য করে ধাক্কা দিলে দুইদলের খেলোয়াড়েরাই ছুটে আসে তাদের আলাদা করতে। রেফারি এগিয়ে এসে দুইজনকেই সরাসরি লাল কার্ড দেখান। খেলোয়াড়েরা ‘ভিএআর’ প্রযুক্তির সাহায্য নিতে রেফারিকে অনুরোধ করলে সেটাও নেওয়া হয় কিন্তু তাতে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসেনি কোনো। আর তাই ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যাচের ৬৫ মিনিট সময়ে লাল কার্ড দেখা মেসিকে ক্যারিয়ারের ২য় লাল কার্ড নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৪ মিনিট সময়ে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে আগুয়েরো গোলবারের সামনে ক্রস করে দিবালার উদ্দেশ্যে। কিন্তু বল দিবালার পায়ে পৌঁছানোর আগেই দারুণ এক ক্লিয়ারেন্স করে চিলিকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন পুলগার।
ম্যাচের ৫৯ মিনিটে পেনাল্টি পায় চিলি। আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার লো সেলসো চিলির আরানগিসকে ফাউল করলে ‘ভিএআর’ প্রযুক্তির সাহায্যে পেনাল্টি পায় চিলি। পেনাল্টি থেকে গোল করে আর্থুরো ভিদাল ম্যাচের স্কোরলাইন করেন ২-১।
ম্যাচের ৭৭ মিনিটের সময়ে পিএসজি তারকা ডি মারিয়ার বাড়ানো বলে ডি-বক্সে থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন আগুয়েরো। ৮০ মিনিটের সময় আগুয়েরোর নেওয়া শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে কোপা আমেরিকার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি শেষ হয় ২-১ ব্যবধানে।
দুই দলের খেলায় মোট ফাউল হয়েছে ৩৯টি। আর্জেন্টিনার ৪ জন এবং চিলির ৩ জন খেলোয়াড়কে এই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখানো হয়।
সারাবাংলা/এসবি/ওএম